বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তরুণ লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারী বাংলা ভাষায় অর্থনীতি বিষয়ে একের পর এক লিখে চলেছেন মানুষের চিন্তাধারাকে ওলট-পালট করে দেওয়া বইসমূহ। তাঁর বইগুলোর প্রতিটি পৃষ্ঠাতেই তিনি সাজিয়ে রেখেছেন চিন্তাকে শাণিত করার মতো অসংখ্য রসদ। ব্যবসায় এবং অর্থনীতির মতো বিষয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করায় তিনি লেখালেখির জন্য অর্থনীতি বিষয়টিকেই বেছে নিয়েছেন। লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারী অবশ্য তাঁর লেখক স্বত্বাকে পাশে রেখে নিজেকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে তাঁর এই দুই পরিচয়ের অনবদ্য মিশেল — তাঁর প্রকাশিত বইগুলোর মাধ্যমে আমরা তাকে ধারণ করি। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানি-তে কর্মরত আছেন। নিজের লেখক স্বত্ত্বাকে জাগরুক রাখতে নিয়মিত লিখে চলেছেন। এ ছাড়াও চলমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকটগুলো নিজের সহজবোধ্য ভাষা ব্যবহারের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত নিজের ফেসবুক ওয়াল-এ বিশ্লেষণ করছেন।

“World Youth Skills Day” উপলক্ষ্যে “YSSE” আয়োজিত “Turn Your Flame Into Achievements” ক্যাম্পেইনের আওতায় “YSSE Content Writing Department” থেকে আমরা কথা বলেছিলাম জনপ্রিয় এই তরুণ লেখকের সাথে। আমাদের আলোচনায় লেখকের শৈশব থেকে শুরু করে তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনা, তরুণদের নিয়ে তাঁর ভাবনা, বর্তমান সংকট নিয়ে তাঁর উপলব্ধিসহ অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে। আমাদের ক্যাম্পেইনের এই পর্বে থাকছে সেই আলোচনার বিবরণগুলো।

 

লেখকের সাথে সালাম বিনিময়ের পর স্বাভাবিকভাবেই দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে কথা উঠেছিল। তিনি চলমান সংকটে লোডশেডিং-কে সমাধান হিসেবে মানতে তাঁর আপত্তির কথা জানালেন। আপত্তির একটি চমৎকার ব্যখ্যাও দিলেন। কারণ, লোডশেডিং-এর ফলে শিল্পে উৎপাদন ব্যহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে; যা কখনোই একটি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো সংবাদ নয় বরং, এক্ষেত্রে লেখক বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে সমস্যার আপাত সমাধান হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। কারণ, এতে দাম বৃদ্ধির ফলে এমনিতেই চাহিদা কমে যাবে। তখন ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য বা সেবাগুলোর ব্যবহার আপনা-আপনিই কমে আসবে। তবে তিনি সংকট সমাধানে সরকারের নেওয়া অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলোকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে লেখকের সাথে ভিন্নমত রেখে প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর করলেন: 

“এমন যদি হতো যে, ফুঁ দিয়ে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে রাখা যায়, তা হলে না হয় একটা কথা ছিল! কিন্তু সেরকম কিছু তো হচ্ছে না। মূলত পণ্যগুলোতে ভর্তুকি দিয়ে কৃত্রিমভাবে দাম কমিয়ে রাখা হয়। আর ভর্তুকি সরকার দেয় কোথা থেকে? আমাদের ট্যাক্সের টাকা থেকেই। দুনিয়াতে কোনো জিনিসই ফ্রি না।”

লেখক ভিন্নমতের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথাও জানালেন। তিনি সবসময় গঠনমূলক ও যৌক্তিক ভিন্নমতকে স্বাগত জানান এবং সেই ভিন্নমতের যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেও তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি মনে করেন, তরুণদেরও এমন মনোভাব রাখা জরুরি।

