ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টিকর্তার পক্ষথেকে মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় দান। 

পৃথিবীতে যতো বিস্ময়কর ও অকল্পনীয় জিনিস মানুষের দ্বারা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তার সবই  প্রখর বুদ্ধিমত্তার সফল প্রয়োগ । ঐতিহ্যগতভাবে মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা: ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স এবং ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স। যা ১৯৬৩ সালে মনোবিজ্ঞানী Raymond Cattle তার সাইকোমেট্রিক তত্ত্বে উত্থাপন করেন।  

 

চলুন তবে এই দুই প্রকার বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক —

 

 ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স (তরল বুদ্ধিমত্তা)  কি?

 

সাধারণতভাবে বলতে গেলে তরল বা প্রবাহমান বুদ্ধিমান বলতে স্বাধীনভাবে কোন কিছু চিন্তা করে সেই অনুযায়ী সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতাকে বুঝার। 

অর্থাৎ, কোন বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং সঞ্চিত জ্ঞানের পরিবর্তে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতাকে ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স বলে। এ ধরণের বুদ্ধিমত্তা সৃজনশীল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যারা নতুন নতুন উপায়ে সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসী। 

 

ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স (স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা)? 

 ক্রিস্টালাইজড বুদ্ধিমত্তা, পূর্ব অভিজ্ঞতা ও অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ। সহজভাবে  বলতে গেলে, আমরা এতোদিন  যে তথ্য, উপাত্ত ও সমস্যা সমাধান পদ্ধতি শিখেছি তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কোন সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা।  এটি সেসব লোকদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যারা নিজেদের পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে আগ্রহী ।

 

ফ্লুইড ও ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্সের মধ্যে পার্থক্য

তরল ও স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা মানবজীবনে সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজন। বিভিন্নক্ষেত্রে এদের মধ্যে যেমন মিল রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু পার্থক্যও রয়েছে। তবে সবচেয়ে সুস্পষ্ট পার্থক্য হল : ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স তরল। যেটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পরিস্থতিতে খাপখাইয়ে নিতে পারে। অন্যদিকে ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স অপেক্ষাকৃত স্থির। 

 

কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ 

অনেকের মনে একটি প্রশ্ন থাকতে পারে ; ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স ও ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স মধ্যে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি নির্ভর করে উদ্ভূত পরিস্থিতির উপর। অপেক্ষাকৃত জটিল ও কঠিন পরিস্থিতিতে যখন পূর্ব জ্ঞান ও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা জানা থাকে না তখন ব্যাক্তির তরল বুদ্ধিমত্তা খুবই কার্যকরী।  

 

অনেক বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স চেয়ে মূল্যবান। কেননা এতে নতুন নতুন দক্ষতার অর্জনের সুযোগ রয়েছে। 

 

আবার, বর্তমানে প্রবলেম সলভিং একটি অপরিহার্য স্কিল। যার যতো কম সময়ে দ্রুত  সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা বেশি তার ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স এর মাত্রও বেশি। তাই ইন্জিনিয়ারিং, টেকনোলজি, মেডিসিন ও ফাইন্যান্স সেক্টরে এ ধরনের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বেশি। 

অপরদিকে, ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কম সময়ে সমস্যা সমাধানে দারুণ ভূমিকা পালন করে। 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় :আপনি হয়তো কোন পরিক্ষা দিতে বসেছেন। এসময় পূর্ব অভিজ্ঞতা ও সঞ্চিত জ্ঞান ভান্ডার আপনাকে সঠিক উত্তর প্রদান করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া, যেকোনো ভারি যন্ত্রপাতি চালাতে তাৎক্ষণিক জ্ঞানের চেয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা জরুরি। 

 

ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়। 

 

আমরা সকলেই জানি, প্রত্যেকটা মানুষ একজন অন্যজন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। 

আলাদা তাদের চিন্তা করা,মনে রাখা ও কৌশল প্রয়োগ। তাই তরল বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে কিছু টিপস্ খুবই কার্যকরী। যেমন-

 

১) যেকোন কঠিন কাজের  চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার অভ্যাস করা। 

২) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এমন কাজ বা ডিভাইস ব্যবহার করা। 

৩) নিয়মিত ব্রেইন ট্রেইনিং গেমসে অনুশীলন করা। 

৪)  প্রতিদিন একটি নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হওয়া।

৫) যেকোন নতুন বিষয়ে আপনার ধারণা ও কৌশল গুলো লিখে রাখা। 

৬) পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।  

 

ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স কিভাবে বৃদ্ধিকরা যায়– 

এধরণের বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করতে যে কাজগুলো করা যায় তা হল :

১) প্রতিদিন কোন না কোন নতুন বিষয়ে নিজেকে সংযুক্ত রাখা।  যা আপনাকে গভীরভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করবে। 

২) বই, উপন্যাস, সাহিত্য রচনা পাঠ করা। 

৩) Puzzle game, mind game, mental math ইত্যাদি অনুশীলন করা। 

৪)  যথাসম্ভব চারপাশের পরিবেশ থেকে জ্ঞান আহরণ করা। 

৫) নিজেকে এক্টিভ রাখা। 

৬)  পূর্বে শেখা কোন বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করা বা পূনরায় অনুশীলন করা ইত্যাদি। 

 

পরিশেষে,  ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স এবং ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স উভয়ই সমান ভাবে কার্যকরী। আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজন শুধু সঠিক অনুশীলন। তবে আমাদের জানাতে ভুলবেন না, আপনার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বেশি। 

 

 

Writer 

Baitul Hikma 

Intern, Content Writing Department 

YSSE.