বর্তমান বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির কাঁধে ভর দিয়ে। প্রযুক্তি মানুষকে প্রতিনিয়ত চমক দেখাচ্ছে। উদ্ভাবন করছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশল। উপহার দিচ্ছে অবিশ্বাস্য সব ফিচার। আজ মানুষ বিশ্বাস করছে প্রযুক্তির কল্যাণে সকল অসাধ্য সাধন করা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। কেমন হয়! যদি দেখেন একজন মানুষ,যার অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে বহু আগেই বিলীন হয়ে গেছে। অথচ তার কোন স্থির চিত্র হাসছে, ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। কি! কেমন খটকা লাগছে তাই না?
অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এটি একটি চমকপ্রদ ফিচার যেটির নাম ”ডিপ নস্টালজিয়া “। জটিল অ্যালগরিদম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজনে তৈরি এই ফিচারটি ইতিমধ্যে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং-এ।
ডিপ নস্টালজিয়া: একটি ফিচার যা বিখ্যাত ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি “মাই হেরিটেজ ” তাদের সফটওয়্যারে চলতি মাসে যোগ করেছেন । এটি মূলত কোন স্থির চিত্রকে অ্যানিমেশন বা স্পেশাল এফেক্ট দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে। তবে এটি বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠেছে ঐ সকল মানুষের জন্য যারা পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই।
ফিচারটিতে যা যা রয়েছে :
ফেস অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে ছবির ব্যক্তির মুখমণ্ডল, গলা ঘাড়ের অংশে সীমাবদ্ধ রয়েছে । এক বা একাধিক ফিচার ব্যবহারের জন্য রয়েছে সাবস্ক্রিপশন প্ল্যান। এছাড়া রয়েছে ফটো এনহেন্সার। যেটি ব্যবহার করে চোখ ও মুখের নাড়াচাড়া, হাসি ইত্যাদি ফুটিয়ে তুলা যায়। কোন অস্পষ্ট ছবি কে হাই রিজুলিউশন বাড়িয়ে কমিয়ে স্পষ্ট করা যায়। রয়েছে যেকোনো সাদা কালার ছবিকে রঙিন করার সুবিধা।
কাজ করবে যেভাবে:
মাই হেরিটেজ এবং একটি ইসরায়েলি কোম্পানি যৌথভাবে তৈরি করেন ডিপ নস্টালজিয়া ফিচারটি। এতে ব্যবহার করা হয়েছে উচ্চতর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুলস্। এটি যে কোন পুরনো ছবিতে ফেসিয়াল অ্যানিমেশন যোগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে ছবি মুখমণ্ডল ভালোভাবে দৃশ্যমান হওয়া চাই । একটি মাত্র ছবিকে কেপচার করে ডিপ নস্টালজিয়া ফিচারটির ব্যবহার যে কোন প্রাণহীন ছবিকে সজীব করে তুলবে। দেখে যে কারোও মনে হতে পারে এটি একদম জীবন্ত।
পুরনো স্মৃতি ফিরে দেখার মাধ্যম:
অনেক সময় দেখা যায় কিছুসংখ্যক মানুষ অতীতে বিচরণ করতে পছন্দ করেন। পুরনো স্মৃতি, সাদা কালো ছবি, প্রিয় মানুষের মায়া ত্যাগ করতে পারেন না। তাদের জন্য এটি হতে পারে আদর্শ। আমাদের পূর্বপুরুষ যারা বহু আগেই মারা গেছেন,তাদের হয়তো পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের একটু চোখের পাতা নাড়াচাড়া, হাসিমাখা মুখ, মায়াবী চাহনি, ডানে বামে তাকানো দেখতে পাওয়াটা মন্দ নয়। বরং এই বিষয় গুলো একটু হলেও বাড়িয়ে দিতে পারে মনের প্রশান্তি।
এছাড়া আপনার পছন্দের কোন ঐতিহাসিক চরিত্র, বিজ্ঞানী,মনীষী,কবি সাহিত্যিদের সাদাকালো ছবি সরাসরি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখে নিতে পারবেন তাদের অভিব্যক্তি। তাছাড়া, অ্যানিমেশনটি ডাউনলোড করে শেয়ার করতে পারবেন বন্ধু বান্ধব ও সোশ্যাল মিডিয়ায়।
যেভাবে পাবেন ফিচারটি:
যেকোনো প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরে থেকে মাই হেরিটেজ ওয়েবসাইট থেকে অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। প্রথমে আপনাকে একটি এ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। যদিও ব্যবহারকারীরা এ্যাকাউন্টটি সম্পূর্ণভাবে ফ্রি তে খুলতে পারবেন। ফিল্টারটি ফ্রি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফেস অ্যানিমেশনে লিমিটেশন রয়েছে। তাছাড়া এক বা একাধিক ফেসে অ্যানিমেশন ব্যবহার করতে চাইলে নিতে হবে সাবস্ক্রিপশন।
ফিচার ব্যবহারে সতর্কতা:
চমৎকার এই ফিচারটি ব্যবহারে মেনে চলতে হবে কিছু সর্তকতা। বিনা অনুমতিতে কোন পাবলিক ফিগার, জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করা যাবে না।
তাছাড়া, ফিল্টারটি ব্যবহার করে অনেকে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। এক জনের পরিবর্তে অন্য জনের ফেস বসিয়ে অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ফিচারটি প্রস্তুত করা হয়েছে সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর সকল তথ্যই এতে সংরক্ষণের করা থাকে। তাই যেকোনো ফিচার ব্যবহারে সাবধান থাকতে হবে।
পরিশেষে, প্রযুক্তি হোক মানুষের নিত্য সঙ্গী। এর সঠিক ব্যবহার মানুষের চলার পথকে করুক সহজ। ক্ষনিকের জন্য মানুষকে পাইয়ে দিক হারানো প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য।
আরও ব্লগ পরতে এখানে ক্লিক করুন।
Writer,
Baitul Hikma
Intern, Content writing Department
YSSE