কথা বললেন, বাংলাদেশে ব্যবসা করার বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও। বাজারের পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে একচেটিয়া ব্যবসা ও সিন্ডিকেট নিয়েও তাঁর উদ্বিগ্নতা ব্যক্ত করলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সমাজে যেকোনো মূল্যে ব্যবসাকে ব্যাপক করতে হবে। ব্যবসাকে তিনি কোনো সহজ কাজ হিসেবে দেখেন না। ব্যবসায়ীদের তিনি বরং সম্মানের চোখেই দেখতে চান। আবার তিনি ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারেও সচেতন। ব্যাপকভাবে পণ্য উৎপাদন এবং ব্যবসার মাধ্যমেই তিনি ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থকে সমুন্নত দেখতে চান। তিনি তরুণদের ব্যবসায়ে আগ্রহী হতে উৎসাহ দেন।

সোশ্যাল মিডিয়া নিয়েও তাঁর কিছু মতামত জানালেন। সোশ্যাল মিডিয়ার (বিশেষত, ফেসবুক) অ্যালগরিদমগুলো তাঁর কাছে নেতিবাচক বিষয়বান্ধব’ বলে মনে হয়েছে। এখানে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচক বিষয়গুলো বেশি প্রচার পায়। ভালো বিষয়গুলো কেন জানি ‘চাপা’ পড়ে যায়। তাই তরুণদের তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে বলেন। তাই বলে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াকে তিনি সমস্যার সমাধান হিসেবে দেখতে নারাজ। বরং, সোশ্যাল মিডিয়াতে যেন সুস্থ ও সূক্ষ্ম চিন্তার বহিঃপ্রকাশ থাকে, এটাই তরুণদের কাছে তাঁর প্রত্যাশা।

গোছালো কিন্তু ভুলতে চাওয়া শৈশব ও কৈশোর

মোহাইমিন পাটোয়ারীর শৈশব কেটেছে ঢাকা শহরে। কিন্তু, তিনি শৈশব নিয়ে সবার মতো অতটা উৎফুল্ল নন। তিনি তাঁর শৈশবকে পড়াশোনার চাপময়, গৎবাধা ও গৃহবন্দি জীবন হিসেবে দেখেন। তবে শৈশব ও কৈশোরের একটি বৈশিষ্ট্যকে তিনি খুবই পছন্দ করেন। সেটি হলো: বিভিন্ন জিনিসে আগ্রহ ও উৎসাহ ওই উৎসাহের কারণেই এখনো শৈশব তাঁর কাছে অর্থবহতা ধরে রেখেছে। বাসা থেকে কোনো প্রেরণা না থাকলেও ওই বয়সেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। এ ছাড়া দৈনিক পত্রিকার সাথেও একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

মাধ্যমিক পাশ করার আগের জীবনকে তিনি অতটা মূল্য দিতে আগ্রহী না হলেও, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরের জীবনকে তিনি খুবই গুরুত্ব দেন। এই সময়ে তিনি ‘স্বাধীনতা’র একটু স্বাদ পেতে শুরু করেছিলেন বলে তাঁর ধারনা। মাধ্যমিকের পর তিনি মার্কিন মুলুকে পড়তে যাওয়ার জন্য আগ্রহী ছিলেন। প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে প্রস্ততির ওই সময়টুকু তাঁর জন্য অসাধারণ একটা সময় ছিল। এসময় তিনি তাঁর সহজাত আগ্রহ ও উৎসাহের বলে পড়াশোনার মাধ্যমে বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন।

নিরলস অধ্যয়ন

উচ্চ মাধ্যমিকের পর লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট-এ (আইবিএ) পড়াশোনা করার সুযোগ পান। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হওয়ায় সেখানে মানিয়ে নিতে তাঁকে বেগ পোহাতে হয়েছিল। তবে তিনি নিজের স্বত্ত্বাকে পরিপূর্ণভাবে চিনতে পেরেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পা রেখেই। যদিও আইবিএ তাঁর প্রত্যাশা পূরণে পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু, সেখানেই লেখক তাঁর নিজস্ব দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস ও সুস্থ-প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করতে পেরেছিলেন। এসময় লাইব্রেরির সাথে তাঁর একটি গাঢ় সম্পর্ক তৈরি হয়। তাঁর ভাষায়, 

“সেসময় খাবার খাওয়ার সময়টুকুও আমার কাছে বিরক্তিকর লাগতো। কারণ, ওইটুকু সময়ে তো আমি পড়তে পারবো না। কখনো এমনও মনে হয়েছে: যদি খাবারের বদলে একটা ট্যাবলেট খেয়ে পুষ্টি ও ক্ষুধা নিবারণ, এই দুটিই একসাথে নিশ্চিত করা যেত!”

