বহু খোঁজাখুঁজির পর হঠাৎ একদিন কম বয়সী,লম্বায় ৬ ফুটের কাছাকাছি,সুকেশী,সুহাসিনী,ফর্সা,তীক্ষ্ণ খাড়া নাক(গ্রীক পুরাণের দেবীর মত দেখতে),ডাগর ডাগর চোখ,ভালো বংশের,স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে; দু-তিন গ্রাম পরে এমন উপযুক্ত মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেল। মেয়ের নাম অহনা।

সব মিলিয়ে মেয়ে একদম মনের মতন, চমৎকার। 

এরপর বিয়ের দিন-ক্ষণ ঠিক হলো।

যথা সময়ে বিয়ে হলো। বিয়ের দিন বরের সেকি কান্না! নতুন জীবনের অনিশ্চয়তা,সম্পূর্ণ নতুন একজন মানুষের দায়িত্ব কি ঠিকঠাক মত পালন করতে পারবে?! এমন নানা চিন্তায় তারিক চিন্তিত হয়ে পড়ল।

যেখানে অন্যান্য পুরুষেরা বিয়ে নিয়ে হাসি ঠাট্টা,তামাশায় মেতে থাকে সেখানে তারিক দুশ্চিন্তায় কাতর হয়েছিল। 

 

বিয়ের পর চার বছর কেটে গেল।

চার বছর পরে বহু চেষ্টার পর তারিকের স্ত্রী অহনা সন্তান-সম্ভবা হলো। এই সুসংবাদে পুরো পরিবারে খুশির বন্যা বয়ে গেল। 

যথা সময়ে বাড়িতে গ্রামের দাইয়ের হাতে শিশুর (মেয়ে) জন্ম হল।প্রসবের সময় প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছিল কিন্ত অনভিজ্ঞ দাই আর অবুঝ অহনা তা বুঝতে পারে নি বা খেয়াল করে নি।

বাচ্চা হওয়ার তিন দিন পর অহনা একদিন মাথা ঘুরে পড়ে গেল।বারো দিন পর বাচ্চার নাম রাখা হলো, অনুষ্ঠান করা হলো, বাচ্চার বাবাও সেসময় বাড়িতে এসেছিলেন। পরের দিন পুনরায় কর্মক্ষেত্রে ফিরে গেল। ফিরে যাওয়ার পর দিন সকালেই অহনার হুট করে বমি আর প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হল। 

বাড়িতে ডাক্তার আনা হলো। ডাক্তার ঔষধ দিলেন। সেই ঔষধে বমি বন্ধ হলেও মাথা ব্যথা কমল না। 

অহনা কাঁদতে কাঁদতে তার বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগল। 

বাড়ির সকলে তার অসুস্থতা,কষ্ট আর কান্না দেখে তাকে তার সতের দিন বয়সী শিশুকে নিয়ে বাবার বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিল।

যাওয়ার সময় সে সবাইকে বলতে লাগল, “আমাকে সবাই ক্ষমা করে দেবেন, আমি হয়ত আর ফিরে নাও আসতে পারি।

যাত্রাপথে রাস্তাঘাট খারাপ থাকার কারণে, অতিরিক্ত ঝাঁকুনির চোটে তার মাথা ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করল। বহু কষ্টের পর রিকশা যখন অহনার বাবার বাড়ি পৌঁছল তখন তার জ্ঞান প্রায় নেই। তাকে রিকশা থেকে নামাতে কষ্ট হচ্ছিল, অনেক কষ্টের পর তাকে ধরাধরি করে বাড়ির ভিতর নেয়া হলো এবং ভেতরে শোয়ানো হলো। এরপর আবার বাড়িতে ডাক্তার আনা হলো।ডাক্তার এসে স্যালাইন দিল কিন্ত কোন রোগ নির্ণয় করতে পারলেন না।

কোন শারীরিক উন্নতির লক্ষণ নেই দেখে এক রাত এভাবে কাটানোর পর সকালে অহনাকে হাসপাতালে নেয়া হলো। হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গুরুতর রক্ত শূণ্যতা ধরা পড়ল। এরপর সাথে সাথে ৬ ব্যাগ রক্ত দেয়ার পরামর্শ দিলেন ডাক্তার। প্রথমে ২ ব্যাগ রক্ত দেয়া হল। এরপর আরও ২ ব্যাগ রক্ত দেয়া হল।এভাবেই কেটে গেল ৪ দিন। এরমধ্যে বাড়ির লোকজন সবাই হাসপাতালে গেল। সবার রক্ত পরীক্ষা করা হল মোটামুটি সবার রক্তের গ্রুপ মিলে গেল তার সাথে তাই এভাবে ৪ ব্যাগ রক্ত দেয়া সম্ভব হল।তারপরও রোগীর শারীরিক কোনও উন্নতি না দেখে ডাক্তাররা তাকে ঢাকার কোনও বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরদিন তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সমস্ত বন্দোবস্ত করা হলেও সেইদিন রাতেই মারা গেলো অহনা।

এরপর বহুদিন কেটে গেল। তারিকের বাবা-মা বাচ্চাটাকে রাখতে চেয়েছিলেন কিন্ত অহনার বাবা-মা বাচ্চাকে রেখে দিলেন নিজেদের কাছে লালন-পালনের জন্য মেয়ের শেষ স্মৃতি হিসেবে।

তারিক অহনার মৃত্যুতে শোকে পাগলের মত হয়ে গিয়েছিল। তারিক আর বিয়ে করবে না বলে পণ করল।

এরপর কেটে গেল কয়েক মাস। 

এদিকে সেই ছোট্ট শিশুটি তার নানার বাড়িতে বড় হতে লাগল। তারিক ও তার পরিবারের সদস্যরা বাচ্চার ভরণ-পোষণের খরচ দিত।

তারিক যত বার বাড়িতে আসত ততবার মেয়েকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসত। তার মেয়েও মাঝে মাঝেই দাদার বাড়িতে বেড়াতে আসে। দাদার বাড়ির সবার তার জন্য ছিল অফুরন্ত ভালোবাসা।

এভাবেই মাস তারপর ৬ বছর কেটে গেল। 

জীবন স্রোতে তাল মিলিয়ে সকলের জীবন সামনে এগিয়ে চলতে লাগল। 

তারপর….

 

(বি.দ্র. সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত গল্প)

 

আমাদের আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

লেখক

 

Kulsuma Bahar Bethi 

 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

 

YSSE