সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ নিত্য-নতুন চিন্তা-ভাবনা এবং নতুন কিছু তৈরী করার নেশায় মত্ত ছিল। সেই নেশার রেশ ধরেই বর্তমান বিশ্ব এতো উন্নত, এত সমৃদ্ধ। মানব জাতির একটি বড় আবিষ্কার হলো ‘কম্পিউটার’। শুরুর দিকে এটি শুধু গননার কাজে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এর পরিধি কতোটা বিশাল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কম্পিউটারের বিবর্তনের পিছনে অনেক কিছুর হাত আছে তার মধ্যে ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামিং’ অন্যতম। প্রোগ্রামিং আজকের বিশ্বে একটি অত্যাবশ্যক দক্ষতা, এবং কীভাবে প্রোগ্রাম করতে হয় সহজ ভাষায় কিভাবে নিজের চিন্তাভাবনাকে কম্পিউটারের সাহায্যে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায় তা শেখা খুব গুরুত্বপুর্ন। যাইহোক, শুরু করা নতুনদের জন্য কঠিন হতে পারে। এই ব্লগে, আমরা কীভাবে প্রোগ্রামিং শুরু করা যেতে পারে সে সম্পর্কে ধাপে ধাপে আলোচনা করব।
ধাপ ১: একটি প্রোগ্রামিং ভাষা নির্বাচন করুন
প্রোগ্রামিং শুরু করার প্রথম ধাপ হল একটি প্রোগ্রামিং ভাষা নির্বাচন করা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে পৃথিবীতে অনেক ভাষার নাম তো জানি কিন্তু প্রোগ্রামিং ভাষা আবার কি! এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে আমরা হয়তো জেনে থাকব যে কম্পিউটার ০ এবং ১ (Low Level Language) ছাড়া আর কোনো কিছু বুঝতে পারে না। কিন্তু এই ০ এবং ১ দিয়ে ম্যানুয়ালি কম্পিউটারকে ইনপুট দিতে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে। এই সমস্যার সমাধান এর জন্যই প্রোগ্রামিং ভাষার উদ্ভব। এই ভাষার কাজ হচ্ছে এটি আপনার লেখা প্রোগ্রাম কে কম্পিউটার বোধগম্য ভাষায় রুপান্তর করে Compiler এর মাধ্যমে। এইসব নিয়ে পরের কোনো ব্লগে নাহয় লিখব। আসল কথা আসা যাক। বেছে নেওয়ার জন্য অনেকগুলি প্রোগ্রামিং ভাষা রয়েছে, প্রতিটির নিজস্ব শক্তিমত্তা এবং দুর্বলতা রয়েছে। এখানে আমি কিছু জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং সেগুলি সাধারণত কিসের জন্য ব্যবহৃত হয় তার একটা তালিকা দিচ্ছি:
পাইথন: পাইথন এমন একটি ভাষা যা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডেটা বিশ্লেষণ এবং মেশিন লার্নিংয়ের জন্য দুর্দান্ত।
জাভা: জাভা একটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ভাষা যা এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশন, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস এবং গেম তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
জাভাস্ক্রিপ্ট: জাভাস্ক্রিপ্ট একটি ভাষা যা ফ্রন্ট-এন্ড ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং ইন্টারেক্টিভ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
সুইফট: সুইফট হল iOS এবং macOS অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যবহৃত একটি ভাষা।
একটি প্রোগ্রামিং ভাষা নির্বাচন করার সময়, আপনার লক্ষ্য রাখতে হবে প্রোগ্রামিং দিয়ে আপনি কী অর্জন করতে চান। আপনার যদি হালকা অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে, পাইথন বা জাভা দিয়ে
শুরু করুন, কারণ তারা উভয়ই বহুমুখী এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত। কিন্তু আপনি যদি একদম বিগিনার লেভেলের হয়ে থাকেন তাহলে C/C++ দিয়ে শুরু করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ধাপ ২: ডেভেলপমেন্ট টুল ইনস্টল করুন
ধরে নিলাম আপনি একটা প্রোগ্রামিং ভাষা বেছে নিয়েছেন এখন পরবর্তী পদক্ষেপটি হল ডেভেলপমেন্ট টুলগুলি ইনস্টল করা যা আপনাকে কোড লিখতে এবং চালাতে হবে। এদের কাজ হচ্ছে High level language কে কম্পিউটার এর ভাষায় রুপান্তর করা। প্রতিটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের নিজস্ব ডেভেলপমেন্ট টুলের সেট রয়েছে, তবে এখানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কিছু রয়েছে:
ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এনভায়রনমেন্ট (IDE): একটি IDE হল একটি সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন যা কোড লেখা, যাচাইকরন এবং ডিবাগ করার জন্য একটি ব্যাপক পরিবেশ প্রদান করে। উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে C/C++ এর জন্য Codeblocks, C# এবং জাভার জন্য Visual Studio, পাইথনের জন্য PyCharm এবং সুইফটের জন্য Xcode।
