সবে আমাদের ইউনিভার্সিটি পূজার বন্ধ দিয়েছে। অনেকদিন ধরে আমি আর আমার বোন শ্রেয়া সাথে আমার দুই চাচাতো ভাই বোন (রক্তিম, নিশি, ঐশী ও প্রীতম) ঠিক করে রেখেছিলাম যে এবার পূজার বন্ধে আমরা মামার বাড়িতে ঘুরতে যাবো। মামার বাড়ির আশে পাশে অনেক বড় করে পুজা হয়। ঘুরা ও যাবে দেখা ও যাবে।
তাই আমার ভার্সিটি ও ভাই-বোনের স্কুল কলেজ বন্ধ দিলে পরদিন আমরা মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেখানে বেশ কয়েকদিন অনেক মজাই করলাম মামা- মামী ও ভাইবোনরা মিলে। দেখতে দেখতে কালী পূজার দিন চলে এলো।
মামার বাড়ির পুকুরঘাটের ওপারের একটা বহুবছর ধরে বন্ধ বড় রাজবাড়ি আছে। যদিও বাড়ির সামনে দিয়ে লোকজনের যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে তবুও সেদিকে খুব একটা মানুষজন যায় না।
আমাদের তিনভাইবোনের ছোটবেলা থেকে মামা বাড়ি গেলে খুব শখ সেই বাড়িতে গিয়ে দেখবো কেন সেই বাড়িকে মানুষ ‘ভূতের বাড়ি’ বলে। কিন্তু মামার নিষেধে সেখানে যাওয়া হয়ে উঠলো না আজ পর্যন্ত।
মামা থেকে ছোট বেলায় শুনেছিলাম,
“বহুকাল আগে ঐ বাড়িতে একজন তান্ত্রিক বৈদ্য থাকতো। প্রতি মঙ্গলবার সেখানে চন্ডী পূজা হতো। সারাদিন সেখানে তান্ত্রিকের চন্ডী সাধনা হতো। বাড়িতে একটি বড় কালি মন্দির ছিল। সুমন ছিলো এ কালীমন্দিরের পূজারি। এখানে রাতদিন। চলত জাগ্রত দেবী দক্ষিণা কালীর ধ্যানমন্ত্র পাঠ….
নির্বিঘ্নে পাঠ হতো চামুন্ডা মুণ্ডমালিনী দেবীর শ্লোক…..
“মহিষাগ্নি মহামায়ে চামুণ্ডে মুণ্ডমালিনী, আয়ুরোগয় বিজয়ং দেহি দেবী নমহস্তুতে।”
তান্ত্রিক এক কালে ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি ছিলেন দেবী কালির ভক্ত। তার স্ত্রী পূর্ণপ্রমা ছিলেন মুসলিম ঘরের মেয়ে। পূর্ণপ্রমার নাম ছিলো জাহানারা বেগম। সে কালে জাতবিবাদ প্রথা আমাদের সমাজে বেশি ছিল। তাই ব্রাহ্মণ ও মুসলিম মেয়ের প্রেম ও সম্পর্ক তারা মেনে নেই নি। তাই তাই ব্রাহ্মণ কে হত্যা করতে উদ্ধত হয় গ্রামবাসীরা।
জাহানারা ও ব্রাহ্মণ সুমন এসে আশ্রয় নেয় এই গ্রামে। তাদের বিবাহ হয়। জাহানারা নাম বদলে হয়ে যায় “পূর্ণপ্রমা”। কিছু বছর পর তাদের দুই সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে হয়। বড়মেয়ের নাম রাখা হয় “মুন্নী”, ছোট মেয়ের নাম “রোহিনী।” সুমন ব্রাহ্মণের স্ত্রীর গর্ভের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান- ক্ষণ ও গ্রহ বিচারে তার নাম রাখা হয় “রোহিনী।”
ছোট মেয়ে যোগিনীর জন্মকালে তান্ত্রিকের পত্নী পূর্ণপ্রমার তীব্র প্রসব বেদনা হয়। যোগিনীর জন্ম হলেও জন্মস্থলে পূর্ণপ্রমার মৃত্যু হয়। পূর্ণপ্রমার মৃত্যু এরপর ব্রাহ্মণ সুমন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন।