ক্লাসের পড়া তাকে সেভাবে আকর্ষণ করতে না পারলেও লাইব্রেরির তাকে সাজানো ভাষা, ইতিহাস, ইংরেজি সাহিত্য, অর্থনীতি, ফাইন্যান্স, অ্যাকাউন্টিং, ভূগোল ও গণিতের বইগুলো তাকে পরম যত্নে টেনে নিয়েছিল। লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারী সেই সময়েই একে একে এই সকল বিষয়ের ওপর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন।

এসময় তিনি গণিতের প্রেমে পড়ে যান। এবং এক পর্যাযে সিদ্ধান্ত নেন, স্নাতোকোত্তর গণিতের ওপর করবেন। যদিও পরবর্তীতে তেমনটা হয়নি। অবশেষে তিনি অর্থনীতিতে দ্বৈত মাস্টার্স করতে নরওয়ে স্কুল অব ইকোনমিক্স ও জার্মানীর মাইনহাইম বিশ্ববিদ্যালয়এ যান এবং কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেই স্নাতোকত্তর ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে আসেন।

হঠাৎ ছন্দগুলোর পতন!!!

বিদেশ থেকে অনেকগুলো স্বপ্ন নিয়ে মোহাইমিন পাটোয়ারী দেশে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু, সেসব স্বপ্নের ভেতর আমাদের লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারীর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন দেশে এসে বড় মানের একটি চাকরিতে যোগ দেবেন, বিয়ে করবেন এবং একসময় দেশের মানুষের সেবায় হয়তো আরও বড় কিছু করবেন। দেশের মানুষের সেবা তিনি সত্যিই করছেনতবে এভাবে করবেন, তা তিনি ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি

এসময় পছন্দসই একটি পরিবার থেকে বিয়ের কথা-বার্তাও এগিয়ে চলছিল। কিন্তু কেন যে সেই পরিবারের মন পেলেন না, তা ভেবে তিনি অবাক হন। সেই প্রত্যাখানের পর আবার তখনকার খণ্ডকালীন চাকরিটাও চলে যায়। মানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! এদিকে পরিবার থেকেও সমর্থনের পাল্লাটা হালকা হয়ে আসতে লাগলো। ওই অবস্থায় নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছিলেন। তিনি অনুভব করছিলেন:

 “পায়ের তলার মাটি যেন ক্রমশ সরে যাচ্ছে।”

শূণ্যতা থেকে লেখালেখিতে পূর্ণতা

জীবনের অর্থ ক্রমাগত হতাশার গহ্বরে বিলীন হতে হতে একদিন তাঁর কাছে যেন আলোর ঝিলিক দিয়ে পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল। তিনি নিজেকে জিজ্ঞাসা করলেন, 

“এমন কি হতে পারে না যে, আমি যা জানি অন্যরা তা জানে না?” 

