আপনি রাস্তা ধরে হাঁটছেন। হঠাৎ আপনার চোখে পড়লো একটি সাইনবোর্ড। তাতে বড় বড় হরফে লেখা “গণ-গ্রন্থাগার ”।আপনি আনমনে প্রবেশ করলেন সেখানে। অফিসকক্ষ পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখলেন বিশাল বড় একটি হলরুম। হলরুমে রয়েছে সারি সারি তাক। আর সেসব তাকে সাজানো আছে হরেকরকম বই। বিভিন্ন বিভাগে সেসব বইগুলো বিভক্ত যেমন, ছোটদের বই, কমিকস, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ইংরেজি সাহিত্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রবন্ধ, গবেষণা সংক্রান্ত বই, বিজ্ঞানের বই প্রভৃতি। আরো আছে, দৈনিক পত্রিকা, মাসিক পত্রিকা, ত্রৈমাসিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন। আপনি অনেকক্ষণ খুঁজে পছন্দমতো একটি বই নিয়ে পড়তে শুরু করলেন।
কাল্পনিক ঘটনাটি হয়তো অনেকের সাথেই মিলে যাবে। এই সাধারণ লাইব্রেরি তার সাধারণ অবকাঠামো নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে আরো কিছু লাইব্রেরি আছে, তার কোনটায় নেই বড়ো হলরুম, কোনটায় বইয়ের সংখ্যা খুবই কম, কোনটা সমুদ্রের পাড়ে বিনির্মিত, কোনটা-বা চিঠির বাক্স, টেলিফোন বুথেই সীমাবদ্ধ, কোনটা উট বা গাধার পিঠে ভ্রাম্যমাণ। কেমন অদ্ভুত লাগছে এগুলো পড়তে! অদ্ভুত মনে হওয়া অদ্ভুতুরে লাইব্রেরির সংখ্যাও কিন্তু নেহাত কম নয়! দেখে নেওয়া যাক সে লাইব্রেরি গুলো কেমন।
টেলিফোন বুথে লাইব্রেরি
ইংল্যান্ডের দক্ষিণে অবস্থিত এক শহরতলী, নাম ওয়েস্টবারি-সাব-মেনডেপ। টেলিফোন এর ব্যবহার কমে এলে, ব্রিটিশ টেলিকম কোম্পানি ঐতিহ্যবাহী লাল টেলিফোন বুথ গুলো সেখান থেকে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন সেখানকার লোকজন সেটার বিরোধিতা করে। তারা টেলিফোন বুথ গুলোকে রেখে দেওয়ার দাবি জানায়। একটা সময় সেই টেলিফোন বুথগুলোকে তারা লাইব্রেরিতে পরিণত করে। প্রতিটি লাইব্রেরীতে স্থান পায় ১০০ করে বই। লাইব্রেরিগুলো সাপ্তাহে ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। লাইব্রেরিতে বইয়ের যোগান দেয় স্থানীয় লোকজন। এলাকাবাসীরা সেখান থেকে বই নিয়ে পড়ে, আবার পড়া শেষ হলে লাইব্রেরিতে রেখে দেয়। এই কাজ গুলো দেখাশোনা করে কিছু ভলান্টিয়ার।
ডাকবক্সে লাইব্রেরি
প্রতিটি লাইব্রেরিতেই থাকে বেশ কিছু নিয়মকানুন। লাইব্রেরির সদস্যপদ পাওয়ার জন্য নিয়মিত মাসিক ফি প্রদান করতে হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বই পড়ে জমা দিতে হয়। আবার লাইব্রেরি কার্ড ও বানাতে হয়। এইসব থেকে মুক্তি পেতে ডাকবক্সে লাইব্রেরির ব্যবস্থা। এই লাইব্রেরি গুলোর অবস্থান হয় বাড়ির সামনে ছোট একটি ডাকবক্সে। যার যখন ইচ্ছা সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারে। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই ধরনের লাইব্রেরি দেখা যায়। যার সংখ্যা মোটেও কম নয়।
সমুদ্র সৈকতে লাইব্রেরি
সমুদ্রের নীল জলরাশি। পাড়ে সাদা বিস্তীর্ণ বালুভূমি। সেখানেও আছে লাইব্রেরি। শুয়ে শুয়ে আয়েশ করে বই পড়া যায় তাতে। এরকম একটি লাইব্রেরী দেখা যায় কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে, বুলগেরিয়ায়। হারমেন কমপেনাস নামের একজন ব্যক্তি লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরীতে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। যে কেউ যেকোনো সময় সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারে। এধরনের আরেকটি লাইব্রেরি আছে অস্ট্রেলিয়ায়।
খচ্চরে টানা লাইব্রেরি
খচ্চরে টানা এই লাইব্রেরি দেখা যায় কলম্বিয়ায়। সেখানকার একজন শিক্ষক অবসর সময়ে এই লাইব্রেরি পরিচালনা করেন, নাম লুইস সেরিআনো। শখের বসে করা হলেও এই কাজটি তাকে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত করে তুলেছে। খচ্চরের টানা সেই লাইব্রেরী নিয়ে তিনি চলে যান প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখানকার শিশু-কিশোরদের মধ্যে বই বিতরণ করেন। বই দেখে ওদের চোখেমুখে ফুটে উঠে আনন্দ। দুটো খচ্চরের টানা সেই লাইব্রেরির নাম বিবলিওবুরো।
উটের পিঠে লাইব্রেরি
আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিস্তীর্ণ মরুভূমি। সেখানে বসবাস করে বিভিন্ন যাযাবর মানুষ। তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে মূলত এই লাইব্রেরীর উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশেষ এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরীতে থাকে লাইব্রেরিয়ান আর হাজারো বই, এছাড়াও থাকে ক্যাম্প করার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। তারপরই লাইব্রেরি গুলো বেরিয়ে যায় যাযাবর জাতিদের উদ্দেশ্যে। ঘুরতে থাকে এক জায়গা থেকে অপর জায়গায়।
এরকমই চমৎকার সব লাইব্রেরি দেখা যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। লাইব্রেরি গুলোর উদ্দেশ্য অসাধারণ। বিচিত্র এই ধারণা গুলো থাকুক প্রবাহমান।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে এখানে, ক্লিক করুন।
লেখক,
খায়রুল ইসলাম শুভ
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE