বর্তমান যুগে স্বাক্ষরতা শুধু পড়তে বা লিখতে জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ব্যক্তির পূর্ণ সক্ষমতা অর্জনের একটি মৌলিক উপাদান। স্বাক্ষরতা একটি সমাজের উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এবং যখন এর সাথে প্রযুক্তি যুক্ত হয়, তখন শিক্ষার ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার প্রসার এবং প্রযুক্তির সাথে এর সংযোগ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, যা জাতীয় অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। আজ আমি বর্তমান যুগে শিক্ষার ভবিষ্যতে কিভাবে স্বাক্ষরতা ও প্রযুক্তি ভূমিকা রাখে তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো। 

স্বাক্ষরতা: কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

স্বাক্ষরতা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উন্নতির পথ নয়, এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। একজন শিক্ষিত মানুষ নিজেকে আত্মনির্ভর করতে পারে এবং দক্ষতার সাথে সমাজে অবদান রাখতে পারে। স্বাক্ষরতার মাধ্যমে মানুষ কেবল নিজের জীবনকে উন্নত করতে পারে না, বরং একটি দেশের সামগ্রিক দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য, এবং জীবনের মান উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আঁখি তার গ্রামের একটি সরকারি স্কুলের একজন শিক্ষিকা। স্কুলে পাঠদানের পাশাপাশি সে তাঁর অবশিষ্ট সময় গ্রামের নারী-পুরুষদের শিক্ষিত করে তোলার কাজে লাগান। তাঁর উদ্যোগের ফলে গ্রামের অনেকেই এখন লেখাপড়া করতে পারছে এবং সামাজিকভাবে আরও সক্ষম হয়ে উঠেছে। এভাবেই স্বাক্ষরতা ব্যাক্তি থেকে সমাজের দিকে অগ্রসর হয়। 

স্বাক্ষরতা ও প্রযুক্তির সংযোগ

আমাদের দেশে স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অনেকদিন ধরেই চলছে। বর্তমানে ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল টুলসের ব্যবহারে স্বাক্ষরতা অর্জন অনেক বেশি সহজ এবং দ্রুত হয়েছে। এর মধ্যে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, অনলাইন কোর্স, ডিজিটাল বই এবং ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করছে।

১. ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম: ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো জায়গায় থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি, যা স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির একটি বড় মাধ্যম। বিশেষ করে, যারা প্রথাগত বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না বা সুযোগ পাচ্ছে না, তারা ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজেদের স্বাক্ষর করতে পারছে।

২. ডিজিটাল ক্লাসরুম: বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন ডিজিটাল ক্লাসরুম ব্যবহার করছে। এতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলেও অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পাঠ গ্রহণ করতে পারছে। এটি বিশেষত স্বাক্ষরতা বাড়াতে সহায়তা করছে, কারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা আরও বেশি সহজলভ্য হয়েছে।

৩. মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ডিজিটাল পাঠক্রম: বাংলাদেশে অনেক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, যেগুলো স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরাসরি কাজ করছে। এই অ্যাপগুলোর মাধ্যমে যেকোনো বয়সের মানুষ তাদের নিজস্ব সময়ে এবং জায়গা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যেও স্বাক্ষরতা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

৪. গেমিফিকেশন ও ইন্টারেক্টিভ শিক্ষা: শিশুদের মধ্যে স্বাক্ষরতা উন্নত করার জন্য গেমিফিকেশন পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষার বিভিন্ন উপাদানকে গেমের মাধ্যমে উপস্থাপন করে শিশুদের মধ্যে পাঠের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করা হচ্ছে, যা স্বাক্ষরতার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে।

স্বাক্ষরতা ও প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জঃ

বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসারও কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন:

১. ইন্টারনেটের অভাব: প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো ইন্টারনেট সহজলভ্য নয়, যা স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির পথে বাধা।

২. প্রযুক্তি ব্যবহার দক্ষতার অভাব: অনেক মানুষ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে দক্ষ নয়, যা তাদের স্বাক্ষরতা অর্জনে বাধা সৃষ্টি করে।

৩. ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণের স্বল্পতা: বাংলাদেশের অনেক স্থানে পর্যাপ্ত ডিজিটাল শিক্ষামূলক উপকরণ নেই, যা স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির গতিকে কমিয়ে দিচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাঃ

ভবিষ্যতে স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে:

১. প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা।

২. শিক্ষকদের প্রযুক্তি ব্যবহার শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া।

৩. ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণের পরিমাণ ও মান বৃদ্ধি করা।

৪. শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বা সুলভে ইন্টারনেট ও মোবাইল ডিভাইসের ব্যবস্থা করা।

বর্তমান যুগে স্বাক্ষরতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমাদের দেশে শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে স্বাক্ষরতা/শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া, যা জাতির সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

 

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন 

 

লেখিকা,

আঁখি আক্তার 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE