প্রতিটি জনগোষ্ঠীই চায় তাদের জীবনযাপনের প্রক্রিয়া কিছুটা সহজ আর সাবলীল হোক তাইতো জীবনের মায়া ত্যাগ করে অতিক্রম করছেন ভয়ংকর সব জায়গা এবং প্রতিনিয়ত নিজেদের করছেন বিপদের সম্মুখীন । এর মধ্যে অন্যতম হল ড্যারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দেওয়া।
ড্যারিয়ান গ্যাপ প্রায় ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) দীর্ঘ এবং ৫০ কিলোমিটার ( ৩০ মাইল) পাহাড়ি জঙ্গলে ঘেরা একটি পূর্ণ পথ।
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ অভিবাসন প্রত্যাশীরা তাদের জীবনের ঝুকি নিয়ে শুধু উন্নত জীবনযাপনের জন্য পাড়ি দিচ্ছে এই ভয়ঙ্কর পথটি। ড্যারিয়ান গ্যাপ মূলত উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পানামা এবং কলম্বিয়া এর মাঝে অবস্থিত।
অবাক করা বিষয় হল উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার মাঝ বরাবর কোনো সড়ক বা রেল নেটওয়ার্ক নেই। তাইতো অভিবাসীদের কাছে ড্যারিয়েন গ্যাপটাই একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
জানা যায় ইতিহাসে মাত্র ৭ বার গাড়ি বা জীপ দিয়ে এই ড্যারিয়েন গ্যাপটি পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এছাড়া পায়ে হেঁটেই যাত্রীরা পাড়ি দিতেন।
এখন জেনে নেই কেন এই পথটি এতটা ভয়ংকর ?
এর অন্যতম কারণ হল এর ভৌগোলিক অবস্থান এটি নিরক্ষ রেখার ১০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এর আবহাওয়া প্রচন্ড গরম। এছাড়াও এর উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগর যার কারণে এর আদ্রতা ও অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
এছাড়াও এখানে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৩০ দিনই অতিবৃষ্ট এবং বন্যা হয়ে থাকে। এর চারপাশে রয়েছে ঘন বনের অভয়ারণ্য। চারপাশে ঘন বন হওয়ার কারণে এখানে রয়েছে হিংস্র সব প্রাণী এবং বিষাক্ত কিটপতঙ্গ।
এর মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত সাপ, মাকড়সা এবং মশা ইত্যাদি। এর আশেপাশে কোনো বসবাস অথবা হাসপাতালও নেই। এখানে আসা বেশি মানুষই সাপের কামড়, নদীতে ডুবে অথবা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকেন।
এখানে রয়েছে অপরাধীচক্রও তারা অভিবাসীদের রাস্তা চিনিয়ে দিবেন বলে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নেয় এবং অনেক অভিবাসীরা যৌন নির্যাতন ও ডাকাতির শিকার হন। অতিবৃষ্টি এবং বন্যার কারণে এখানে সড়ক নির্মাণও কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবুও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা, কলোম্বিয়া এবং ইকুয়েডরের মানুষেরা এই পথ ব্যবহার করে উন্নত জীবনযাপনের জন্য মধ্য আমেরিকা ও উত্তর আমেরিকায় প্রবেশ করেন।
তারা ড্যারিয়ান গ্যাপ দিয়ে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করা হাজারো অভিবাসন প্রত্যাশীর জন্য এই এলাকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে উঠেছে।
এর অন্যতম কারণ হল বিশ্বের সিংহ ভাগ উত্তর আমেরিকা শাসন করলেও দক্ষিণ আমেরিকার দারিদ্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দারিদ্রতা এবং ক্ষুধা বৃদ্ধির ফলেই তারা এই ভয়ঙ্কর পদক্ষেপটি নিয়ে থাকেন। প্রতি বছর এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এএফপি জানিয়েছেন কিভানে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা পানামা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। তারা পানামা থেকে কোস্টারিকা ও এরপর হন্ডুরাস, গুয়েতেমালা এবং মেক্সিকোতে যায়। তারপর সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী প্রত্যাশী এই জঙ্গল অতিক্রম করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার শিশু।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে পানামার সরকার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ড্যারিয়েন গ্যাপ পাড়ি দিয়েছে প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার অভিবাসী প্রত্যাশী। যার মধ্যে অর্থনৈতিক সংকটে থাকা ভেনেজুয়েলার নাগরিক সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি।
২০২৩ এর তুলনায় ২০২২ এ অভিবাসীদের সংখ্যা অনেক কমই ছিল যেটি ২০২৩ এ হয়ে দাড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০২২ এ অভিবাসীদের মোট সংখ্যা ছিল ২ লাগে ৪৮ হাজারের ও বেশি।
গত সেপ্টেম্বরে পানামা কর্তৃপক্ষ অভিবাসী প্রত্যাশীদের রুখতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানায়। অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করা লোকদের নিজ নিজ দেশে পাঠানোর কথাও জানায়।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন
লেখিকা
মৌসুমী আক্তার রিতু
ইন্টার্ণ, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE