আইরিন দেখতে পেল লিসা এই শহরের সবচেয়ে পুরনো চার্চের নিয়মিত সদস্য ছিল। প্রতি রোববার সে নিয়মিত চার্চে যেত।
লিসা একাই থাকতো। পরিবারের সদস্যদের সাথে তার তেমন একটা যোগাযোগ নেই। বছরখানেক আগেও সে এমন ছিল না। এক এক্সিডেন্টে তার বয়ফ্রেন্ড মারা যাওয়ার পর থেকেই নাকি সে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয় এবং এই শহরে এসে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করা শুরু করে। সে বিভিন্ন বাড়িতে ক্লিনিং আর কুকিংয়ের কাজ করত।
প্রতিবেশীদের তথ্যমতে সে কাজ ছাড়া তেমন একটা বাড়ির বাইরে বের হত না। শুধুমাত্র চার্চে যাওয়া ছাড়া। তবে তাকে প্রায়শই এক মহিলার সাথে দেখা যেত, যার বাড়িতে সে কাজ করত। কিন্ত পুলিশ এই ধরনের এমন কাউকেই খুঁজে পায় নি।
তদন্ত অফিসার মর্গ্যান চার্চে খোঁজ নিয়ে তেমন কিছুই জানতে পারেন নি। চার্চে তেমন একটা কেউ আসে না। যারা আসে নিয়মিত আসে, প্রার্থনা করে, চলে যায়।
সকাল সকাল অফিসে গিয়ে নিজের ডেস্কে পৌঁছাতেই,
হাওডি, আইরিন!
হাওডি, জ্যাক!
কি খবর? কাল রাতে ঠিকমত ঘুমাও নি মনে হচ্ছে।
আইরিন মুচকি হাসল আর বলল, তোমার কি অবস্থা? তদন্ত কতদূর আগালো?
তেমন একটা ভালো না।
তুমি কিছু পেলে?
না।
আইরিন অকপটে অস্বীকার করল। সে এমনিতেই একা কাজ করতে পছন্দ করে। তার উপর জ্যাককে সাথে নিয়ে বিপদে ফেলতে চায় না।
সারাদিন ল্যাব আর নিজের কাজের মধ্যেই ডুবে রইল আইরিন।
সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরল সে। ফ্রেশ হয়ে, ডিনার করে, ক্যালেন্ডার নিয়ে বসল সে। দেখল আজ ঘন অমাবস্যার রাত।
আজ রাতেই যেভাবেই হোক ওই চার্চে যেতে হবে।
আইরিন প্রচন্ড কৌতুহলবশত একসময়ে কালোজাদু,ভুডু এগুলো নিয়ে বেশ ঘাটাঘাটি করেছিল। অবশ্য তখন বয়স কম ছিল আর অ্যাডভেঞ্চারের নেশায়, ঝোঁকের বশে এগুলো শিখেছিল। যদিও সে এগুলোর প্র্যাকটিস বা ক্রিমিনাল কোন কর্মকান্ড করে নি।
যাই হোক তার পুরোনো ইতিহাস আর লিংক কাজে লাগিয়ে সে জানতে পেরেছে যে, এই চার্চেই বিশেষ কিছু দিনে; রাতের বেলা চার্চের পেছনের পুরনো গোরস্থানে শয়তান সাধনার আসর বসে।
তাই সে আজ যেভাবেই হোক ওই চার্চে যেতে হবে।
হয়ত সেখানেই এই রহস্যময় মহিলার হদিস জানা যাবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই দরজায় কলিংবেল বেজে উঠল।
দরজা খুলে দেখল, সেদিনের সেই মহিলা দরজায় দাঁড়িয়ে। তবে মহিলার সাজপোশাকে আজ তাকে রহস্যময় লাগছে।
আইরিনকে দেখে একটা ট্রে এগিয়ে দিল, ট্রেতে নানারকম খাবার।
বললেন: আজ একটা স্পেশাল ডে ছিল, তাই এইসব করা। ভাবলাম একা একা সেলিব্রেট না করি, তাই তোমাকে দিতে এলাম। তুমি তো ব্যস্ত থাক তাই তোমাকে ইনভাইট করতে পারিনি। যাই হোক খেয়ে জানিও, টেস্ট কেমন হল!
এরপর মহিলা আর কিছু না বলে চলে গেল।
এই মহিলা এখানে আসার পর থেকেই নানাভাবে আইরিনের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করেছেন। হুটহাট করে কফি খেতে চলে আসা, লন, রাস্তায় দেখা হলেই ভাব জমানো, বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা, তার একা থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা, হা হুতাশ করা। অবশ্য এই মহিলার প্রতিটি কথা আর প্রশ্ন এত হিসেব করে করা যে কেউ তার এই অযাচিত ব্যবহারে শুধু মুগ্ধ নয় বরং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।
কি যেন এক সম্মোহনী ক্ষমতা আছে এই মহিলার!
অমায়িক ব্যবহার, মায়ের মতো আগলে রাখা, খোঁজ খবর নেয়া সবই চমৎকার! এই মহিলার সান্নিধ্যে যে কেউ নিজেকে ভাগ্যবান ভাববে। কিন্ত আইরিনের ক্ষেত্রে তা হয় না।
এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে চার্চের পুরোনো গোরস্থানের এমন ভুতুড়ে পরিবেশে যে কারো গা ছম ছম করবে কিন্ত আইরিনের কাছে এসব কিছুই নতুন না। কারণ সে একটা সময় অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় সে এরকম বহু দুঃসাধ্য কাজ করেছে।
গোরস্থানের mausoleums এর ভিতর চলছে শয়তানের সাধনা। সবাই আগুনের চারপাশে গোলাকার হয়ে বসে আছে।
বিশাল হলওয়ের এক পাশে থামের আড়াল থেকে সব দেখছে আইরিন। এই সাধনার নেতৃত্ব দিচ্ছে স্বয়ং এই চার্চের ফাদার।
ওদের পূজার ধরন আর মন্ত্র উচ্চারণ শুনে আইরিন কিছুটা অবাক হল। কারন তাদের সাধনা বড় কোন বলি বা হত্যার জন্য না। এটা শুধুমাত্র ছোট খাট সমস্যা, মানসিক শান্তি, আত্মার পরিশুদ্ধি, মৃতের সাথে যোগাযোগ, মৃতের জন্য প্রার্থনা এই জাতীয় সাধারণ জাদু, কোন ভয়ংকর মানুষ হত্যা, নরবলির পূজা নয়।
তাহলে লিসা হত্যার পেছনে এসব দায়ী নয়।
তাহলে কে দায়ী?! কি দায়ী?!
এসব ভাবতে ভাবতেই মাথায় প্রচন্ড আঘাত টের পেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তীব্র ব্যাথায় জ্ঞান হারালো আইরিন।
তুমুল অন্ধকারে তলিয়ে গেল সে….
What Am I প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন।
আমাদের আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক
Kulsuma Bahar Bethi
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE