উৎসব কিংবা অনুষ্ঠান,উপহার আদান-প্রদান বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।  উপহার দেওয়াটা যেমন প্রশান্তির তেমনি পাওয়াটাও আনন্দের সেটি যেমনই হোক। 

বলুন তো? কে না চাই সারপ্রাইজ গিফট পেতে। খুব কম মানুষই আছে যারা কিনা উপহার সামগ্রী পেতে পছন্দ করে না। 

এখন আসা যাক উপহার পছন্দের ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি বিষয়।

আমরা সাধারণ উপহার নির্বাচনের আগে নানা রকম চিন্তা ভাবনা করে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তুটি প্রিয়জনকে দেওয়ার  চেষ্টা করি।এই সময় আমরা অপর প্রান্তের মানুষটির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে থাকি যেমনঃ- বয়স,রুচি,পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা ইত্যাদি।

এছাড়াও, আচার অনুষ্ঠান ও উপলক্ষ ভেদে উপহার বিনিময়ে ভিন্নতা দেখা যায় । 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পাশ্চাত্যে সংস্কৃতিতে মদ,বিয়ার,বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়র বেশ কদর। হর হামেশাই তারা কার্ড, ফুল এবং এ জাতীয় পানীয় উপহার হিসেবে বিনিময় করে থাকে। 

অপরদিকে বাঙালি জাতি তার হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। বাঙালি কোন বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গেলে এখনো মিষ্টি ও পান সুপারি হাতে করে নিয়ে যাওয়ার যে রেওয়াজ তা অতিপ্রাচীন। 

অধুনিকতার যুগে এ প্রথার পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আচার অনুষ্ঠানে যেমন এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন তেমনি উপহার কেনা থেকে শুরু করে পেকেজিং সবক্ষেত্রে এসেছে নতুনত্ব। 

এবার চলুন দেখি, বয়স অনুযায়ী কীভাবে গিফট বাছাই করা যায়। 

  • বাচ্চারা উপহার পেলে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হয়। তাদের প্রথম পছন্দ গুলো বিভিন্ন ধরনের খেলনা, চকলেট, কেক, আইসক্রিম, পোশাক, জুতা, ঘড়ি, ভিডিও গেমিং সেট ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ থাকে।
  • স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জন্য দেয়া যায় এমন কিছু সামগ্রী হলো গল্পের বই,ডাইরি, কালার পেন্সিল,ঘড়ি, জামা কাপড়, জুতা, ব্যাগ ইত্যাদি।
  •  ইয়াং জেনারেশনের প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে ব্রান্ডের ঘড়ি, সুগন্ধি বা পারফিউম, ছেলেদের  টিশার্ট, পাঞ্জাবি, বিভিন্ন গ্যাজেট যেমন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, আইপড। মেয়েদের ছোট খাট গয়না, ফুল,ফুলের মালা,কার্ড, কফি মগ, কাপল সেট, স্বর্ন বা ডায়মন্ডের রিং ইত্যাদি। 
  •  মহিলা বা গৃহিণীদের ক্ষেত্রে শাড়ি, গয়না, তাছাড়া ক্রোকারিজ সামগ্রী, ঘর সাজানোর শো-পিস, ওয়ালমেট, রুচিশীল নারীদের এন্টিক জিনিস ও ক্যাকটাস জাতীয় গাছ পছন্দ। 
  • অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য মানানসই চাদর, পশমি শাল, সুগন্ধি আতর, জামা কাপর ব্যাগ, বিভিন্ন কবি সাহিত্যিক দের বই ও ধর্মীয় গ্রন্থ পছন্দ। 

এইতো গেল বয়স অনুযায়ী কীভাবে সুন্দর ভাবে উপহার দেয়া যায়। এখন দেখা যাক উপলক্ষ মাথার রেখে এর তালিকা কেমন হওয়া উচিত। 

  • জন্মদিন বা পার্টিতে আপনি নিরদ্বিধায় নিয়ে যেতে পারেন কেক,ফুল, কার্ড, মিষ্টি, চলকেট। এগুলোর বাইরে অন্য কিছু চাইলে সাথে নিতে পারেন।
  • এছাড়াও বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠানে মিষ্টি, শাড়ি, গয়না ও ঘর সাজানোর উপকরণ নিতে পারেন।
  • কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে ফুল, কার্ড,  ফল, জুস, মিনারেল ওয়াটার, ইত্যাদি। 

উপহার তো বাছাই হলো এবার কেনা ও  বিনিময়ের প্রসঙ্গে যে বিষয় গুলো মাথায় রাখা উচিত। 

সর্বপ্রথম বলব উদ্দেশ্য নিয়ে। আপনার একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকতে হবে।যেমন কেন দিচ্ছেন, কাকে দিচ্ছেন, কি দিচ্ছেন, কখন দিচ্ছেন তা আগে থেকে ঠিক করে নিন।

তারপর আসি বাজেট প্রসঙ্গে। নিসন্দেহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী জিনিস কেনার চেষ্টা করুন। 

অবশ্যই কেনার আগে ভালো ভাবে দেখে নেওয়া উচিত ছেঁড়া, ফাটা, ভাঙা, রংচটা  কিনা। পন্যের গুন ও মান ঠিক আছে কিনা।

পেকিং করার পূর্বে অবশ্যই প্রাইস বা মূল্য লেখা অংশ টুকু তুলে ফেলুন।  কেননা কাউকে কিছু দিলে তা খুবই মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হয়। যা অর্থের মাধ্যমে মূল্যায়িত হয় না। 

জলমলে রঙিন কাগজ বা রেপিং পেপার দিয়ে পেকিং করে দিন। পেকিং ছাড়া জিনিস দেয়া বড্ড বেমানান। 

কার্ডের ক্ষেত্রে উপলক্ষ অনুযায়ী কার্ড বাছাই করুন তাতে সুগন্ধি মিশিয়ে দিতে পারেন এবং আপনার মনের ভাব লিখে দিতে পারেন।এটা আপনার রুচিশীল মনের পরিচয় বহন করবে।

ফুল গিফট হিসেবে দিতে চাইলে তরতাজা সুগন্ধি ফুল সংগ্রহ করতে পারেন।

পোশাক উপহার হিসেবে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে ব্যবহারকারীর বয়স,রুচি,উচ্চতা, কালার ইত্যাদি বিবেচনা করে নিন।

ছবির ফ্রেম, কাচের জিনিস, গয়নার আলাদা আলাদা বাক্সে সাবধানে রেখে তারপর রঙিন কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে হবে যাতে ভেঙে না যায়।

উল্লেখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজে অল্প সময়ের মধ্যে নিজের সাধ্যের মধ্যে থেকে প্রিয় মানুষগুলোর জন্য  কিছু  উপহার পাঠাতে পারেন। এতে সম্পর্ক উন্নত হয়, দৃঢ় হয়, আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় একই সাথে দূরত্ব গুছায়। 

আমাদের আরো ব্লগ পরতে #এখানে  ক্লিক করুন। 

Writer 

Baitul Hikma 

Intern, Content writing Department 

YSSE.