এই গরমের দিনে সারাদিন বাইরে থেকে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আসার পর আমাদের সর্বপ্রথম চাওয়া হলো ঠান্ডা পানি কিংবা ফ্রিজের ঠান্ডা কোনো খাবার যা খেলে গরম থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে।
আবার আমরা যখন বাইরে থাকি তখন সুযোগ পেলেই একটু স্বস্তির খোঁজে দোকান থেকে ঠান্ডা পানীয় অথবা আইসক্রিম কিনে খাই। তবে এই স্বস্তি আমাদের কারো কারো কাছে শাস্তিস্বরূপ হয়ে দেখা দেয় যখন অত্যধিক ঠান্ডা কিছু খাওয়ার কারণে শুরু হয় গলাব্যথা।
গলাব্যথা খুবই অসহনীয় একটি রোগ। যদিও এটি তেমন দীর্ঘস্থায়ী নয় তবে যতদিন রোগী এই সমস্যায় ভুগতে থাকেন ততদিন ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন। কারণ প্রতিবার ঢোক গিলতেই গলার দুপাশে যেই টনসিল গ্ল্যান্ড রয়েছে সেখানে প্রদাহের সৃষ্টি হয় যা রোগীর জন্যে কষ্টদায়ক।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে গলাব্যথা ফ্যারিঞ্জাইটিস হিসেবে পরিচিত। যা মূলত ঠান্ডা এবং ফ্লু জনিত কারণে যেই জীবাণুর সংক্রমণ হয়ে থাকে তার কারণে সৃষ্ট। গলায় শুষ্ক চুলকানি হয় এবং খাবার গিলতে ও ঢোঁক গিলতে সমস্যা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসুস্থ হওয়ার পূর্ব লক্ষণ হিসেবে গলা ব্যথা করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টনসিল সংক্রমণের জন্যেই গলাব্যথা হয়ে থাকে যার জন্যে সর্দিকাশির ভাইরাস দায়ী। এই টনসিল সংক্রমণ ছোট বড় সকলের ক্ষেত্রেই হতে পারে। আমাদের গলার পেছনে দুপাশের মাংসপিণ্ডগুলোই টনসিল যার কাজ হলো আমাদের নাক বা গলা দিয়ে যেসব রোগজীবাণু প্রবেশ করে তা হতে বাধা প্রদান করা। তাই গলাব্যথা দূরীকরণের জন্যে আমাদের সর্বপ্রথম টনসিলের সুস্থতা জরুরী।
এতক্ষণে বুঝতেই পারছেন তাহলে ব্লগটি কি নিয়ে হতে চলেছে? হ্যাঁ ঠিক তাই, আমরা এখন জেনে নিবো গলাব্যথা বা টনসিলের সংক্রমণ হলে তা হতে নিরাময়ের জন্যে ৫টি উপায়:
লবণ পানি: টনসিল সংক্রমণ রোধে প্রথম এবং প্রধান কার্যকরী নিরাময় হলো লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি করা। গলা ব্যথা শুরু হলেই হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করলে ব্যথা কমিয়ে আনা যায়। কুলকুচি করার ফলে গলায় সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের আশঙ্কাও অনেকাংশে কমে যায়।
চা এবং মধু: দেড় কাপ পানিতে আধা চামচ চা পাতা আর এক চামচ মধু দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার ধীরে ধীরে গলায় আঁচ লাগে মতোন চুমুক দিয়ে ওই চা পান করুন । সবচেয়ে ভালো হয় যদি গ্রীন টি হয়। গ্রীন টিতে বিদ্যমান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট টনসিলের সব রকম ক্ষতিকর জীবাণুকে ধ্বংস করে। দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ এই মধু এবং চায়ের মিশ্রণ পান করলে উপকার সুনিশ্চিত।
আদা চা: আদায় বিদ্যমান অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফালামেন্টরী উপাদানগুলো গলাব্যথার সংক্রমণ ছড়াতে বাধা দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে গলার ব্যথা কমিয়ে দিতেও এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দেড় কাপ পানিতে এক চামচ আদা কুচি আর আন্দাজ মতো চা দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। দিনে অন্তত ২-৩ বার এটি পান করুন।
হলুদ দুধ: এক কাপ গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন। ছাগলের দুধ টনসিলের ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকরী। ছাগলের দুধে অ্যান্টিব্যায়টিক উপাদান আছে। তবে ছাগলের দুধ না পেলে গরুর দুধে হলুদ মিশিয়ে সামান্য গরম করে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। হলুদ অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টরী, অ্যান্টিবায়টিক এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি উপাদান, যা গলা ব্যথা দূর করে টনসিলের সংক্রামণ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
লেবুর রস: গলাব্যথা অনুভব করলে উষ্ণ পানিতে এক চামচ লেবুর রস, এক চামচ মধু, আধা চামচ লবণ ভাল করে মিশিয়ে নিয়মিত পান করুন। যত দিন গলা ব্যথা ভাল না হয়, তত দিন পর্যন্ত এই মিশ্রণটি সেবন করলে টনসিল সংক্রমণ দূর হবে অতি দ্রুত।
উক্ত ৫টি ঘরোয়া উপায় যদি গলাব্যথার সময়ে নিয়মিত অবলম্বন করা হয়ে থাকে তাহলে গলাব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তবে খেয়াল রাখা জরুরি, গলাব্যথা বা টনসিল সংক্রমণ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় অথবা এই ঘরোয়া উপায়গুলো থেকে কোনো ফলাফল পাওয়া না যায় তাহলে রোগীর উচিত অতি দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা।
আর সবশেষে আমাদের উচিত নিয়মিত ঠান্ডা জাতীয় পানীয় বা খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা। কারণ শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্যে কোনোকিছুই অতিরিক্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক।
আরো ব্লগ পড়তে চাইলে ক্লিক করুন লিংকে:
Writer
Muhammed Mahadi Hasan
Intern
Content Writing Department