রাত বারোটা
কুয়াশাচ্ছন্ন,অন্ধকার শীতের রাত। প্রত্যন্ত এক অজপাড়া গাঁয়ে এক টিনের চালের ঘরে এক কিশোর বিজ্ঞানের রস-কস হীন পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে একাগ্রচিত্তে নিমগ্ন। দৃশ্যটি তখনকার যুগে এমন পরিবেশে দুষ্প্রাপ্য। কিন্তু সেই অদম্য কিশোরের বাড়িতে এই দৃশ্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
কনকনে ঠান্ডা হোক বা গুমোট গরম রাত কিংবা কাক ডাকা ভোর কিছুই দমাতে পারত না সেই কিশোরকে।
পড়াশোনা যেন ছিল তার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ আর ভালোবাসা কোনটার কমতি ছিল না।
তখন আশির দশকে,
টি.এন.টি. তে চাকরিরত আব্দুল করিম সাহেবের এগারো সন্তানের মধ্যে সেই কিশোর ছিল সুদর্শন, বুদ্ধিমান, একরোখা,জেদি,প্রতিভাবান সন্তান।
সে যেমন ছিল বুদ্ধিমান তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন, যেমন ছিল জেদি আর একগুয়ে তেমনি মায়ামততায় পূর্ণ। তার নাম ছিল তারিক ইসলাম।
সেই কিশোর তার বাকি ভাই বোনদের নিজের মত করে পড়াশোনা শিখানো,তাদের আগলে রাখা।
তাদের দিয়ে কাপড় চোপড় ধোঁয়ানো, বিনিময়ে আট আনার বুট খাওয়ানো ছিল তার জন্য নিত্য কর্মকান্ডের অংশ।
কয়েক বছর পর,
সেই কিশোর আজ তরুণ যুবকে পরিণত হয়েছে। সদ্য
বি.এস.সি. পাস করে দেশের বিখ্যাত এক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির কমার্শিয়াল এক্সিকিউটিভ হিসেবে জয়েন করেছেন।
সেই যুবক নিজের যোগ্যতায় খুব কম সময়ে এমন নজিরবনজিরবিহীন সাফল্য লাভ করেন।
সেই যুবক শুধুমাত্র ক্যারিয়ার জীবনে সফল নয় বরং ব্যক্তি জীবনেও ছিলেন চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
সে দীনদ্বারও ছিল বটে। পরিবার,আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশীর নিকটও সে ছিল আদর্শ মানুষ ও সকলের প্রিয় পাত্র।
একদিন পড়ন্ত বিকেলে তারিকদের বাড়ির সামনে দুষ্ট ছেলেমেয়েদের দল পড়াশোনা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হই-হুল্লোড় করছে।
তারিক বাড়ির উঠোনে বসে ছিল।
ছেলেমেয়েদের তার কাছে আসার জন্য ডাক দিল।
বাচ্চারা কাছে আসতেই বলল, এই তোরা ‘কুলিয়া সূরা’ (সূরা কাফিরুন) টা মুখস্থ বল দেখি।
পোলাপান পড়ল বেকায়দায়। তাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে “পড়েছি মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে” টাইপের অবস্থা।
কেউই ‘কুলিয়া সূরা’ পারলো না। দুই তিনজন বলার চেষ্টা করলো কিন্তু মাঝখানের দুইটা লাইনে বা শেষে প্যাচঁ লাগিয়ে ভুল করল।
শাস্তি স্বরূপ বাচ্চাদের কান ধরে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখল আর যাওয়ার সময় বলল, ভালভাবে শিখে আসবি তোরা,এরপর থেকে জিজ্ঞেস করলে যেন বলতে পারিস।
বাচ্চারা কোন রকমে পালিয়ে বাঁচল।
তারিক চাকরিসূত্রে বাইরে থাকলেও যখন বাড়িতে আসত তখন গ্রামের মানুষ আর তার ভাইয়েরা রিকশা নিয়ে রেলস্টেশনে অপেক্ষা করত। প্রতি ঈদে তারিক তার বাবা মায়ের জন্য কাপড়, আর সবার জন্য কাপড় বা অন্যান্য কিছু আনত।
একমাত্র সে ছাড়া আর কোন সন্তানের তখনও যে বাবা মায়ের জন্য প্রতি ঈদে কাপড় কেনার তেমন সামর্থ্য হয়নি।
তারিক প্রতিবার বাড়ি এলে এমনভাবে পুরো গ্রামে সাড়া পড়ে যেত যেন কোন প্রধানমন্ত্রী এসেছে। সবাই তার সাথে দেখা করার জন্য ভিড় জমাত।
তারিকের বাবা একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি ছেলেকে বিয়ে করাবেন। কিন্ত এমন ছেলের জন্য যোগ্য মেয়ে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। বহু খোঁজাখুঁজির পর হঠাৎ একদিন….
(বি.দ্র. সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত গল্প)
আমাদের আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক
Kulsuma Bahar Bethi
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE