গ্রন্থ : কঙ্কাল
লেখক : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রকাশ কাল : ১২৯৮ বঃ
ধরণ : ছোট গল্প।
বাংলা ছোট গল্পের জনক ” বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর” তার এক অমর সৃষ্টি হলো ছোটগল্প সমগ্র। অসংখ্য ছোট গল্পে তিনি প্রাণ, প্রকৃতি, মানুষ, জীব ও জড়ের মধ্যে এক আত্মীক বন্ধন সৃষ্টি করেছেন কেবলমাত্র শক্তিশালী লেখনী, সৃজনশীলতা ও রসবোধের মাধ্যমে। ঠিক এমনি এক রহস্যময় গল্প হলো “কঙ্কাল”।
তাইতো মৃত্যুর এতো বছর পরেও তার সাহিত্য রচনা আজও মানুষের মনে দোলা দেয়।
গ্রন্থালোচনা :
নাম শুনেই হয়তো আন্দাজ করা যায় গল্পটির বিষয়বস্তু কি হতে পারে!
হুম! ঠিক ধরেছেন। “কঙ্কাল ” রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয় একটি ছোট গল্প। ফাল্গুন ১২৯৮ ব: রচিত এই গল্পে রবীন্দ্রনাথের বাল্যকালের এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির বর্ণনা করা হয়েছে। ভৌতিক কাহিনী দিয়ে শুরু হলেও শেষটা গিয়ে থামে জীবনের রূঢ় বাস্তবতায়।
মূলকাহিনী :
“নরকঙ্কাল” নিতান্তই তুচ্ছ বস্তু যা শরীরবিদ্যায় কাজে লাগানো ছাড়া আর কোন বিশেষ দরকার নেই। অথচ এর পিছনেও যে কতো অজানা ঘটনা ও উপলব্ধি থাকতে পারে। তা এই সাহিত্য রচনা না পড়লে জানা যেতো না।
গল্পের শুরুটাও ছিল অত্যন্ত চমৎকার। বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথ ও তার তিন বাল্যসঙ্গী ক্যাম্বেল স্কুলের এক ছাত্রের কাছে অস্তিবিদ্যা সম্পর্কে পড়ত । তারা যে ঘরে থাকতো তার পাশের ঘরে ছিল আস্ত এক কঙ্কাল। বালক রবীন্দ্রনাথের একরাশ অনিচ্ছা সত্ত্বেও পিতামাতার অভিপ্রায় ছিল তাকে সর্ববিদ্যায় পারদর্শী করবে।
যথারিতি কোন একদিন তাকে সেই ঘরে রাত্রি যাপন করতে হয় আর এখানেই ঘটনার সূত্রপাত। অন্ধকার ঘরে ছোট এক চিলতে প্রদীপ জ্বলতে জ্বলতে হঠাৎ নিভে যায়। অতঃপর, সচরাচর সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে যা ঘটে তার ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম হলো না। মৃত্যু চিন্তা উদয় হতে শুরু করলো !
