প্লাস্টিক প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। প্লাস্টিক পণ্যের একটা বড় অংশ প্লাস্টিক ব্যাগ যা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিই। এরপর তা সরাসরি পরিবেশে মিশে যায় এবং মারাত্মক দূষণ ঘটিয়ে থাকে। ক্রমেই এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এ থেকে বাঁচার জন্য বিকল্প খুঁজছে সারা বিশ্ব। চলছে গবেষণা। ফল স্বরূপ বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের মতো সম্ভাবনাময় বিকল্পের উদ্ভাবন হয়েছে।
প্রতিবছর ৩রা জুলাই আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস পালন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্যই জনসচেতনতা বৃদ্ধি। অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশেও এই দিবস পালিত হয়। পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি ভারত সহ অনেক দেশ প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার থেকে সরে আসছে। যা খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।
২০১০ সাল থেকেই এটি পালিত হয়ে আসছে। “Bag Free World” নামক সংগঠন সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল দিবসটি পালনের। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করে পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করা এবং জনসচেতনতা বাড়ানো। এর ফলে ২০১০ সালে Bag Free World বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায়। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৫ সালে এগিয়ে আসে। তারা বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে উক্ত আন্দোলনের সমর্থন জানায়।Bag Free World মানুষকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলো যে, প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
এখন দেখা যাক, প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার উপায় আছে কি না। প্রথম বাধা হিসেবে বলা যায়, প্লাস্টিক ব্যাগ আমাদের জীবনে একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এটি থেকে বের হয়ে আসার একটি ভালো উপায় হচ্ছে পাটের ব্যাগের ব্যবহার। প্লাস্টিক ব্যাগের মতো এটি দীর্ঘ দিন মাটিতে জমে থাকবে না। কয়েক মাসের মধ্যেই এটি মাটিতে মিশে যাবে। এতে করে একদিকে যেমন দূষণের হাত থেকে মুক্তি মিলছে, তার সাথে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরেকটি ভালো বিকল্প হতে পারে কাগজের ব্যাগ। এটি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে তৈরি করা যায় এবং অনুজীব দ্বারা মাটিতে মিশে যেতে পারে। এর রিসাইকেল করাও সহজ।
কাঁচ ও অ্যালুমিনিয়াম এর মতো কিছু ধাতু প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন বায়োডিগ্রেডেবল–প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক রেজিনের ব্যবহারকে পেট্রোলিয়াম নির্ভর প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। আজকাল চশমার ফ্রেমের প্লাস্টিকের বদলে উদ্ভিজ্জ সেলুলোজ দ্বারা তৈরিকৃত ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হচ্ছে।
এত সম্ভাবনাময় বিকল্প থাকা সত্ত্বেও প্লাস্টিক থেকে সরে আসা আমাদের জন্য কঠিন হবে। কারণ প্লাস্টিককে যতটা হালকা, ঘাতসহনীয় এবং বহনযোগ্য হিসেবে তৈরি করা হয়, এর বিকল্পগুলোকে আমরা সেভাবে উৎপাদন করতে পারবো কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে প্লাস্টিকের যে বিশাল ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে সেটিকে টেক্কা দেওয়ার মতো অবকাঠামো তৈরি করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। রাতারাতি এটি করে ফেলাও অসম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন হবে প্রচুর গবেষণা ও অর্থায়ন। প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যগুলো পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হবে। যদি এটি সুক্ষ্ণভাবে সম্পন্ন করা না যায় তাহলে এটিও একটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বর্তমান বিশ্বঅর্থনীতিতে প্লাস্টিক পণ্যের একটি বড় ভূমিকা আছে। যেসকল শ্রমিক এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন তাদের দিকটাও সমানতালে ভাবতে হবে। হঠাৎ যদি প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিতে আঘাত আসে তাহলে অনেক শ্রমিক কর্মস্থানচ্যূত হবেন। তাছাড়া প্লাস্টিক অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে গত কয়েক দশকে জনসাধারণের কাছ থেকে। গ্রাহকের চাহিদাকে প্লাস্টিক থেকে ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে আসা সহজসাধ্য নয়। এর বিকল্প পণ্যগুলোকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে অনেক সময়ের দরকার। এর জন্যও দরকার প্রচুর অর্থায়ন ও গবেষণা। এছাড়াও প্রয়োজন সচেতনতা ও আগ্রহ। কিন্তু যে সাশ্রয়ী মূল্যে আমরা প্লাস্টিক পণ্যগুলোকে হাতের নাগালে পেয়ে যাই, প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের ক্ষেত্রে সে পর্যায়ে আসা অতটাও সহজ হবে না। তাই অর্থায়নে আগ্রহীদের সংখ্যাও কম।
যদিও এটি মনে হতে পারে যে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব নিরসনে এর বিকল্পগুলো অনেক এগিয়ে থাকবে, তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই মুহূর্তে প্লাস্টিকের বিকল্পকে রাতারাতি সবার নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা দুঃসাধ্য সাধনের সমতুল্য। এই অসাধ্য সাধনের জন্য শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। অবশ্যই বিশ্বনেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সরকারের এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা পৌঁছাতে হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। তবেই বাস্তবায়ন হবে প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন। যৌক্তিকতা পাবে প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবীর প্রত্যাশা। নাহলে হয়ত প্লাস্টিক দূষণের শিকার হয়ে একে একে নিভে যেতে থাকবে দীপ্তিময় প্রাকৃতিক পরিবেশের অপার সৌন্দর্যসমূহ ।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন।
লেখক :
মোঃ রাকিব রায়হান
ইন্টার্ণ, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,
YSSE