একদিন অমবস্যার রাত্রিবেলায় নিদ্রাকালে মাতৃভক্ত সুমন স্বপ্নে দেখতে পেলো এক পিশাচ তাকে ডাকছে। খুঁজে নিতে বলছে অসীম ক্ষমতা।সে অসীম ক্ষমতার লোভ বদলে দিল তান্ত্রিক সুমনকে । সেই থেকে ব্রাহ্মণ হয়ে উঠল পিশাচপূজারি হয়ে উঠল তান্ত্রিক। কালীর বিগ্রহ বিলীন হলো। এ মন্দিরেই সাধনা শুরু করল পিশাচের। পিশাচ সাধনা কঠিন ।
একসময় তন্ত্রসাধনা করতে করতে করতে মানসিক সুবুদ্ধি লোভ পায় তান্ত্রিক সাধকের। এক কালের কালি সাধক এখন হয়ে উঠে এক অন্ধ তান্ত্রিক।
সে কঠিন সাধনায় তান্ত্রিক সুমন ছোট মেয়ে রোহিনীকে দিতে চেয়েছিল পিশাচের সর্বশক্তি ।
আর এর বিনিময়ে পিশাচ চেয়েছিল তার বড় মেয়ে মুন্নীর বলির রক্ত। তান্ত্রিক পিশাচের কাছে উৎসর্গ করতে আনলো নিজ মেয়ের রক্ত। মারজ পান করে যোগিনী সিদ্ধ হচ্ছিল মন্ত্রে…..কিন্তু সেই দিন কোন কারণ বশত অল্পের জন্য বিঘ্ন হয় তন্ত্রসাধনা। পূর্ণতা পেল না সেদিনের প্রচেষ্টা। কিন্তু পিশাচ সাধনা কখনো খন্ডন হয় না।
পিশাচ সাধনা এরপর ও চলতে থাকে। এরপর একদিন……
-কিছুবছর পর পুনরায় তন্ত্রসাধক নিজের মেয়েকে বলি দিতে মগ্ন হলেন।
এবার সেই তান্ত্রিক নিজের মেয়েকেও বলি দিয়ে দিলো। বিরাট রক্তারক্তি ঘটনা। খবর পেয়ে গ্রামের সকলে ছুটে গেলো সেই বাড়িতে। রোহিনী অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো। রোহিনীকে হইতো পিশাচ সর্বশক্তি দিয়ে এক অপরিতৃপ্ত নরপিশাচে পরিণত করেছিলো।
গ্রামবাসীরা সেখানে গিয়ে দেখলো সিদূর মাখা মুন্নীর মাথাটা বাড়ির একধারে পড়ে আছে। রক্তের ছড়াছড়ি। পাশে ছোট মেয়ে রোহিনী অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। গ্রামবাসীরা তন্ত্রসাধক কে প্রচন্ড মারধর করে। তাতেই তন্ত্রসাধকের মৃত্যু হয়।
এখন সেই বাড়িতে আছে কেবল রোহিনী। তাকে গ্রামবাসীরা গ্রহণ করতে অগ্রাহ্য করে সকলে। তাই কোন উপায় না দেখে মুন্নী তন্ত্র সাধকের মরদেহের সাথে সেই বাড়িতে বন্দী করে দেই রোহিনীকে। এবং সেই বাড়িতে সকলের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেই।
কয়েকবছর আগে দুই তিনজন অতিথি সেই বাড়ি পর্যবেক্ষণে প্রবেশ করেছিলো তারা আর ফিরে আসি নি। এর পর তাদের খুঁজে কিছু দিন উদ্ধারবাহিনী ও কিছু গ্রামবাসী বাড়িটিতে প্রবেশ করে। তাদের বাড়িতে প্রবেশের পর কেবল শোনা গিয়েছিলো তাদের চিৎকার। আর কিছু কাটাকাটির শব্দ ও এক ভয়ংকর পিশাচী হাসির চিৎকার।কয়েকবছর আগে দুই তিনজন অতিথি সেই বাড়ি পর্যবেক্ষণে প্রবেশ করেছিলো তারা আর ফিরে আসি নি। এর পর তাদের খুঁজে কিছু দিন উদ্ধারবাহিনী ও কিছু গ্রামবাসী বাড়িটিতে প্রবেশ করে। তাদের বাড়িতে প্রবেশের পর কেবল শোনা গিয়েছিলো তাদের চিৎকার। আর কিছু কাটাকাটির শব্দ ও এক ভয়ংকর পিশাচী হাসির চিৎকার।