টেক্সট এডিটর: টেক্সট এডিটর হল কোড এডিট করার জন্য একটি টুল। উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে সাব্লাইম টেক্সট, এটম এবং নোটপ্যাড++। এই টুলের মাধ্যমে আপনি আপনার কোড লিখবেন।
কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস (CLI): একটি CLI হল কমান্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করার একটি টুল। এটি সাধারণত কোড চালানো এবং ফাইল পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে উইন্ডোজের জন্য কমান্ড প্রম্পট এবং ম্যাকওএস এবং লিনাক্সের জন্য টার্মিনাল।
সাধারনত একটা প্রোগ্রামকে লিখে সেটা রান করার জন্য এই টুলগুলো ব্যবহৃত হয়।
ধাপ ৩: প্রোগ্রামিং এর বেসিক শিখুন
আপনি কোড লেখা শুরু করার আগে, প্রোগ্রামিংয়ের মূল বিষয়গুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে ভেরিয়েবল, ডেটা টাইপ, কন্ট্রোল স্ট্রাকচার এবং ফাংশনের মত ধারণা। মনে রাখবেন একজন যত বেশি এই বিষয়গুলোর উপর দক্ষ হতে পারবে সে তত ভালো প্রোগ্রামার হয়ে উঠতে পারবে। আপনাকে শিখতে সাহায্য করার জন্য এখানে কিছু উপায় রয়েছে:
অনলাইন টিউটোরিয়াল: বর্তমান যুগে কিছু শেখার ক্ষেত্রে অনলাইনের উপর কিছু নাই। অনেকগুলি বিনামূল্যের অনলাইন টিউটোরিয়াল রয়েছে যা প্রোগ্রামিংয়ের মূল বিষয়গুলিকে কভার করে। উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে Codecademy, Khan academy এবং Udacity। আপনি গুগলে জাস্ট কীওয়ার্ড টাইপ করে এই ওয়েবসাইটগুলো একসেস করতে পারবেন।
ভিডিও কোর্স: আপনি যদি ভিডিও দেখার মাধ্যমে শিখতে চান সেক্ষেত্রে প্রোগ্রামিংয়ের মূল বিষয়গুলি কভার করে এমন অনেক ভিডিও কোর্স অনলাইনে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে YouTube, Udemy, Coursera, এবং edX।
বই: প্রোগ্রামিংয়ের মূল বিষয়গুলি কভার করে এমন অনেক বই পাওয়া যায়। এছাড়াও অনলাইনে প্রোগ্রামিং এর অনেক ডকুমেন্টেশন পাওয়া যায় যা খুবই উপযোগী ও সময় সাশ্রয়ী।
আপনার শেখার শৈলীর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় আপনি বেছে নিন।
ধাপ ৪: আপনার প্রথম প্রোগ্রাম লিখুন
এই পর্যায়ে এসে আপনি প্রোগ্রামিং এর মূল বিষয়গুলি শিখে গেলেন এইবার কোডিং শুরু করার সময়। একটি সাধারণ প্রোগ্রাম দিয়ে শুরু করুন যা স্ক্রিনে প্রিন্ট করে “Hello World!”. আপনার Codeblocks ওপেন করুন এবং নতুন একটি ফাইল খুলুন কীবোর্ডের ctrl + n দিয়ে এবং সেভ করুন ctrl + s দিয়ে। ফাইল নেম অবশ্যই .c (myCode.c) দিয়ে সেভ করবেন। এখন নিচের কোডটি লিখুনঃ
#include <stdio.h>
int main() {
printf(“Hello World!”) ; // print Hello World on console
return 0 ;
}
ভয় পাওয়ার কিছু নেই আপনি যদি ধাপ ৩ সম্পন্ন করে থাকেন তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন এখানে কি হয়েছে। Codeblocks এর রান অপশনে ক্লিক করে প্রোগ্রামটি চালু করুন এবং অভিনন্দন আপনার প্রথম প্রোগ্রাম সফল ভাবে রান করতে সক্ষম হয়েছেন। এইভাবে আপনি আরও অনেক কিছুই করতে পারেন। নিজের নাম প্রিন্ট করা, সংখ্যা নিয়ে খেলা করা যেমনঃ যোগ, বিয়োগ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা।
ধাপ ৫: একটি প্রোগ্রামিং সম্প্রদায়ে যোগ দিন
সর্বশেষ ধাপ। আপনি প্রোগ্রামিং এর একটি বেসিক ধারনা পেয়ে গেছেন এখন শেখার সাথে সাথে একটি প্রোগ্রামিং সম্প্রদায়ে যোগদান করার মাধ্যমে আপনি আপনার জ্ঞান আরও বাড়াতে পারবেন এবং কে কি করছে সেটাও পর্যবেক্ষন করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের ফেসবুক গ্রুপ, StackOverflow, GeekForGeeks, W3school এইসব জনপ্রিয় সব ফোরামে আপনি যোগদান করতে পারেন।
পরিশেষে প্রোগ্রামিং শুরু করা প্রথম প্রথম ভীতিকর হতে পারে, তবে এটি একটি পরিপূর্ণ ক্যারিয়ারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সঠিক অধ্যবসায়ের সাথে, আপনি একজন দক্ষ প্রোগ্রামার হয়ে উঠতে পারেন এবং অন্তহীন সম্ভাবনাগুলো নিজের দক্ষতার সাথে একসেস করতে পারেন।
Writer:
Dip Saha
Intern, Content Writing Department
YSSE