মানব ইতিহাসে হিটলার এক ঘৃণিত চরিত্রের নাম। অগণিত মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে সব জায়গায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূল হোতা ছিল এই ব্যক্তি। এর খারাপ কাজের কথা লিখতে গেলে শেষ করা যাবে না। খারাপ কাজের জন্য সে নোবেল পাওয়ার দাবিদারও বলা চলে!! তবে বলা হয়, মুদ্রারও এপিঠ ওপিঠ থাকে। সেরকম হিটলারের চরিত্রের আরেকটি দিক রয়েছে, যা সম্পর্কে সবার জানা উচিত, যা হয়ত অনেকের অজানা।
হিটলারের সম্পর্কে ভালো কথা খুঁজে পাওয়া যদিও দুষ্কর, তার কারণ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তাকে নিয়ে লেখা আত্নজীবনী “মাইন কাম্ফ” বইয়ে এত বেশি পরিমান মিথ্যা ছিল, বইটিকে ইতিহাসের গ্রন্থ থেকেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়। ঐতিহাসিকরা এ গ্রন্থটির কোনো দামই দেয়নি।
এখন হিটলারের কিছু অবাক করা বৈশিষ্ট্যের কথা জেনে নেয়া যাক-
শুরু থেকেই হিটলার ছিল চরম ধূমপায়ী। কিন্তু জার্মানীর লিডার পদে যোগ দেয়ার পর ধূমপানকে পয়সা ধ্বংসের উপকরন মনে করে ধূমপানবিরোধী হয়ে যায়। তাই জার্মানির সর্বত্র এ বিষয়ে প্রচারণা চালিয়েছিল বলে জানা যায়।
লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করা এই লোকের মাঝে নাকি পশুপ্রেমও ছিল, এ যেন অতি আদিক্ষেতা!!! স্বভাবে সে একজন ইহুদী নিরামিষভোজী। নাৎসী পার্টি ক্ষমতায় আসার পরপরই গবেষনাক্ষেত্রে পশুহত্যা (Vivisection) নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে দেয় সর্বত্র। তার পরিকল্পনা ছিল জয়ের পর জার্মানির সর্বত্র আমিষ নিষেধাজ্ঞা জারি করা। সে নিজে আত্নহত্যার আগে নিজের পোষা কুকুর ব্লন্ডিকে মেরে ফেলেন যাতে তার কুকুর ভেবে কেউ কষ্ট না দিতে পারে।
তার মধ্যে চিত্রশিল্পী হওয়ার ইচ্ছা ছিল বলেও জানা যায়। Hans Thoma, Albrect Durer, Lucas Cranach the Elder, Johannes Vermeer এসব প্রবাদপ্রতিম জার্মান চিত্রকরদের বিশাল ভক্ত ছিল সে। আধুনিক চিত্রশিল্পীদের ধারা তার একদমই পছন্দ ছিল না। তার পছন্দের সারিতে ছিল প্রাচীন ধারার চিত্রশিল্পীরা। এমনকি সে চিত্রশিল্পী হবার জন্য ভিয়েনা শিল্প বিদ্যালয়ে দুইবার আবেদন করেছিল, দুইবারই প্রত্যাখান হন। পরে একপ্রকার মনের ক্ষোভ নিয়েই সে ফ্যাসিবাদী রাজনীতিতে প্রবেশ করে। তার ইচ্ছা ছিল, প্রিয় চিত্রকরদের সব শিল্পকর্ম নিয়ে একটি মিউজিয়াম বানাবেন। শুধু চিত্রকর্ম নয়, অপেরা মিউজিকের প্রতি ছিল তার সীমাহীন আগ্রহ ও আকর্ষণ। জার্মান নাট্যপরিচালক Wagner এর অপেরা Lohengrin ছিল তার প্রিয় বিষয়ের তালিকার মধ্যে একটি। বলা যায়, এ নিষ্ঠুর নেতার মধ্যেও একসময় সংস্কৃতিক মানসিকতা কাজ করত। আসলেই অভাবনীয়!
ইউরোপের সে সময়ের কাজের মধ্যে সেরা কাজ ছিল সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থাপনা। এই রাস্তার কারনে জার্মানির অনেক দূর দূরান্তের এলাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হয়ে ওঠে। এই সুসংহত সক্রিয় ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিকল্পনা হিটলারের তৈরি। পাঁচ বছরের মধ্যে জার্মানির সবচেয়ে গরীব থেকে সবচেয়ে ধনী দেশে পরিনত হয়, বেকারত্বের সমস্যা দূরীভূত হয়, মুদ্রাস্ফীতি বন্ধ হয়, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিকে স্থিতিশীল রাখে। অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত অস্ত্র তৈরির আগে জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী হয়েছিল।
তাছাড়াও হিটলার জার্মানির শাসনক্ষমতায় আসার পর জার্মানের নিজস্ব মুদ্রা চালু করে, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রকল্প তৈরি করে, সাথে বেতন হিসেবে জার্মানি গভর্মেন্ট প্রদত্ত Labour Treasury Certificate প্রদান করে সাধারন মানুষের জন্য।
তার আরও কিছু কল্যাণমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে- বন্যা নিয়ন্ত্রন, সেতু নির্মাণ, ক্যানাল নির্মাণ, বন্দর নির্মাণ, বাড়ি ও সরকারি কার্যালয়ের পুননির্মাণ ইত্যাদি। তখনকার সময় প্রাপ্ত প্রশংসাপত্র এত মূল্যবান ছিল যে তারা মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করতে পারত। তখনকার সময় জার্মানি সাধারণ মানুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ অর্থনীতিকে এক নতুন রুপদানে সহায়তা করেছে।
পরিশেষে, একজন মানুষ সবার মাঝে স্মরনীয় হতে পারে তার ভালো কাজের মাধ্যমে। কিন্তু হিটলারের গুটিকয়েক কাজ ব্যতীত অধিকাংশ কাজই হিংস্রতার পরিচয় দেয়। অসংখ্য নির্মম মানুষকে হত্যা করা এই পশুতুল্য ব্যক্তিকে মানুষ কখনই শ্রদ্ধাভরে স্মরন করবে না। সে থাকবে সবার ঘৃণা ও ধিক্কারের মাঝে ।
আরো ব্লগ পড়তে এখনে ক্লিক করুন।
Writer,
Somaiya Afrin Eva Khondokar
Intern, Content Writing Department
YSSE