নামঃ তারানাথ তান্ত্রিক সমগ্র 

লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় 

জনরাঃ ভৌতিক, রহস্য, থ্রিলার 

পৃষ্ঠাঃ ছোটগল্প- ২২৪, অলাতচক্র- ১৫৪

প্রচ্ছদঃ মধুসূদন চৌধুরী 

প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

প্রকাশনীঃ মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স  প্রাঃ লিঃ

মুদ্রিত মূল্যঃ ৪০০ টাকা

 

শুরুর কথাঃ 

কলকাতার অন্যতম শো “সানডে সাসপেন্স” থেকে  বেশিরভাগ মানুষ তারানাথের ব্যাপারে জানতে পারলেও, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের জন্যে আমি প্রথম তারানাথের সন্ধান পাই। “আমার প্রিয় ভৌতিক গল্প” নামে একটি বই সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। যেখানে বিভূতিভূষণের লেখা “তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প” সংকলিত ছিল।

তারানাথ তান্ত্রিক চরিত্রের মূল স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্ত তার জীবদ্দশায় তিনি মাত্র দুটি গল্প লিখে যেতে পেরেছেন। পরবর্তীতে তার ছেলে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকগুলি ছোট গল্প রচনা করেন তারানাথকে নিয়ে। পাঠকসমাজে অনেক পরিচিতি লাভ করায় এবং তাদের অনুরোধে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় “অলাতচক্র ” নামের তারানাথ কেন্দ্রিক উপন্যাস রচনা করেন। 

দুঃখের বিষয় ২০১০ সালে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় গত হবার পর থেকে এ চরিত্রটি নিয়ে আর লেখালেখি হয়নি। তিনি বেচেঁ থাকলে হয়ত আমরা আরো রোমাঞ্চকর গল্প-উপন্যাস উপহার পেতাম। সত্যি বললে, বাংলা সাহিত্যে পিতা-পুত্র অসাধারণ একটি চরিত্রের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে গেছেন, তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকব।

মুল গল্পের প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের। লেখক এতো সুন্দর করে সে সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃশ্যপট একেঁছেন যে মনে হবে আপনার চোখের সামনে পুরো ঘটনা চলচিত্রের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে।

আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। তারানাথের গল্পগুলি পড়ার সবচেয়ে মনোরম পরিবেশ হচ্ছে বৃষ্টিস্নাত দিন, বেড-সাইড টেবিলে চা কিংবা কফি এবং আলতো করে শরীর বিছানায় এলিয়ে দেয়া। ব্যস, আপনি প্রস্তুত তারানাথ তান্ত্রিকের রাজ্যে বিচরণের জন্যে।

মুলভাবঃ 

তারানাথ তান্ত্রিক একজন সাধক পর্যায়ের রহস্যময় ব্যক্তিত্ব। তারানাথের জন্মের মুহূর্তে আকাশে নীল আলোর উল্কাপিণ্ড ছুটে যায়, যেটা সম্পর্কে এক দৈবিক স্বত্তা (অমরজীবন) আদিনাথ চক্রবর্তীকে (তারানাথের বাবা)আগাম জানান দিয়েছিল। তারানাথের গল্পগুলো ঠিক গল্প বললে ভুল হবে, প্রতিটি ঘটনা অমোঘ সত্য।

“গল্প নয়। সত্যি কথা।” – বই হতে

কোন এক ব্যস্ত অপরাহ্ণে লেখকের বন্ধু কিশোরী সেন লেখককে  হাত দেখানোর জ্যোতিষীর কাছে নিয়ে যায়। সেখানে “তারানাথ জ্যোতির্বিনোদ” সাইনবোর্ডটি  দেখতে পেয়ে লেখক তার ক্ষমতা সম্পর্কে হেসে উড়িয়ে দিলেও সময়ের কালক্ষেপে  যেন তারানাথের অভিজ্ঞতার গল্প ছাড়া তাদের ছুটির দিনগুলো ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। বিশেষ করে মেঘলা দিনে তারানাথের বাসায় যাওয়া যেন দুই বন্ধুর জন্যে রেওয়াজ হয়ে পরে। পাসিং শো সিগারেট তো গল্পের জন্য নিত্যকার দ্রব্য, সাথে মোড়ের তেলেভাজার দোকান থেকে গরম বেগুনি ও ফুলুরি। পাশাপাশি গল্পের মাঝে তারানাথের আদেশে তার একমাত্র মেয়ে চারি এসে চা- মুড়ি দিয়ে যায়। সব মিলিয়ে গল্প শোনার জন্য উত্তম পরিবেশ। 

 একটা সময় দেখা যায়, লেখকের জীবনের সাথে তারানাথ যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। এমনকি একবার লেখকের জীবনাশঙ্কা দেখা দিলে তারানাথ তাকে উদ্ধার করে।

 এককথায়, তারানাথের সেই সমস্ত অদ্ভুত কাহিনীগুলো নিয়েই উক্ত সমগ্র।

চরিত্র পরিচিতি:

তারানাথ তান্ত্রিক, একজন রহস্যময় ব্যক্তিত্ব এবং চমৎকার বক্তা। তাঁর পুরোনাম তারানাথ জ্যোতির্বিনোদ। তাঁর পিতা আদিনাথ। অমরজীবন নামে এক ব্যক্তি তাঁর জন্মের পূর্বে তাঁর বাড়িতে এসে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে তাদের বংশে এক তান্ত্রিকের জন্ম হবে এবং জন্মলগ্নে আকাশে নীল রঙের উল্কা দেখা যাবে। বলা বাহুল্য, ছেলেবেলা থেকেই সংসার কখনো তাকে আকর্ষণ করে নি। ঘর ছেড়ে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সেই ভ্রমণকালেই তিনি নানা দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা ও দৈবশক্তি প্রাপ্ত হোন। বর্তমানে তারানাথের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। হাত দেখা আর কোষ্ঠী বানানো দিয়ে কোনরকমে তার দিন কেটে যায়। প্রথম জীবনে সংসারী হতে না চাইলেও অবশেষে তাকে থিতু হতে হয়। তারানাথের জীবন অনাড়ম্বরভাবে কাটলেও মধুসুন্দরী দেবীর বর অনুযায়ী কোনদিন তাকে অর্থাভাবে কিংবা অনাহারে থাকতে হয় নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। গল্পে লেখক ও কিশোরী সেন তারনাথের ঘরে নিয়মিত পরিদর্শক। কখনও কখনও লেখক একাকী তারানাথের গল্প শুনতে এসে থাকেন।

 

writer–

 

Syed Yaseen

Intern, Content Writing Department

YSSE