বিশ্বায়নের এই যুগে, উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি অনেক শিক্ষার্থীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশে পড়াশোনা কেবল নতুন শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনই নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা লাভ, বিভিন্ন সংস্কৃতি জানার সুযোগ এবং একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করারও সুযোগ তৈরি করে। তবে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন, যেমন CGPA, খরচ, জীবনযাত্রার মান, এবং ভবিষ্যতের চাকরির সুযোগ। আজকের এই ব্লগে আমরা বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু দিক তুলে ধরবো।
যুক্তরাষ্ট্র (USA)
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষাদানকারী দেশ এবং এখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার জন্য বৈশ্বিক শিক্ষার্থীদের একটি বড় প্রবণতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত এবং দেশটির প্রায় ৪,০০০ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার খরচ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটু বেশি হতে পারে, বিশেষ করে যারা ভালো CGPA ছাড়াও উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিংয়ে ইউনিভার্সিটি অফ হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে রয়েছে। সেখানকার শিক্ষার মান, গবেষণার সুযোগ, আধুনিক ক্যাম্পাস সুবিধা এবং উন্নত প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের জন্য অতি আকর্ষণীয়। তবে, যদি আপনার CGPA তুলনামূলকভাবে কম হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ এবং ফিনান্সিয়াল এড সুবিধার মাধ্যমে আপনি সহজেই অর্থনৈতিক সহায়তা পেতে পারেন। তবে, এখানে জীবনযাত্রার খরচ খুবই বেশি, বিশেষত নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলস, বা সান ফ্রান্সিসকো শহরগুলোতে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যে বাজেট নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে চান, তা যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে সামলানো কঠিন হতে পারে।
স্টিফেন হকিং বলেছেন, “The greatest enemy of knowledge is not ignorance, it is the illusion of knowledge,” যা বিদেশে পড়াশোনা করার সময় শিক্ষার্থীদের মনোভাবকে শিখিয়ে দেয় যে, তারা সব কিছু জানে না, তাদের আরও শিখতে হবে এবং উন্নতির পথে থাকতে হবে।
যুক্তরাজ্য (UK)
যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা ব্যবস্থা থাকার কারণে বিদেশে শিক্ষার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে অসংখ্য বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেমন অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস এবং আরও অনেকগুলি।
যুক্তরাজ্যে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম সাধারণত এক বছর এবং স্নাতক কোর্স তিন বছর থাকে, যা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুবিধা। এতে খরচ কম হয়, কারণ পড়াশোনার সময়ও কম লাগে। তবে, যুক্তরাজ্যে শিক্ষার খরচ যথেষ্ট বেশি এবং জীবনযাত্রার খরচও অনেক, বিশেষত লন্ডন শহরে।
এখানে যাদের CGPA তুলনামূলকভাবে কম, তাদের জন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। কিন্তু, উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে ভালো একাডেমিক রেকর্ড থাকা প্রয়োজন।
বিল গেটস বলেছেন, “Don’t compare yourself with anyone in this world. If you do so, you are insulting yourself,” যা বিদেশে পড়াশোনা করার সময় শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং নিজস্ব পথ অনুসরণের আহ্বান জানায়।
কানাডা
কানাডা বর্তমানে বিশ্বে অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা গন্তব্য হিসেবে পরিচিত। এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ফি নেওয়া হতে পারে। কানাডা সারা বিশ্বের মধ্যে উদ্ভাবনী শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য খ্যাত। কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি রয়েছে।
কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক এবং এটি কম খরচে ভালো মানের শিক্ষা দেওয়ার জন্য পরিচিত। জীবনযাত্রার খরচও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম। বিশেষ করে, টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, এবং ভ্যাঙ্কুভার শহরে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভাড়া এবং অন্যান্য খরচের জন্য সহজেই বাজেট তৈরি করতে পারেন।
যারা উচ্চমানের শিক্ষা চান, কম খরচে এবং ভালো জীবনযাত্রা চান, তাদের জন্য কানাডা একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
জাস্টিন ট্রুডো, কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “A country’s greatness lies in its ability to welcome and embrace people from different cultures,” যা কানাডার বৈচিত্র্যময় সমাজ এবং শিক্ষার মাধ্যমে সত্য প্রমাণিত।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় গন্তব্য। এই দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে উচ্চ স্থান অধিকার করে এবং এখানে গবেষণার সুযোগ অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি, ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন ইত্যাদি বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করে থাকে।
এখানে জীবনযাত্রার খরচ যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের তুলনায় কম, তবে তুলনামূলকভাবে সস্তা শহর যেমন ব্রিসবেন, সিডনি বা মেলবোর্নে খরচ সামলানো সম্ভব। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে, যা তাদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে এবং কিছুটা আয়ও করে দেয়।
ডেভিড অ্যাটেনবুরা বলেছেন, “The natural world is the most important thing we have, and we must do everything we can to protect it,” যা অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশের সৌন্দর্য এবং সেখানে পড়াশোনার সময় শেখার প্রাসঙ্গিকতা নির্দেশ করে।
জার্মানি
যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য কম খরচে এবং উচ্চমানের শিক্ষা চান, তাদের জন্য জার্মানি একটি অসাধারণ গন্তব্য। এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ফি নেওয়া হতে পারে। জার্মানি সারা বিশ্বের মধ্যে উদ্ভাবনী শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য খ্যাত। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন, এবং টেকনোলজি নিয়ে অসংখ্য প্রোগ্রাম উপলব্ধ।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য জার্মানি একটি আদর্শ দেশ হতে পারে, যেহেতু এখানকার শিক্ষার খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ব্যাপক। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, “Education is not the learning of facts, but the training of the mind to think,” যা জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি এক অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য এবং আর্থিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক দেশ বেছে নিন এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করুন।
এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন
লেখক,
মোঃ নাহিয়ান ছাদিক
ইন্টার্ন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE