তিমি মাছের নাম শুনলেই মাথায় আসে বৃহৎ এক জলজ প্রাণীর প্রতিচ্ছবি। মাছ বললেও প্রকৃতপক্ষে এটি স্তন্যপায়ী প্রাণী, তাই অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় এটি বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা রীতিমতো আপনাকে চমকে দিতে বাধ্য!”

তিমি সিটারিয়া বর্গের অন্তর্গত জলজ স্তন্যপায়ী যাদের ডলফিন বা শুশুক কোনোটির মধ্যেই পড়ে না। বিভিন্ন প্রজাতির তিমির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নীল তিমি, খুনে তিমি, পাইলট তিমি, বেলুগা তিমি, ফিন তিমি, গ্রে তিমি, হাম্পব্যাক তিমি। এরা ফুলকা নয়, বড় ফুসফুস দিয়ে শ্বাসকার্য চালায়। এদের মাঝে সবচেয়ে বড় নীল তিমি । পূর্ণবয়স্ক একটি নীল তিমি 82 থেকে 105 ফুট পর্যন্ত বড় হতে পারে, অর্থাৎ একটি বড় ডাইনোসরের দ্বিগুন। একটা বাস্কেটবলের কোর্টের মাপ হয় 90 ফুট। সেই অনুসারে, একটা নীল তিমিকে যদি বাস্কেটবল কোর্টের ওপর রাখা হয়, পুরো বাস্কেটবলের কোর্টটাই ঢাকা পড়ে যাবে সেটার নিচে। তাদের গড় আয়ু ৮০-৯০ বছর, এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বয়স্ক নীল তিমির বয়স ছিল ১১০ বছর।

তিমি বিশালাকার হলেও এদের খাবার কিন্তু ছোট ছোট চিংড়ি, যা ক্রিল নামে পরিচিত। এরা একসাথে ৪ কোটি ক্রিল খেতে পারে। 

তিমি মাছের ব্যাপারে চমৎকার একটি বিষয় হচ্ছে, এরা পরস্পরের সাথে এক ধরনের সুরেলা শব্দ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে, যা তিমির গান নামে পরিচিত। তিমির বিশালতা ও শক্তিমত্ততার মতোই এদের গানও অনেক জোরালো , যেমন- স্পার্ম তিমির গান মৃদু গুঞ্জনের মতো শোনায়, আবার সব শিকারী দাঁতযুক্ত তিমি শব্দ যোগাযোগ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, যা বহু মাইল দূর থেকেও শুনতে পাওয়া যায়। জানা গেছে,  তিমি ১৬৩ ডেসিবেল শব্দ, তীব্রতায় ২০,০০০ Acoustic watt এ শব্দ তৈরি করে। 

তিমি একবার ডাইভ দিয়ে সমুদ্রের পানির 3,000 মিটার গভীরে চলে যেতে পারে, এমনকি সেখানে একঘণ্টা শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করেও থাকতে পারে ৷ অন্য কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীই এত গভীর তলদেশে যেতে পারে না । আর এতক্ষণ ধরে শ্বাস বন্ধ রাখাটাও অন্য প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয় ৷ এর কারন হিসেবে জানা যায়, তিমি নাকি ডাইভ দেয়ার সময়ই মস্তিস্ক আর হৃৎপিণ্ডে রক্ত পাঠিয়ে দেয় ৷ 

জানা যায়, স্পার্ম হোয়েল নামে এক প্রজাতির তিমি মাছের বমি “অ্যাম্বারগ্রিস” যার এক কেজির দামই এক কোটি রুপি ! কিন্তু কেন এত দাম তিমির এই বমির? সুগন্ধি তৈরিতে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং সহজলভ্য না হওয়ার বাজারে অ্যাম্বারগ্রিসের এতো দাম বলে মনে করা হয়। একে Floating Gold বা ভাসমান সোনা ও বলা হয়। 

আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, মানুষের মস্তিস্কের আকারের পরই অবস্থান তিমি আর ডলফিনের মস্তিস্কের আকার৷ আর তাই তাদের বুদ্ধির পরিমাণও মানুষের কাছাকাছি৷ তাই তাদের বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নীল তিমি কখনও পুরোপুরি ঘুমায় না। তাদের মস্তিষ্কের অর্ধেক ঘুমায়, বাকি অর্ধেক জেগে থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও তারা শ্বাস নিতে পানির ওপরে ভেসে উঠতে পারে।

তিমি খুবই অনুভূতিসম্পন্ন  প্রাণী। এরা সর্বদা জোড়া বেঁধে চলে। সঙ্গীর মৃত্যু হলে তিমি যখন একা হয়ে যায় তখন সে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। এমন অনেক উদাহরণ আছে- ভারতের তামিলনাডুতে প্রায় একশো তিমি এসে আটকা পড়েছিল। জেলেরা রাতে অনেক কষ্টে ঠেলে সমুদ্রে পাঠালেও তারা সকালে এসে দেখে তীরে এসে মরে পরে আছে। নিউজিল্যান্ডে এক দিনে প্রায় তিনশো তিমি আত্নহত্যা করেছিল। সমুদ্রের তীরে উঠে এসেছিল, অনেক চেষ্টা করেও সমুদ্রে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

বিজ্ঞানীরা ধারনা করে, কোনো তিমি যদি তীরের বালুতে আটকে যায়, তখন সমুদ্রে একটি সিগনাল পাঠায়। তাকে বাঁচাতে তখন বাকী তিমিরাও এসে আটকে যায়। কোনোমতে সমুদ্রে পাঠানো সম্ভব হলেও সঙ্গীকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বারবার ফিরে আসে। এ ঘটনা থেকে একটা বিষয় শিখতে পারি- মানুষের মনে এক আর মুখে আরেক হলেও তিমিদের মধ্যে কোনো ছলনার মনোভাব নেই। কারন তারা সঙ্গীর জন্য যা করে, মন থেকে করে।

আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Writer,

Somaiya Afrin Eva Khondokar

Intern, Content Writing Department

YSSE