এখনো নাকি অমবস্যার রাতে সেই বাড়ি থেকে আওয়াজ আসে। সেই বাড়ির ছাদে প্রায় পূর্ণিমার রাতে সাদা শাড়ি পড়ে এক অপরূপ সুন্দর নারী নুপুর পড়ে ঘুরে বেড়ায়।
কালি পূজার আগের দিন থাকে ভূত চতুর্দশী। তাই সেদিন আমি আমার বোন, চার চাচাতো ভাই বোন ও মামার ছেলে শিবু কালি মন্দিরে দেবীর আরাধনা ও পূজা সেরে আনন্দ করে বাড়ি ফিরছিলাম।
অমবস্যার রাত। আকাশ কালো মেঘে ডাকা। সন্ধ্যা থেকে মেঘ গর্জন করছে। আমরা যখন বাড়ির প্রায় কাছাকাছি তখন এলো প্রবল জোড়ে তুফান সহ মুসলধারে বৃষ্টি। কোন উপায় না পেয়ে আমার আমার সেই বাড়ির ফটকে গিয়ে আশ্রয় নিলাম বৃষ্টির তুমুল বর্ষণ থেকে বাঁচতে। এমন বৃষ্টি এই জীবনে আর কখনো দেখি নি। প্রচুর জোড়ে শিলাবৃষ্টি শুরু হলো । প্রচন্ড তুফান হচ্ছে চারদিকে।
বাড়ির চারপাশে আমরা সাত জন বাদে আর কেউ নেই।
হঠাৎ কোথা থেকে এক ছোট্ট সুন্দর দেখতে মেয়ে ছুটে এলো। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমরা সে আমাদের দেখে হাসছে। তার রূপ যেমন সুন্দর তেমনি তার হাসিটাও।
আমার বোন শ্রেয়া তার দিকে তাকালো আর জিজ্ঞেস করলো “তোমার নাম কি গো পিচ্চি মেয়ে?”
মেয়েটি দেখতে পুরো পুতুলের মতো সুন্দর ছিলো। প্রায় প্রীতমের বয়সেরই। বয়স ৯-১০ হবে। শ্রেয়া তার থেকে নাম জিজ্ঞেস করাই সে বললে তার নাম “রূহি।”
হাসার কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে সে বলে এমনিতেই হাসছে। অল্পক্ষণে তার সাথে নিশি ও প্রীতমের বন্ধুত্ব জমে উঠে। এরপর রূহি তাদের বাসায় এসে বসতে বলে বৃষ্টি থামার আগ পর্যন্ত।
আমরা মূহুর্তেই ভূলে গেছিলাম যে, এই বাড়িটি হলো পিশাচ সাধকে রোহিনীর। সকলে আমরা অনেক কৌতূহলের সাথে বাড়িতে প্রবেশ করলাম। বাড়িটা ছিল অনেক বড় এবং অনেক ভয়ানক রকমের সুন্দর। আমরা বাড়িটি ঘুরে দেখেছিলাম। কে যে কোনদিকে গেলাম কে জানে। আমি আর আমার বোন শ্রেয়া এক সাথে ছিলাম।
হঠাৎ একটি রুম থেকে আরকটি মেয়ে বের হয়ে আসলো। তার নাম হলো….. । আমরা অতক্ষণে পিশাচের তন্ত্রবশে কাবু হয়ে গেছি। আমরা যে কত বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছি কারো তাতে হুশ জ্ঞান নেই।
মেয়েটি আমাকে ও শ্রেয়াকে একটা সুন্দর রুমে নিয়ে গেলো।
প্রীতম,ঐশী,নিশি,রক্তিম, শিবু গেলো অন্য আরেক রুমে।
তারপর……….
চলবে (পর্ব ০১)
আরো ব্লগ পড়তে #এখানে ক্লিক করুন।
Joy Barua
Intern,
Content Writing Department. YSSE