কিছু বদভ্যাস যা আমরা অজান্তেই লালন করছি
মানুষ অভ্যাসের দাস। ভালো এবং খারাপ এই দুই ক্যাটাগরিতে আমরা আমাদের অভ্যাস গুলো কে ফেলতে পারি। ভালো অভ্যাস যা আমরা অনেকেই জন্মগত ভাবে পেয়ে থাকি তবে কিছু অভ্যাস যা আমাদের মধ্যে না থাকলে আমাদের তা চেষ্টার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয়। ভালো অভ্যাস যেমন সুনাম বয়ে আনে তেমনি খারাপ অভ্যাসের কারণে পরতে হয় নানা বিরম্বনায়।
আমরা অনেকেই হয়তো জানি না আমাদের একান্ত কিছু মন্দ অভ্যাস যা আমরা প্রতিনিয়ত জনসম্মুখে করে যাচ্ছি। কেউ হয়তো কিছু বলছেন না ভদ্রতার খাতিরে তবে মনে মনে অনেক মন্দ ধারনা পুষে রাখবেন। যা আপনি জানছেন না।
তাই এরকম কিছু অজানা মন্দ অভ্যাস সম্পর্কে জানতে পড়তে হবে সম্পূর্ণ লিখাটি।
১. নখ কামড়ানো
আমরা অনেকের মাঝেই এই একটি অভ্যাস থাকে। নখ কামড়ানোর বদভ্যাস। ছুটো বাচ্চাদের বেলায় এই অভ্যাস একটু বেশী দেখা যায়। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমরা অনেকেই এই বাজে অভ্যাস ত্যাগ করতে পারি। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের বেলায় এটি রয়ে যায়। যার জন্য পরবর্তীতে ভদ্র সমাজে আমাদের মানুষের হাসির খোরাক হতে হয়। নখ কামড়ানো দেখতে যতটা অশোভনীয় লাগে এটি ঠিক ততটাই নোংরা কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা আমাদের হাতে থাকে অসংখ জীবাণু যা নখ মুখে দেওয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই আমাদের দেহে প্রবেশ করে। তাছাড়া মুখের লালা লেগে হাতে করা দুর্গন্ধ যে কারো নিকট খুব অস্বস্তির কারণ হয়ে দাড়ায়।
২. পা নাড়ানো
ধরুন কোথাও আপনি কিছু মানুষের সাথে একত্রে বসে আছেন। বসে থেকে আপনার হঠাৎ মনে হল ভুমিকম্প হচ্ছে নাকি? কিন্তু আশপাশের মানুষের তো কোন ভাবোদয় হচ্ছে না। তাহলে হচ্ছে টা কি! আর কিছুই না আপনি একটু আপনার পাশে বসা মানুষটার পায়ের দিকে খেয়াল করুন। দেখবেন তিনিই এমন ভাবে পা কাপাচ্ছেন যা আপনার নিকট ভুমিকম্প মনে হয়েছিল। তখন নিশ্চয় খুব খারাপ লাগবে আপনার। কিন্তু কিছু একটা বলি বলি করেও আর বললেন না।
৩. পা দুলানো
পা নাড়ানোর মতই একটি বাজে অভ্যাস হল পা দুলানো। আপনি নিজের বাসায় খুব আয়েশী ভঙ্গিতে বসে গান শুনছেন কিংবা বসে বসে খুব ভালো কিছু মুহুূর্ত মনে করছেন তখন আপনার পা দুটো দুলাতেই পারেন। এতে খারাপ কিছু নেই। তবে অফিসে কিংবা জরুরী কোন মিটিং, ইভেন্টে একগাদা মানুষের সঙ্গে বসে যখন সবার সামনে পা দুটো দুলানো হয় তা খুবই দৃষ্টিকটু। আমরা অনেকেই এই কাজটা নিজের অজান্তে করে ফেলি।
৪. হাত/পায়ের আঙ্গুল ফুটানো
ঘুম থেকে উঠেই আমাদের আড়মোড়া দেওয়ার অভ্যাস রয়েছে। সাথে ঠাস ঠাস করে হাত পায়ের আঙ্গুলগুলি ফুটালে এক তৃপ্তি পাওয়া যায়। তবে তা যদি ঘর ছেড়ে কোনো পাবলিক জায়গায় আমরা করে বসি তখন তা অনেক ক্ষেত্রেই অভদ্র বলে মনে করা হয়। এই ঠাস ঠাস শব্দ যে কারও কাজের মনযোগের বারোটা বাজিয়ে দেয়।
