আপনি কি সমগ্র বিশ্বের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, কলা, বিজ্ঞানের সকল অবদান সম্পর্কে সহজেই জানতে চান? এই সকল জ্ঞান একই ছাদের নিচে পাওয়া যাবে একমাত্র একটি জায়গায়, সেটি হলো লাইব্রেরী বা গ্রন্থাগার। লাইব্রেরী হলো এমন এক জ্ঞানের ভাণ্ডার, যেখানে জানতে পারা যাবে সকল প্রশ্নের উত্তর। 

জ্ঞান-পিপাসু এবং গ্রন্থ কীটদের জন্য লাইব্রেরিতে বলতে গেলে এক প্রকার স্থায়ী নিবাসের মতো, যেখানে তারা তাদের মনের আনন্দে জ্ঞানের সাগরে ভাসতে পারে। বলা হয়ে থাকে একটি জাতি গড়ে তোলার জন্যে লাইব্রেরীর যতটুকু অবদান রয়েছে, ঠিক একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যে লাইব্রেরীর বইগুলো ধ্বংস করাই যথেষ্ট। 

লাইব্রেরি নিয়ে নাহয় অনেক কথাই হলো। তবে আমরা কী জানি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার কোনটি? কেমন দেখতে সেই গ্রন্থাগার আর কী পরিমাণ জ্ঞানের ভান্ডার রয়েছে সেই বৃহদায়তনের গ্রন্থাগারে? এসব নিয়েই আজকের ব্লগ যা লিখা হয়েছে “লাইব্রেরি অব কংগ্রেস” নিয়ে, যেটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার হিসেবে সমগ্র বিশ্বে পরিচিত।

লাইব্রেরী অব কংগ্রেস আমেরিকার জাতীয় গ্রন্থাগার। একই সাথে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো ফেডারেল কালচারাল ইনস্টিটিউশন। লাইব্রেরিটি আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত। এই লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাকাল ১৮০০ সালে। প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস যখন সরকারি কার‌্যাবলি ফিলাডেলফিয়া থেকে ওয়াশিংটনে স্থানান্তর করেন, তখন থেকে এই লাইব্রেরির যাত্রা শুরু।

১৮০০ সালের ২৪ এপ্রিল লাইব্রেরি অব কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন জন বেকলি। তিনি এটির সর্বপ্রথম লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। তার হাত ধরে লাইব্রেরিটির পথচলা শুরু হয় ৫ হাজার ডলার মূল্যমানের ৭৪০টি বই ও ৩টি ম্যাপ দিয়ে। প্রথমে শুধু কংগ্রেসের লোকদের ব্যবহারের জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এটি, নামও রাখা হয়েছিল ‘দ্য লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’। কালক্রমে এর আকৃতি ও সংগ্রহের বিশালত্বের সাথে সাথে লাইব্রেরির দরজা খুলে দেয়া হয়েছে সর্বসাধারণের জন্য।

বর্তমানে এই লাইব্রেরির সংগ্রহে আছে প্রায় দেড় কোটির মতো বই ও পুস্তিকা, পাণ্ডুলিপি   ও পুঁথি আছে ৩ কোটির ওপর, প্রায় ৪০ লাখের মতো ম্যাপ এবং ৬০ লাখের মতো গানের স্বরলিপি, চিঠিপত্র, বাদ্যযন্ত্র, রেকর্ড, ট্যাপ, ক্যাসেট ইত্যাদি। আরো আছে প্রায় ১ কোটির মতো কিছু ছবি ও ফটোগ্রাফ, ১২০০ খবরের কাগজের নিয়মিত সংখ্যার ফাইল এবং সেই সঙ্গে রয়েছে প্রায় আড়াই লাখের ওপর চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি ফিল্ম।

এখন প্রশ্ন হতে পারে এতো বিশাল সংগ্রহ একটি লাইব্রেরিতে রাখা কীভাবে সম্ভব। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যে লাইব্রেরী অব কংগ্রেসের রয়েছে তিনটি বিশালাকার ভবন। ভবন তিনটি হলো – জেফারসন বিল্ডিং, জন এডামস বিল্ডিং এবং জেমস ম্যাডিসন মেমোরিয়াল বিল্ডিং। 

মজার ব্যাপার হলো প্রতিটি ভবনই পর পর তৈরী করা হয়েছে কারণ আগের ভবনে সংগ্রহীত বইয়ের জায়গা করা সম্ভব হচ্ছিলো না। জেফারসন বিল্ডিং এ যখন বইয়ের জায়গা সংকুলান হচ্ছিলো না, তার জন্যে প্রতিষ্ঠিত হয় জন এডামস বিল্ডিং। 

জন এডামসেও যখন একই সমস্যার সৃষ্টি হলো, তার জন্যে তৈরী হলো জেমস ম্যাডিসন। প্রতিটি ভবনেই পাঠকদের জন্যে রয়েছে বিশালাকৃতির পড়ার এবং গবেষণা করার জায়গা। বই পড়ার সময় না পেলেও জেফারসন বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি, গ্যালারি, প্রদর্শনী এসব ভালোভাবে দেখলেও জানা যায় অনেক তথ্য।

১৮১৪ সালে ইংরেজ সৈন্যরা তাদের মার্কিন উপনিবেশ রক্ষার চেষ্টায় ওয়াশিংটনে এসে ক্যাপিটাল প্রাসাদে কেন্দ্রীয় সরকারের মূল দফতরটি অধিকার করে নেয় এবং লাইব্রেরিটি সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়। যুদ্ধ অবসানের পর আবার সেই পুড়ে যাওয়া লাইব্রেরিটি নতুন করে গড়ে তোলা হয়। 

১৮১৪ সালের পর যখন লাইব্রেরি অব কংগ্রেস নতুন করে গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হলো, তখন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন কংগ্রেসকে জানালেন, তার বইগুলো তিনি এই লাইব্রেরিতে দিতে ইচ্ছুক। 

তারা যে দাম দিতে পারবেন তাতেই তিনি সেই অমূল্য বইগুলো লাইব্রেরিকে দিয়ে দেবেন। কংগ্রেস মাত্র ২৩,৯৫০ ডলারে ৬,৪৮৭টি বাছাই করা বই জেফারসনের কাছ থেকে লাইব্রেরির জন্য কিনে নেয়। এভাবেই শুরু লাইব্রেরির জন্য বই সংগ্রহের কার্যক্রম।

সেই পথচলা এখনো পর্যন্ত অটুট রয়ে গিয়েছে লাইব্রেরী অব কংগ্রেসের জন্যে। এখনো নিজ স্বকীয়তা বজায় রেখে চলছে যুগের পর যুগ। প্রতিটি বইপড়ুয়ার জন্যে এই লাইব্রেরি যেন এক বিশাল স্বপ্নরাজ্য যেখানে হারিয়ে যেতে চাইবে তার জ্ঞানপিপাসু মন। আপনিও যদি একজন বইপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে কংগ্রেস লাইব্রেরির এই বিশাল সমাহারে আপনার একবার হলেও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হবে।

আরো ব্লগ পড়তে চাইলে ক্লিক করুন লিংকে:

Writer

Muhammed Mahadi Hasan 

Intern

Content Writing Department