আজকের বিশ্বে চাকরির বাজারে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের মুখমুখি প্রায় সব গ্র্যাজুয়েটকেই হতে হয় তা হলো – সরকারি চাকরি নাকি কর্পোরেট জব? চাকরির এ দুটি ক্ষেত্রেরই নিজস্ব সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ আছে। এ সকল সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জের উপরেই নির্ভর করে কে কোনটা নিজের জন্য বেঁছে নিবে। তবে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ‘কর্পোরেট জব’। মোট কথা, আপনার ব্যক্তিত্ব, ক্যারিয়ার লক্ষ্য এবং জীবনধারা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কোন চাকরি আপনার জন্য ।

এ দোটানা থেকে মুক্তির জন্য এ ব্লগে আমি সরকারি চাকরি ও কর্পোরেট চাকরির বিভিন্ন দিক তুলে ধরবো, যাতে আপনি নিজের জন্য সেরা পথ বেছে নিতে পারেন।

সরকারি চাকরি এবং এর সুবিধাসমূহঃ সরকারি চাকরি বরাবরই স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার প্রতীক। একটা সময়ে আমাদের দেশে সরকারি চাকরির চাহিদা ছিল আকাশছোঁয়া। এখনো যে খুব একটা কমেছে তা নয়। এ তথাকথিত ‘সোনার হরিণের’ পিছে বা এটাকে পছন্দের ক্ষেত্রে মানুষের কিছু ‘সাইকোলজি’ কাজ করে। যেমনঃ

  • স্থিতিশীলতা: সরকারি চাকরির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর স্থিতিশীলতা। সাধারণত, অর্থনৈতিক মন্দা বা অন্য কোনো কারণে কর্পোরেট সেক্টরে চাকরি হারানোর ঝুঁকি থাকলেও, সরকারি চাকরিতে সেই ভয় তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
  • নিরাপত্তা: সরকারি চাকরিতে সাধারণত সহজে চাকরি চলে যাওয়ার ভয় থাকে না বরং কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়া হয়। 
  • সুবিধা: সরকারি চাকরিতে বেতন কাঠামো সাধারণত নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। এছাড়া স্বাস্থ্য বীমা, পেনশন এবং অন্যান্য ভাতাও পাওয়া যায়। 
  • কাজের পরিবেশ: কাজের চাপ সাধারণত কর্পোরেট সেক্টরের তুলনায় কম থাকে। ফলে, ব্যক্তিগত জীবন এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হয়। 
  • জনগণের সেবা: সরকারি চাকরিতে জনগণের সেবা করার সুযোগ থাকে। দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়।
  • আমলাতন্ত্র এবং লাল ফিতার সমস্যা: সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায়ই আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জটিলতার সৃষ্টি হয়, যা জবের জন্য হতাশাজনক মনে হতে পারে এবং কাজের অগ্রগতি ধীর করে দিতে পারে।

এসব কারণে সরকারি চাকরির প্রতি মানুষের আগ্রহ না কমে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরকারি চাকরির অসুবিধাসমূহঃ তবে এতকিছুর মধ্যেও সরকারি চাকরির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছেঃ

  • বেতনকাঠামো: কর্পোরেট সেক্টরের তুলনায় সরকারি চাকরিতে বেতন তুলনামূলকভাবে কম হয়।
  • পদোন্নতি: পদোন্নতির সুযোগ কম এবং এটি সাধারণত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
  • কাজের সীমাবদ্ধতা: অনেক সময় গতানুগতিক কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়, নতুন কিছু করার সুযোগ কম থাকে।
  • নতুনত্ব বা সৃজনশীলতার সুযোগ কম থাকে।