৫. কথা বলার সময় আঙ্গুল দিয়ে নাখের ময়লা পরিষ্কার করা
সবচেয়ে নোংরা, অশোভনীয় হিসেবে যেই অভ্যাস টিকে মনে করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হল যখন তখন নাকে হাত দেওয়া। এই অভ্যাস যার আছে সেই কিন্তু টেরই পায় না যে সে কখন কার সামনে এটা করছে। কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কিন্তু সে অনায়াসে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নাক চুলকাতে লেগে গেল। হয়ত অফিসের বসের সঙ্গেই কথা বলছে কিন্তু ফাকে ফাকে এই কাজটাও সেরে ফেলছে। এতে করে সামনে থাকা মানুষটি খুবই বিরক্তি বোধ করেন। নিজেকেও তখন দেখতে খুব বিশ্রী লাগে। অনেকেই এটি করে থাকেন কেননা এতে তিনি আরাম পান, কে কি ভাবলো তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না।
৬. জুতা ঘষিয়ে ঘষিয়ে শব্দ করে হাঁটা
আমরা অনেকেই হাটার সময় খুব শব্দ করে হাটি। শব্দটা হয় আমাদের জুতা ফ্লোরে ঘষিয়ে ঘষিয়ে হাঁটার ফলে। এটা খুবই অমানান একটি কাজ। এই অভ্যাসের কারণে অনেকেই বন্ধু মহল কিংবা কলিগদের নিকট ক্ষ্যাত বলে আখ্যায়িত হন।
৭. শব্দ করে চা পান করা
চা পান করা আমাদের নিত্যদিনের রুটিনের মধ্যেই পরে। যেখানেই থাকি না কেন চায়ের ব্যবস্থা আমরা করেই থাকি। চা পানের ক্ষেত্রে কারও কারও যে বিটকেলে অভ্যাস আছে তা হলো ছুত ছুত শব্দ করে তবেই চা পান করা! কিন্তু এটি যে একটি বাজে স্বভাব তা অনেকেই মানেন না। বলেন চা পান করব আর শব্দ হবে না? কিন্তু সত্য কথা হল চা পান করতে হয় বিনা শব্দে আর এটি আমাদের জন্য মঙ্গল জনক। এতে করে মেহমানদের সামনে বা অফিস কলিগদের সামনে লজ্জায় পড়তে হবে না।
৮. হাত দিয়ে না ঢেকে হাই তোলা, হাঁচি কাশি দেওয়া
আপনি কারও সঙ্গে খুব জরুরী বিষয়ে কথা বলছেন। তিনি হঠাৎ ইয়া বড় একটা হা করে মুখের ভিতরের সব কটা দাঁত দেখিয়ে একটা হাই তুললেন। আবার সামনা সামনি বসে কিছু একটা করছেন তখন হাত দিয়ে না ঢেকেই তিনি হাঁচি দিয়ে দিলেন। এতে তিনি যতই প্রশান্তি পান না কেন আপনি ঘেন্নায় কি করবেন তাই বুঝতেছেন না।
৯. জোড়ে শব্দ করে ঢেকুর তোলা
খাবার শেষে আমরা সবাই তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। এটা একেবারেই স্বাভাবিক। তবে কেউ যদি খেয়েই খুব শব্দ করে ঢেকুর তুলেন এটা দেখতে এবং শুনতে খুবই বেমানান লাগে। আর যদি কারও বাসায় দাওয়াত খেয়ে অথবা বিয়ে বাড়িতেই খেয়ে এরকম ঢেকুর তুলা হয় ভদ্র সমাজে এটা খুব চোখে পরে।
আমরা অনেকেই জেনে কিংবা না জেনে উপরে বর্নিত বাজে অভ্যাসগুলি লালন করে থাকি। যা একজন মানুষের ব্যাক্তিত্বকে ফুটে তুলে। তাই আমরা চেষ্টা করব একটা একটা করে সকল বাজে অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে এখানেysseglobal.org/blog/author/ysseblog ক্লিক করুন
লেখিকা-
রুবাইয়া বেগম
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট