বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ মানে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন। বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ। প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার জন্য বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী ইউরোপ, আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পারি জমায়। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের হার বিগত বছর গুলোতে কিছুটা কম থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৯ হাজার ১৫১ জন শিক্ষার্থী বিদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। যা আগের বছর ছিল ৪৪ হাজার ৩৩৮ জন। 

একটা সময় ধারণা করা হতো, শুধু মাত্র বিত্তবান ঘরের ছেলেমেয়েরাই বুঝি উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে। বর্তমানে এ চিন্তা ধারণার বেশ পরিবর্তন হয়েছে। কেননা এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে টিউশন ফি ছাড়াই আপনি  পড়াশোনা করতে পারবেন।  এক্ষেত্রে নরওয়ে হতে পারে আপনার পছন্দের গন্তব্য।

আপনি যদি উচ্চশিক্ষার জন্য নরওয়ে যেতে চান তাহলে পুরো লেখাটি আপনার জন্য। 

দেশ পরিচিতি 

নরওয়ে, উত্তর ইউরোপের নয়নাভিরাম  এ দেশটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত। একেতো বলা হয় নিশিত সূর্যের দেশ তার উপর শান্তিপ্রিয় দেশ হিসাবে নরওয়ে বিশ্বসেরা। ৫৪ লক্ষ জনসংখ্যার এ দেশটির রাজধানী অসলো, জাতীয় ভাষা নরওয়েজিয়  ও মুদ্রা নরওয়েজিয়ান ক্রোনা। তাছাড়া, বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণে যেমনঃ মাথাপিছু আয়ে,শান্তি, মানব উন্নয়ন, গড় আয়ু, জীবনযাত্রার মান, শূন্য  অপরাধ প্রবণতা , দুর্নীতিমুক্ত ইত্যাদি  সূচকে নরওয়ের অবস্থান প্রথম সারিতে।

সুতরাং, শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। 

 কেন পড়তে যাবেন নরওয়ে? 

অপরুপ সৌন্দর্যমন্ডিত দেশ নরওয়েতে রয়েছে সম্পূর্ণ বীনা  বেতনে পড়াশোনা করার সুযোগ। সেইসাথে পড়াশোনার মান বলতে গেলে বিশ্বসেরা। 

মূলত, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রথম বাধাই হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট। উচ্চ টিউশন ফি,  অধিক লিভিং কস্ট থাকার কারনে অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্বেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে তেমন আগ্রহী হয়না। সেদিক থেকে ব্যাতিক্রম এ দেশটিতে রয়েছে পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ সুবিধা। রয়েছে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা পার্ট-টাইম চাকরির সুবিধা ও পড়াশোনা শেষে স্থায়ী বসবাসের নিশ্চয়তা। 

পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স বাছাইয়ের সুযোগ 

নরওয়েতে রয়েছে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ফাইন আর্টস,পাবলিক আর্টস, ইন্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সাইন্স, ডেটা সাইন্স সহ ৩০০ টিরও অধিক বিষয়। একইসাথে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কলা সহ বিজ্ঞানের সকল শাখার অপূর্ব সম্মেলন। ৯ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে  ১৫০টি সরকারি কলেজ। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তো আছেই যেখানে নাম মাত্র টিউশন ফি তে ভর্তি হতে পারবেন। 

ব্যাচেলর নাকি মাস্টার্স 

এখন আসা যাক আপনি ব্যাচেলর নাকি মাস্টার্স প্রোগ্রামে যাবেন এ প্রসঙ্গে।

বলে রাখা ভালো, নরওয়েতে শুধুমাত্র মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।  কেননা মাস্টার্স সহ পিএইচডির সকল বিষয়  ইংরেজিতে পড়ানো হয় অন্য দিকে ব্যাচেলর লেভেলের সকল বিষয় স্থানীয় নরওয়েজিয়ান ভাষায় পড়ানো  হয় বিধায় এ ভাষায় ভালো  দক্ষতা না থাকলে আবেদন করা যায় না।

এবার আলোচনা করি ভর্তির যোগ্যতা ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে,

  • নরওয়েতে  দুইবছর মেয়াদী মাস্টার্স প্রোগ্রাম ও চার বছর মেয়াদী পিএইচডির ক্ষেত্রে  CGPA কাউন্ট করা হয় নরওয়েজিয়ান গ্রেডিং পদ্ধতি অনুযায়ী। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের  শিক্ষার্থীদের CGPA 3.00 বা তার যত উপরে রাখা যায় ততোই ভালো। 
  •  ইংরেজীতে দক্ষতার যাচাইয়ের জন্য IELTS স্কোর 6.5 থাকলেই আপনি আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও সকল বিশ্ববিদ্যালয় TOEFL স্কোর গ্রহণ করে থাকে। এ সংক্রান্ত সকল তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া থাকে। 

এখন আসা যাক কখন কিভাবে আবেদন শুরু করবেন।

নরওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে  আবেদন প্রক্রিয়া অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক সহজ। বছরে একটি সেশন হওয়ায় সাধারণ  সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরবর্তী বছরের জন্য আবেদন শেষ করতে হয়। আপনি নিজেই ঘরে বসে আবেদন করে ফেলতে পারবেন। এজন্য কোন এজেন্সির সহায়তা প্রয়োজন নেই। søknadsweb, একটি সুনির্দিষ্ট ওয়েবপোর্টাল যার মধ্যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য দেয়া থাকে এবং এর মাধ্যমেই আপনাকে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। আবেদনের জন্য আপনাকে কোন ফি দিতে হবে না।

প্রথমত, এই ওয়েবসাইটে লগ-ইন করে আপনার পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় সিলেক্ট করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিলেই ব্যাস   হয়ে গেল!  অবশ্য এর পূর্বে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়, এর অবস্থান, কাঙ্ক্ষিত বিষয়, সেশন, রিকোয়ারমেন্ট, ডেডলাইন ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে। 

এখন আসা যাক আবেদনের সময় যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাবমিট করতে হয়। 

  • পাসপোর্ট 
  • CV
  • IELTS সার্টিফিকেট 
  •  একাডেমিক সার্টিফিকেট
  •  একাডেমিক টান্সক্রিপ্ট 
  • রিকমেন্ডেশন লেটার 
  • মোটিভেশনাল লেটার 

ব্যাংক স্টেটমেন্ট কি প্রয়োজন নেই? 

আছে।  আপনি যদি প্রাথমিকভাবে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হোন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে অফার লেটার পাঠাবে। অতঃপর আপনাকে ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টে বাংলাদেশী টাকায় ১২ লক্ষ টাকা পাঠাতে হবে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।  আপনাকে পুরো টাকা সেখানে যাওয়ার ৩/৪ মাসের মধ্যে ফেরত দেয়া হবে। আপনি চাইলে তা দেশে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। এই সুবিধার কারনে ইউরোপের এই দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

পরিশেষে বলা যায়, কেন নয় নরওয়ে? শক্তিশালী অর্থনীতি, বিশ্বসেরা শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশটি হতে পারে শান্তি প্রিয় শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ। 

আরও ব্লগ পরতে এখানে #ক্লিক করুন। 

Writer 

Baitul Hikma 

Intern, Content Writing  Department. 

YSSE