” এই – যে রাত্রি দুই প্রহরে একটি দীপশিখা মিলাইয়া গেল, প্রকৃতির কাছে ইহাও যেমন, আর মানুষের ছোট প্রাণশিখা কখনো দিনে কখনো রাত্রে হঠাৎ নিভিয়া বিস্মৃত হইয়া যায়, তাহাও তেমনি।
অতঃপর, পাশে দেয়ালে টানানো সেই কঙ্কালের কথা মনে পড়ল। জীবিত থাকতে কঙ্কালটি কি ছিল, কেমন ছিল ইত্যাদি চিন্তা করতে করতে হঠাৎই নিকেশ কালো অন্ধকারে ঘন নিশ্বাসের শব্দ শুনা গেলো। অজানা বস্তুটি সারা ঘরময় ছোটাছুটি করে কি যেন খুঁজছে।
” গা ছমছম করিতে লাগিল। জোর করিয়া এই অকারণ ভয় ভাঙ্গিবার জন্য বলিয়া উঠিলাম, “কউ! পদশব্দ আমার মশারীর কাছে আসিয়া থামিয়া গেলো এবং একটা উত্তর শুনিতে পাইলাম, ” “আমি, আমার সেই কঙ্কালটা কোথায় গেছে তাই খুঁজতে আসিয়াছি।”
পরবর্তী কাহিনি আরোও রোমাঞ্চকর ও মজাদারও বটে। সহসা কঙ্কালটি লেখকের শিওরে বসিয়া গল্প করিতে শুরু করলো। এদিকে সমস্ত স্নায়ুচাপ উপেক্ষা করে লেখক রবীন্দ্রনাথ চরম আগ্রহে এটা ওটা প্রশ্ন করতে লাগলেন।
“আমার বুকের হাড় যে তাহারই মধ্যে ছিল।
আমার ছাব্বিশ বৎসরের যৌবন যে তাহার চারি দিকে বিকশিত হইয়াছিল। — একবার দেখিতে ইচ্ছে করে না? “
ঘটনা বিবরণীতে বুঝা গেলো এই কঙ্কালটি একটি ছাব্বিশ বছরের তরুণীর। যে কিনা পঁয়ত্রিশ বছর আগে এমনিভাবে মানুষের সঙ্গে বসে গল্প করতো৷ অথচ ভাগ্যের নির্মমতায় এই পঁয়ত্রিশটা বছর শ্মশানের বাতাসে হুহু শব্দে ঘুরে বেড়িয়েছে। বাল্যবিবাহের শিকার হওয়া এই তরুণী বিয়ের দু’মাস যেতে না যেতেই বিধবা হয়ে যায়। অল্পদিনে স্বামী মারা যাওয়াতে শ্বশুরবাড়িতে বিষকন্যা উপাধি দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাপের বাড়ি। এরপর তার বয়স বাড়তে থাকে সাথে বাড়তে থাকে সৌন্দর্য। নিজের রূপের বর্ণনা সে যেভাবে বলেছিল –
“তোমার কাছে কি করিয়া প্রমাণ করিব যে, সেই দুটো শূন্য চক্ষুকোটরের মধ্যে বড়ো বড়ো টানা দুটি কালো চোখ ছিল এবং রাঙা ঠোঁটের উপরে যে মৃদু হাসিটুকু মাখানো ছিল এখনকার অনাবৃত দন্তসার বিকট হাস্যের সঙ্গে দীর্ঘ শুষ্ক অস্তিখন্ডের উপর এত লালিত্য এত লাবণ্য, যৌবনের এত কঠিন -কোমল নিটোল পরিপূর্ণতা প্রতিদিন প্রষ্ফুটিত হইয়া উঠিতেছিল, তোমাকে তাহা বলিতে গেলে হাসি পায় আবার রাগও ধরে। “
এদিকে লেখক রাত্রি পার করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো একমনে শুনে যাচ্ছিল। ক্রমেই অন্য ঘটনার অবতারণায় আত্মারূপী তরুণীটি বলতে লাগলো নিজের ভালোলাগা ও ভালোবাসার কথা। যৌবনের আসক্তিতে তার জীবনেও প্রেম এসেছিল অনেকটা হঠাৎ করেই। বাপের বাড়ির চারদেয়ালে নিজেকে বেশ সুসজ্জিত করে রাখতো। নেহাৎ যদি কারো চোখে পড়ে।
এরপর, তার দাদার বন্ধু, নাম শশিশেখর। মস্ত বড় ডাক্তার হয়ে এসেছে । স্বভাবে নম্র ভদ্র এই মানুষটিকে ভালোবেসে ছিল। কারণে অকারণে তার ঘরে ছুটে যেতো, একটু আধটু কথা হতো, ওষুধের বাক্স খুলে জেনে নেওয়া হতো ডাক্তারি জ্ঞান।
এভাবে দিন যায় রাত যায়, ভালোবাসা পূর্ণতার প্রান্তে। হঠাৎ অজানা প্রবল ঝরে পাল্টে দেয় কাহিনীর মোর। দুটি প্রাণের করুণ পরিণতি কি হয়েছিল জানতে হলে পড়তে হবে পুরো গল্পটি।
এদিকে লেখকের মোহ ভাঙ্গে কাক ডাকার শব্দে। ভোরের আলো ঘরে প্রবেশ করতেই গল্পকথক মিলিয়ে গেলো বাতাসের সঙ্গে।
Writer
Baitul Hikma
Intern, Content writing Department. YSSE