মানব সমাজে প্রযুক্তি হল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি আবশ্যিক ফলাফল।
প্রথাগত অফিসের বাইরে, ঘরে কিংবা কফিশপে বসেও যে দিব্যি কাজ করা যায়, তা এখন বাস্তব।ভবিষ্যতের কর্মজীবনে কি বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে? চাকরির ধারণ বদলে যাচ্ছে?
আমাদের কাজের ধরন বদলে দিচ্ছে প্রযুক্তি। মহামারি সে পরিবর্তনকে আরও বেগবান করেছে। মিটিংয়ের যে চিরায়ত ধারণা আমাদের মাথায় ছিল, সে ধারণা বদলে গেছে। কাজের আনুষ্ঠানিকতা আর আগের মতো নেই, প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কাছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ কথাটা এখন খুব পরিচিত।
বর্তমানে আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information and Communication Technology) গভীরভাবে জড়িত রয়েছে৷ আমরা আমাদের দৈনন্দিন প্রায় সকল কাজে প্রযুক্তি (Technology) র ব্যবহার করে থাকি ৷ প্রযুক্তি বা টেকনোলোজির ব্যবহার আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে ৷
পূর্বে যেখানে একটি কাজ সম্পন্ন করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হতো এবং অনেক সময় লেগে যেত এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই কাজ অনেক সহজে এবং খুব কম সময়ে সম্পন্ন করা যায়৷
দুনিয়াজুড়ে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আর এর সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, শিক্ষা, অর্থনীতি, প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন। আমাদের বাংলাদেশেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঢেউ লাগতে শুরু করেছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হচ্ছে, আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলমান উৎপাদন ও শিল্পব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয় সমসাময়িক সংস্করণ। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আলোচিত নানা বিষয়ের মধ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিষয়টি একটি অন্যতম অনুষজ্ঞ।
এ বিপ্লব রোবটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো টেকনোলজি, কোয়ান্টাম, কম্পিউটিং, ব্যায়োটেকনোলজি, ইন্টারনেট অব থিংস, থ্রিডি প্রিন্টিং, সম্পূর্ণ স্বচালিত যানবাহন ও উদীয়মান প্রযুক্তির যুগান্তকারী যুগ হিসেবে চিহ্নিত।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এখন বিশ্বের দ্বারপ্রান্তে। এর ভিত্তি হিসেবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন, বিপণন ও ভোগের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মানুষের চিন্তা জগতে পণ্য উৎপাদন ও সেবা প্রদানে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ও মানুষের জীবনধারাকে বদলে দিচ্ছে।
১৮ শতকের শেষার্ধে ইংল্যান্ডের যে শিল্প উৎপাদনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়, সেটি হচ্ছে শিল্প বিপ্লব। শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ড দেশটি বিশ্বের প্রথম শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়।১৭ শতাব্দীতে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে হস্তচালিত শিল্প ব্যবস্থাকে মেশিনচালিত পদ্ধতিতে রূপান্তরের মাধ্যমে প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল । এরপর ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয় , তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের পর এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চলছে।
অন্যদিকে প্রজক্তির ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে অনেক কাজের ধরন প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে –বিভিন্ন কারখানার বিপজ্জনক কাজগুলো মানুষের পরিবর্তে রোবট কিংবা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে । কর্মস্থলে কর্মীদের উপস্থিতির সময়কাল, তাদের বেতন, ভাতাদি ইত্যাদি হিসাব করার জন্য বেশ কিছু কর্মীর প্রয়োজন হয়। কিন্তুবর্তমানে স্বয়ংক্রিয় উপস্থিতি যন্ত্র, বেতন, ভাতাদি হিসাবের সফটওয়্যার ইত্যাদির ব্যবহারের মাধ্যমে এ সকল কাজ সম্পন্ন করা যায়। বিভিন্ন গুদামে মালামাল সুসজ্জিত করার কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়।
টেলিফোন এক্সচেঞ্জে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল ব্যবস্থার কারণে পৃথক জনবলের প্রয়োজন হয় স্বয়ংক্রিয় ইন্টারেকটিভ ভয়েস প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিন রাত যেকোনো সময় গ্রাহকের নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাব দেওয়া যায়।ব্যাংকের এটিএম এর মাধ্যমে যেকোনো সময় নগদ অর্থ তোলা যায়।
কম্পিউটারের সাহায্যে অনেক ধরনের কাজ ঘরে বসেই করা সম্ভব হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কাজে বিশেষ দক্ষতা না থাকলে যে কাজ সম্পন্ন করা যেত না, এরূপ অনেক কাজ কম্পিউটারের সহায়তা সহজে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। যেমন ফটোগ্রাফি (photography) বা ভিডিও এডিটিং (video editing)।
অনেকে ঘরে বসে কাজ করছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন ভার্চুয়াল (virtual) প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানে সহায়ক কর্মীর সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি তাদের কাজের ধরনও পাল্টে গেছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হওয়াতে কর্মীদের কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য নিজেকে ক্রমাগত দক্ষ করে তুলতে হয়। ফলে দক্ষতা উন্নয়নের কর্মসূচিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।তাই প্রযুক্তির এই বিশ্বে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সবসময় নিজেকে আপডেট রাখতে হবে।
To get more content, click here.
Written by
Dohal Islam
Intern, Content writing department
YSSE