এই প্রশ্ন থেকেই তিনি যেন তাঁর পরবর্তী গন্তব্য খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি মানুষের তরে তাঁর জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠলেন।

এসময় তিনি তাঁর ফেসবুক ওয়ালে অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন কৌতূহলোদ্দিপক প্রশ্ন করতে থাকেন। যখন তিনি খেয়াল করলেন: এমন অনেক কিছুই রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান অতটা সমৃদ্ধ নয়, যতটা তিনি নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন, তখন তিনি একটা বই লেখার উদ্দীপনা খুঁজে পান। যাতে করে এর মাধ্যমে মানুষ সমৃদ্ধ হতে পারে। তিনি দ্রুতই বই লেখার কাজে হাত দিয়েছিলেন। এসময় তাঁর ফেসবুক পাঠকদের বিভিন্ন ইতিবাচক মন্তব্য তাঁর অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল।

তবে তাঁর কৌতূহল জাগানিয়া প্রশ্নগুলো অনেকসময় তাঁর জন্য খাল কেটে আনা কুমিরের মতো কাজ করেছে। বিভিন্ন কটু কথা ও গালি-গালাজ শুনতে হয়েছে। তবে তিনি যে মোহাইমিন পাটোয়ারী। ততদিনে তিনি যৌক্তিক ভিন্নমতকে গ্রহণ করার পাশাপাশি অযৌক্তিক ও অযাচিতগুলোকে এড়িয়ে চলা শিখে ফেলেছিলেন। তরুণদের এখান থেকেও শেখার আছে অনেককিছু।

মোহাইমিন পাটোয়ারীর মতে, এই অযাচিত মন্তব্যগুলোই শাপেবর হয়ে তাঁকে তাঁর প্রথম বইয়ের (ব্যাংকব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য)ম্পাদককে খুঁজে পেতে সহায়তা করেছে। কারণ, তিনি সবসময় চেষ্টা করতেন, নেতিবাচকতার ভিড় ঠেলে ইতিবাচকতাকে খুঁজে বের করতে। এছাড়াও তিনি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও সেই গ্রুপগুলোর পরিচালনা পর্ষদ থেকেও সমর্থন পেয়েছিলেন। তাদের প্রতি তিনি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কার্পণ্য করেননি।

প্রথম বই নিয়ে তাঁর মনের ভেতর অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সংকোচ ছিল। বইটি তাঁর ভাষায়, অনেকটা ’স্পর্শকাতর’। বই পড়লে ব্যাপারটি আপনারাও বুঝতে পারবেন। এই কারণে তাঁর সন্দেহ ছিল, এরকম একটা বই লিখে না জানি কী না কী বিপদে পড়তে হয়! তবে তিনি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যে, সেই দুঃশ্চিন্তা তাকে বই লেখার সংকল্প থেকে টলাতে পারেনি এবং তেমন কিছু ঘটেওনি। কিন্তু, তিনি বইটি লেখার ক্ষেত্রে অনেক সাবধানতা অবলম্বণ করেছিলেন, এটা তিনি স্বীকার করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয় এবং পাঠকমহলে অভাবনীয় সাড়া ফেলে

বাড়ি থেকে চাপ থাকায় আল্লাহর কাছে ক্রমাগত দোয়া করতে করতে একসময় একটা চাকরিও জুটিয়ে ফেলেন। বর্তমানে সেখানেই কর্মরত আছেন। চাকরিতে নিয়োগ পাওয়াকালীন তাঁর দ্বিতীয় বই (সুদ হারাম, কর্জে হাসানা সমাধান) প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানে আরও দুটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করছেন। খুব শীঘ্রই সেই বইগুলো প্রকাশিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।

লেখালেখিতে আগ্রহীদের জন্য

লেখালেখিতে আগ্রহী তরুণদের জন্য তিনি নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। তরুণদের তিনি প্রচুর বই পড়তে বলেন তাঁর ভাষায়,

“আমি যত লেখকের সাথে কথা বলেছি, তাঁদের প্রত্যেকের একটি কমন (সাধারণ) বৈশিষ্ট হলো, তারা প্রচুর বই পড়েছেন এবং পড়েন।”

তিনি আরও বলেন, ”লেখক হতে হলে লেখালেখির সাথে থাকতে হবে। অর্থাৎ, হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না। পানিতে না নামলে যেমন সাতার শেখা যায় না, তেমনি লেখালেখির জগতে প্রবেশ না করলে লেখালেখিও শেখা যাবে না।

 এ ছাড়াও তরুণ লেখকদের জন্য একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন, 

