আমরা কম বেশি সকলেই চাই দিনের শুরুটা হওক ধোয়া ওঠা এক কাপ গরম কফি দিয়ে। অথবা শুধু  দিনের শুরুতেই  কেন ? কাজের চাপে যখন খুবই ক্লান্ত কিংবা অসময়ে যখন চোখটা বুজে আসে তখন ও কিন্তু এক কাপ কফি হয়ে উঠে সকল সমস্যার সমাধান । কফি না হলে মনে হয় আজকের দিনটাই যেন বৃথা।

কিন্তু আমরা কি আসলেই জানি আমাদের প্রিয় কফির পেছনের গল্প ? কখন, কোথায়, কে আবিস্কার করল এই কফি যা আজ  বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এক পানিয়? 

চলুন জেনে আসা যাক কফির অজানা সকল তথ্য

কফি ও এর উৎপাদন ব্যবস্থা

কফি, ইংরেজিতে coffee যা বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় এক পানিয়। ‘কফি বীজ’ নামের এক প্রকার বীজ থেকে তৈরি হয় এই কফি। কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ হল এই বীজ যার গাছ প্রায় ৭০ টি দেশে জন্মে। কফিতে রয়েছে ক্যাফাইন নামক এক ধরনের উত্তেজক পদার্থ। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কফি সংস্থার তথ্য মতে ‘পিবেরি’ নামক একটি বীজ প্রায় ৫ শতাংশ কফিতে বিদ্যমান। যা স্বাদ ও গন্ধের জন্য অতি জনপ্রিয়। 

কফি বীজের প্রকারভেদ 

পৃথিবীজুড়ে যত কফি রয়েছে সেগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল এরাবিকা আর অন্যটি হল  রোবুস্টা। এর মধ্যে এরাবিকা সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং এর দামও তুলনামুূলক বেশী। স্বাদের দিক থেকে এটি খুবই সুস্বাদু এবং সুগন্ধিযুক্ত । মিহি দানার এই কফি তাই অত্যন্ত পরচিত।  বিশ্বের প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ কফি এই জাতের। 

অন্যদিকে রোবুস্টা হল এর ঠিক উল্টো, ভীষণ তিতকুটে এবং ক্যাফাইনে ভরপুর এই কফি। এটি মুলত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা এবং দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার কিছু এলাকায় জন্মে। ভিন্ন স্বাদের কারনে এটি ততোটা জনপ্রিয় নয়, দামেও কিছুটা সস্তা। যা ইন্সট্যান্ট কফি তৈরিতে ব্য়বহার করা হয় ।

শুধু পান করা নয়, খাওয়াও হয় কফি

আমরা সাধারনত কফি পান করতেই পছন্দ করি, কিন্তু কিছু কিছু স্থানের মানুষ নাকি কফি খেয়েও থাকেন। হ্যা, এটাই সত্যি। যে সকল প্রতিষ্ঠান কফি তৈরি করে, তারা নষ্ট হয়ে যাওয়া কফির বীজ দিয়ে এক ধরনের ময়দা  তৈরি করে। যা রুটি, চকলেট, কেক বা সস তৈরিতে ব্যবহার করা হয় যদিও এতে কফির স্বাদ পুরোপুরি থাকে না । এর স্বাদ কফির বীজের জাতের উপর নির্ভর করে। 

মুসলমান রাখালের অবদান

প্রায় নবম শতকের দিকে ইথিওপিয়ায়  এক মুসলিম মেষপালকের হাত ধরেই আবিষ্কার হয় আজকের এই কফি। ওই মেষপালক তাঁর ক্লান্ত মেষগুলোর হঠাৎ এতো চঞ্চল হওয়ার কারন খুজতে গিয়ে দেখে এরা একপ্রকার চেরি ফল খায় যা পরবর্তীতে সে এক ইমামের নিকট নিয়ে গেলে সেই ইমাম তা জলন্ত আগুনে ফেলে দিলেন। আর তাতেই বেরিয়ে আসল সুঘ্রাণ। তারা এটি গরম পানি দিয়ে সিদ্ধ করে খেয়ে দেখলেন এটি তাদের রাত জেগে সাধনা করতে সাহায্য করছে। আর এভাবেই এক রাখালের মাধমে আবিষ্কৃত হল কফি।

সবচেয়ে দামি কফি, বিষ্ঠা থেকে তৈরি

কেউ যদি জিজ্ঞেস করে সবচেয়ে দামি কফির নাম কি? সহজেই বলে ফেলা যায় কপি লুয়াক “Kopi Luwak” । কিন্তু জানেন কি এটি যে কোনো প্রাণীর বিষ্ঠা থেকে তৈরি ! 

হ্যা, সিভেট নামক এক প্রকার স্তন্যপায়ী প্রাণী যার লেজ দেখতে ঠিক বানরের মতো।, এই প্রাণীর বিষ্ঠা থেকেই আসে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কফি। ইন্দোনেশিয়ায় এক পাউন্ড এই কফি প্রায় ৬০০ ডলারে বিক্রি করা হয়।

কারা বেশী কফি পান করে ?

আন্তর্জাতিক কফি সংস্থা অনুযায়ী ফিনল্যান্ডের অধিবাসীরা সবচেয়ে বেশি কফি পান করে থাকেন। তাছাড়া নরওয়ে ও আইসল্যন্ডের অধিবাসীরাও আছে বেশি কফি পানের তালিকায়। গড়ে  প্রায় ৯ কেজি পরিমান কফি পান করে থাকেন এই অঞ্চলের মানুষ।

কফির গুনাগুন

এতে বেশি পরিমানে ক্যফাইন থাকে বলে অনেকেই মনে করেন কফি পান স্বাস্থের জন্য ভালো নয়। তবে এটি সম্পূর্ণ সঠিক ও নয়।। কেননা এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আমাদের দেহের কোষগুলোকে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ক্যাফাইন আমাদেকে সতেজ হতেও সাহায্য করে।

আছে অপকারিতাও 

সব কিছুর যেমন ভালো এবং খারাপ দুটো দিক আছে। ঠিক তেমনি কফির ও রয়েছে কিছু অপকারিতা। যেমন অতিরিক্ত মাত্রায় পান করলে উচ্চ রক্তচাপ ,হৃদরোগ ,কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

রয়েছে কফি দিবস

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ২৯শে সেপ্টেম্বর পালিত হয় জাতীয় কফি দিবস । তবে কোথাও কোথাও  ১ অক্টবর পালিত হয় আন্তর্জাতিক কফি দিবস হিসেবে। কফিপ্রেমিরা ওই দিনটিকে  অনেক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে পালন করে থাকেন। 

আরও পড়তে ঘুরে আসুন here

 

লেখক- রুবাইয়া বেগম

ইন্টার্ন ,  কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE