আমরা অনেকেই প্রোক্র্যাস্টিনেশন শব্দের সাথে পরিচিত। আবার অনেকেরই এ বিষয়ে খুব একটা ধারণা নেই। ধারণা থাকুক বা না থাকুক দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রত্যেকেই এর সম্মুখীন হই। এ ব্লগে আমরা জানবো প্রোক্র্যাস্টিনেশন কী? কেনো হয়? এর ক্ষতিকর দিকসমূহ এবং কীভাবে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যেতে পারে।
প্রোক্র্যাস্টিনেশন কী?
সহজভাবে প্রোক্র্যাস্টিনেশন হলো যেকোনো কাজ কোনো কারণ ছাড়াই স্থগিত করা/পিছিয়ে দেওয়া। একটি উদাহরণের সাহায্যে খুব সহজে বুঝে নিতে পারি- ধরা যাক আমাদের একটা কাজ করার জন্য এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হল এবং প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা করে কাজ করলে এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ খুব ভালোভাবে শেষ হয়ে যাবে। তবে যারা প্রোক্র্যাস্টিনেটর, তারা প্রথম কয়েকদিন কাজ শুরু করবে না। তারা শেষ ২ দিন অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে শেষ ১ দিনে কাজ সম্পন্ন করে থাকে। এইযে, তারা সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে কাজ শুরু করতে চাইলেও কাজ শুরু করতে পারে নাই; কোনো একটি অদৃশ্য শক্তি তাদেরকে কাজ শুরু করতে দেই নাই- এটাই প্রোক্র্যাস্টিনেশন। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রায়শই দেখা যায় যে তারা এই ঘটনার সম্মুখীন হয় এবং তাদের পড়া জমতে থাকে। ফলে পরীক্ষার পূর্বে তাদেরকে যেনতেনভাবে প্রস্তুতি শেষ করতে হয় এবং তাদের পড়ার চাপ অনেক বেশি থাকে।
এ বিষয়ে টিম আরবান এর টেড-এক্সে একটি বিখ্যাত ভিডিও আছে। ভিডিওটি দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুণ। তিনি প্রোক্র্যাস্টিনেশন কে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি সিস্টেম দাড় করিয়েছেন। ওই সিস্টেম অনুযায়ী আমাদের মস্তিষ্কে তিনটি চরিত্র আছে-
1/ Rational Decision Maker, 2/ Instant Gratification Monkey, 3/ Panic Monster.
Rational Decision Maker: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের কী কাজ করা উচিৎ এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। অতীত-ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের জন্য কোন কাজটি ভালো হবে তা ঠিক করে। যেমন: একটা কাজের জন্য এক সপ্তাহ সময় থাকলে, আমরা জানি আমাদের প্রত্যেক দিন অল্প অল্প করে কিছু কাজ করা উচিৎ। এটা ‘Rational Decision Maker’ ঠিক করে।
Instant Gratification Monkey: এটি অতীত-ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে না। এটি আকর্ষণীয়/সবচেয়ে কম কষ্টকর কাজকে পছন্দ করে।
শিক্ষার্থী হিসেবে যদি আমাদের একটি অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেওয়া হয়, তবে অনেক সময় দেখা যায় আমরা অ্যাসাইনমেন্ট সময়মতো না করে অন্য অপ্রয়োজনীয় কাজ করি। Instant Gratification Monkey এর কাছে অ্যাসাইনমেন্ট আনন্দদায়ক লাগে না, তাই এটি অ্যাসাইনমেন্ট এর বদলে অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় কাজ করতে আমাদেরকে বাধ্য করে।
Panic Monster: Instant Gratification Monkey সভাবতই একটা কাজকে অনির্দিষ্টভাবে পেছাতে থাকে। তবে যখন ডেডলাইনের কাছাকাছি চলে আসে, তখন Panic Monster এর আবির্ভাব ঘটে। “Instant Gratification Monkey” “Panic Monster” কে ভয় পায়। তাই “Panic Monster” এর উপস্থিতিতে আমাদেরকে পুনরায় “Rational Decision Maker” নিয়ত্রন করে এবং একই কারণে আমরা অনেকে পরীক্ষার আগে খুব মনযোগ সহকারে পড়তে পারি।
এছাড়াও টিম আরবান, কাজের ভিত্তিতে প্রোক্র্যাস্টিনেশনকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন; ডেডলাইন ভিত্তিক কাজ, ডেডলাইন বিহীন কাজ।
কখন ও কেন আমরা প্রোক্র্যাস্টিনেট করি?
যেহেতু প্রোক্র্যাস্টিনেশন আমাদের খারাপ অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে তাই সকলের ক্ষেত্রে এর তীব্রতা একই রকম হয় না। যেসকল ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ আবেগ-অনুভূতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না কিংবা যাদের আত্মবিশ্বাস কম থাকে, তারাই প্রোক্র্যাস্টিনেশনের শিকার হয়ে থাকে। যদি আমাদের কোনো কাজ অপছন্দ হয়/ কঠিন লাগে তখন মস্তিষ্ক এটিকে হূমকি হিসেবে চিন্হিত করে এবং মস্তিষ্কের কষ্ট/বেদনা সম্পর্কিত অঞ্চলটি সক্রিয় হয়। এরপর আমাদের মস্তিষ্ক এই খারাপ অনুভূতি বন্ধ করার জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কাজে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করে। তাই প্রোক্র্যাস্টিনেটররা চাইলেও প্রয়োজনীয় কাজটি সম্পাদন করতে পারে না।
কীভাবে প্রোক্র্যাস্টিনেশন এড়ানো যায়?
প্রোক্র্যাস্টিনেট না করার জন্য কিছু উপায় অনুসরণ করা যাতে পারে-
১/লক্ষ্য নির্ধারণ করা।
২/ডেডলাইন ঠিক করা
৩/কোনো কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা
৪/কাজ সম্পন্ন করার পর নিজেকে পুরস্কৃত করা
৫/কাজের মাঝে বিশ্রাম নেওয়া
কোনো কাজ শুরু করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাজকে ভয় না পেয়ে, কঠিন না ভেবে কাজ শুরু করে দিতে হবে। সবশেষে এটিই বলতে হয় যে, প্রোক্র্যাস্টিনেশন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে।
HRIDAM ROSHAN PAUL
Intern, Content Writing Department
YSSE