কর্পোরেট জব এবং এর সুবিধাসমূহঃ কর্পোরেট জব বলতে মূলত বেসরকারি খাতের চাকরিকে বোঝানো হয়, যেখানে বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যাংক, আইটি, মার্কেটিং, ফাইন্যান্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করা হয়। কর্পোরেট জবের ক্ষেত্রে সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ পরিপূর্ণ। এখানে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার এবং নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ থাকে। যারা দ্রুত উন্নতি করতে চান এবং যাদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা রয়েছে, তাদের জন্য কর্পোরেট জব একটি আদর্শ ক্ষেত্র। এই সেক্টরে কাজের পরিবেশ সাধারণত গতিশীল এবং প্রতিযোগিতামূলক হয়। এ জবের বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ

  • কর্পোরেট চাকরির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো উচ্চ বেতন এবং দ্রুত পদোন্নতির সুযোগ।
  • কর্মপরিবেশে সাধারণত গতিশীল, চ্যালেঞ্জ এবং সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ থাকে।
  • ওয়ার্ল্ড মার্কেটে পদার্পণ: বাংলাদেশের অনেক কর্পোরেট মার্কেট আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে, বিভিন্ন দলের সাথে কাজ করার এবং বিশ্ববাজারে এক্সপোজার অর্জনের সুযোগ প্রদান করে।
  • দক্ষতার উন্নয়ন: কর্পোরেট জগতে ক্রমাগত শেখা এবং দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেকে নতুনবভাবে উপস্থাপন করা যায়, যা এক ধাপ এগিয়ে থাকতে এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

তবে এক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা কর্পোরেট চাকরিকে চাপের মধ্যে ফেলে দেয়।

কর্পোরেট জবের অসুবিধাসমূহ হলঃ

  • জব ইনসিকিউরিটি: সরকারি চাকরির তুলনায় কর্পোরেট জবের ক্ষেত্রে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশে বেশি। অর্থনৈতিক মন্দা কিংবা কোম্পানির স্বার্থে অনেক সময় কর্মী ছাটাই করা হয়।
  • দীর্ঘ কর্মঘন্টা এবং কাজের মাত্রাতিরিক্ত চাপ: কর্পোরেট জবের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দীর্ঘ কর্মঘন্টা, কঠোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া থাকে।
  • কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য বজায় রাখা: কর্মক্ষেত্রের সাথে ব্যক্তি জীবনের একটি সুস্থ স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।
  • প্রতিযোগিতা: কর্পোরেট সেক্টর অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক, যার জন্য আপনাকে ক্রমাগত আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে এবং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে হবে।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু দিক বিবেচনা করে প্রশ্ন করুন নিজেকেঃ

  • নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা যাচাই: কোন কাজ আপনার জন্য বেশি উপভোগ্য এবং আপনি কোন ক্ষেত্রে ভালো পারফর্ম করতে পারেন তা চিন্তা করুন।
  • ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণ: পাঁচ বা দশ বছরের মধ্যে আপনি কোথায় থাকতে চান তা স্পষ্ট করুন।
  • পরিবার ও সামাজিক অবস্থান: চাকরির ধরন আপনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের সাথে কতটা মানানসই তা বিবেচনা করুন।
  • বর্তমান বাজার ও চাকরির অবস্থা: বর্তমান চাকরির বাজার এবং ভবিষ্যতের প্রবণতা সম্পর্কে জানুন।
  • পরামর্শ নেওয়া: অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করুন এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন।
  • ‘আমার ব্যক্তিগত জীবন ও কাজের ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত?’
  • ‘আমি কি ধরনের কাজের চাপ সহ্য করতে পারি?’

সরকারি চাকরি এবং কর্পোরেট জব-দুটোরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব, সুবিধা-অসুবিধা আছে। যদি স্থায়িত্ব, নিশ্চয়তা এবং নিয়মিত সময়সূচি মেনে কেউ চাকরি করতে চায়, সরকারি চাকরি তার জন্য সেরা। অন্যদিকে, যদি কেউ উচ্চ আয়, দ্রুত উন্নতি এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ চায়, কর্পোরেট জব বেছে নেওয়া তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে। তবে সর্বোপরি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের পছন্দ, দক্ষতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

To read these types of blogs, click here.   

Writer,

Ishrat Jahan

Intern, Content Writing Department

YSSE