“আপনাদের প্রথম বইটিই জীবনের শেষ বই নয়। তাই, কোথা থেকে বই প্রকাশ করবেন, তা প্রকাশনীগুলোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।” 

এ ব্যাপারে তাকে একজন সহায়তা করায়, তার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন বলে জানান তিনি।

লেখকদের জন্য আরেকটি বিষয় জোর দিয়ে মনে করিয়ে দিতে গিয়ে বলেছেন, 

“লেখকদের উচিৎ তাদের লেখায় নতুনত্ব যুক্ত করা, যাকে উপজীব্য করে পাঠক পুরো লেখাটি পড়তে উদ্যম পাবে। লেখার ভেতর এমন কিছু রাখা, যা পাঠককে শেষ পর্যন্ত বইয়ের সাথে যুক্ত রাখবে। লেখালেখিতে নিজস্বতা নিয়ে আসা, হোক তা নতুন একটা তথ্যের মাধ্যমে কিংবা চিন্তাধারার মাধ্যমে। আর নিজস্ব মৌলিকতায় লেখার বিষয়বস্তুকে তুলে ধরা।” 

তিনি নিজেও তাঁর লেখার মৌলিকতা বজায় রাখার স্বার্থে সর্বদা সজাগ থাকেন।

 

পড়ালেখার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক যারা

লেখক এরকম শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন।

  • নিজেদের অ্যাকাডেমিক রেজাল্টে মনোযোগী হওয়া
  • ইংরেজি দক্ষতাকে উচ্চস্তরে উন্নীত করা
  • যে দেশে যেতে আগ্রহী, সে দেশের ভাষা শেখা 
  • যে বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী, সে বিষয়সহ সে বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য বিষয়েও মৌলিক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করা

যারা অর্থনীতি বুঝতে চায়, তারা সহ সকলকে নিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনা

বর্তমানে তরুণদের অনেকেই অর্থনীতি বুঝতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। লেখককে এই কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই তিনি এটি স্বীকার করলেন। এও জানালেন যে, তাঁর বইটি তরুণদের ভেতর সাড়া ফেলায় তিনি খুশি হয়েছেন। কিন্তু, বাংলা ভাষায় অর্থনীতির ওপর লেখা বইগুলো নিয়ে তিনি নিজের হতাশা ব্যক্ত করলেন। এক্ষেত্রে তিনি আকবর আলী খানের লেখা ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ বইটি ছাড়া তাঁর মনের মতো আর কোনো বইয়ের নাম উল্লেখ করতে পারলেন না। তাঁর ইচ্ছা — তিনি বাংলা ভাষাকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিভাষার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করবেন। এই প্রয়াসে তিনি চলমান বইগুলোর পাশাপাশি অর্থনীতি ও তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে একাডেমিক বই লিখতে আগ্রহী। তবে এক্ষেত্রে তিনি যে বিভিন্ন ধরণের বাধার সম্মুখিন হবেন, তা তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন। তবে তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন। তাঁর স্বপ্ন একদিন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্থনীতির ওপর তাঁর লিখিত বইগুলো পড়ানো হবে

আমরাও মহান আল্লাহর কাছে সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করি।

লেখক মোহাইমিন পাটোয়ারীর জীবনের উত্থান-পতনের ছোট ছোট বিভিন্ন বিষয় এই আলোচনায় উঠে এসেছে। আমরা দেখেছি কীভাবে তিনি তাঁর দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনের এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন। জীবনের বিভিন্ন বাঁকে তিনি সৃষ্টিকর্তার সাহায্য পেয়েছেন, এটা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তাঁর জীবনের এই গল্প আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তা ছাড়া তরুণ ও লেখকদের উদ্দেশ্যে তাঁর দেওয়া বিভিন্ন দিকনির্দেশনার জন্য আমরা তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ। আমরা এই তরুণ লেখক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকের উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করি।

আরও ব্লগ পড়তে এখানে  #ক্লিক করুন।

Writer

Md. Tangidul Hasan

Intern, Content Writing Department

YSSE