গ্রন্থঃ দ্য জাঙ্গল বুক

লেখকঃ রুডইয়ার্ড কিপলিং

প্রকাশঃ ১৮৯৪

ধরণঃ  শিশু সাহিত্য 

প্রধান চরিত্রঃ মোগলি

রুডইয়ার্ড কিপলিং, 

একজন  কিংবদন্তি লেখক। যিনি সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে কমবয়সী ব্রিটিশ লেখক হিসাবে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।  যাকে সারা বিশ্ব চিনে তার অনবদ্য সৃষ্টি “The Jungle Book  “ বইটির জন্য। এটি বিশ্বের প্রথম সারির একটি শিশু সাহিত্য। ১৮৯৪ সালে রচিত” দ্য জাঙ্গল বুক ” অদ্যাবধি রয়েছে জনপ্রিয়তা শীর্ষে। শিশু সাহিত্য হলেও বইটি সকল শ্রেণির মানুষের নিকট গ্রহনযোগ্যতা লাভ করেছে। 

এবার নজর দেয়া যাক বইটিতে 

গ্রন্থালোচনা 

” দ্য জাঙ্গল বুক ” বইটির মূল কাহিনি গড়ে ওঠে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি জঙ্গলকে ঘিরে। যেখানে মানুষ ও জঙ্গলের পশু পাখির মধ্যে সম্পর্ক, বৈরীতা ও পরিবেশর বিরূপ আচরণ চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলতে লেখক যথেষ্ট মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন । বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে ”মোগলি” নামের একটি বাচ্চা ছেলে। যে কিনা ছোটবেলায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে পাহাড়ি জঙ্গলে শত শত হিঃস্র জন্তু জানোয়ারের মাঝে একদল নেকড়ের সংস্পর্শে বড় হয়ে ওঠে। বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল, হয়ে উঠেছিল বনের সকলের প্রিয় তারই সূত্র ধরে এগিয়ে যেতে থাকে গল্পের রোমাঞ্চকর পটভূমি। 

উল্লেখযোগ্য কিছু চরিত্র  

মুগলিঃ নাম পরিচয়হীন এক মানব সন্তান, মুগলি । মনুষ্য জগতের বাইরে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হতে দেখা যায়। একদল নেকড়ের পরম মমতায় আগলে রাখে সারাক্ষণ। তার আচরণ ছিল অনেকটা প্রাণীদের মতো।  চার হাত পায়ে  ভর দিয়ে চলা, কাচাঁ মাংস ও ফলমূল খাওয়া, গাছের ছাল বাকল দিয়ে স্বল্প পরিচ্ছদে সে ছিল দারুণ বুদ্ধিদিপ্ত ও চটপটে। 

বাগিরাঃ এখানে বাগিরা নামের পশুটি একটি ব্ল্যাক প্যান্থার বা কালো চিতা বাঘ। সে’ই প্রথম মোগলি নামের মানুষের বাচ্চাকে জঙ্গলে নিয়ে আসে। 

শের খানঃ রয়েল বেঙ্গল টাইগার যাকে বনের রাজা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে । প্রাণী জগতের ত্রাস ও মোগলির প্রধান শত্রু।

আকিলাঃ একটি নেকড়ে দলের নেতা ও মোগলির বাবা হিসাবে সম্বোধন করা হয়েছে। মুগলিকে জঙ্গলের সব আদব কায়দা শিখিয়েছিল।

রক্ষাঃ মোগলির মায়ের চরিত্র একটি মেয়ে নেকড়ে। মাতৃ স্নেহ  দারুণভাবে ফুটে উঠেছে এই চরিত্রে।  

বালু খানঃ মুগলির খুব কাছের ও প্রিয় বন্ধু হিসাবে একটি ভাল্লুকের সরল উপস্থিতি ছিল সাধারণের মাঝে অসাধারণ ব্যাপার। বোকাসোকা ও মজার এই চরিত্র কিছু সময়ের জন্য চরম হাস্যরসের সূচনা করে।

উল্লেখীত চরিত্র ছাড়াও আরও ছোট বড় অনেক পশু পাখির চরিত্র ছিল যা পুরো গল্পটিকে প্রানবন্ত করে তুলে। 

এছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষ ও পশুপাখিদের লড়াই করে টিকে থাকা, বনাঞ্চলের জীব জন্তুর নিয়ম শৃঙ্খলা এক গভীর অনুভূতির জন্ম দেয়। 

বইটির লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং ব্রিটিশ বংশদ্ভূত হলেও তার জন্ম ভারতে। মূলত ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশের কারণে শৈশবের বেশ খানিকটা সময় কেটেছে ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল, পাহাড় পবর্তে। ঘোরাঘুরির সুযোগ পেয়েছেন বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে; আদোও কি জাঙ্গল বুক সত্য কাহিনি অবলম্বনে রচিত?

জানা যায়, ভারতে বিভিন্ন গহীন জঙ্গল থেকে এরকম অনেক মানুষকে পাওয়া গেছে যাদের বাইরের দুনিয়ার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। বনের জীব জন্তুর সাথে যাদের উঠা বসা। মানুষ হয়েও যাদের মধ্যে পশুর  আচরণ দৃশ্যমান। মোগলি চরিত্র তার মানানসই উদাহরণ।

বাস্তবতা ও কল্পনার মিশ্রণ 

গ্রন্থটিতে বাস্তবতার সাথে লেখকের কল্পনার ফলপ্রসূ প্রয়োগ ঘটেছে। বইয়ে  বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে বনের পশুপাখিরা উল্লেখযোগ্য। যাদের মধ্যে পারস্পরিক কথোপকথন লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে  জন্তু জানোয়ার যতোই হিংস্র কিংবা বিশালদেহী হোক না কেন জ্ঞান বুদ্ধিতে মানুষই সেরা, তারই প্রমাণ পাওয়া গেছে এই বইটিতে। তাছাড়া শেষাংশে  আগুনের লেলিহান শিখা বলতে “রেড ফ্লাওয়ার ” কে বুঝানো হয়েছে।  মানুষের ধ্বংষাত্বক কর্মকান্ড ও পরিবেশের উপর তার প্রভাব সার্থকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। 

পরিশেষে, শিশু সাহিত্য হলেও দ্য জাঙ্গল বুক আজও কোটি কোটি মানুষের কাছে ব্যাপক  জনপ্রিয়। একশ ঊনত্রিশ বছর পরেও বইটি একইভাবে  দ্যুতি ছড়াচ্ছে  প্রজন্মের পর প্রজন্মে।

Writer 

Baitul Hikma. 

Intern, Content Writing Department,

YSSE