বাদশাহী আংটি সত্যজিৎ রায় রচিত গোয়েন্দা কাহিনী ফেলুদা সিরিজের একটি উপন্যাস। ১৯৬৯ সালে এটি প্রকাশিত হয়েছিল। উপন্যাসটির উপর চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সন্দীপ রায়, সুবিখ্যাত সাহিত্যিক ও পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের একই নামের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে।

ফেলুদার প্রথম কয়েকটা গল্প যেমন ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি, বাদশাহী আংটি, কৈলাশ চৌধুরীর পাথর ও শেয়াল দেবতা রহস্য, এই গল্পগুলোয় শুধুমাত্র টানটান উত্তেজনা আর থ্রিল ছিল। সত্যজিৎ রায় খেয়াল করেন যে, ছোট বা বড় গল্পে টানা উত্তেজনা ভালো লাগলেও, সেটা উপন্যাসের ক্ষেত্রে খাটেনা। তাই গ্যাংটকে গন্ডগোল লিখবার সময় উনি কমিক রিলিফ হিসাবে নিয়ে এলেন নিশিকান্ত বাবুকে।

“বাদশাহী আংটি” সত্যজিৎ রায়ের একটি বাংলা উপন্যাস, যেখানে তার বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদাকে দেখানো হয়েছে। উপন্যাসটি ১৯৬৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এবং তখন থেকে বাংলা গোয়েন্দা কথাসাহিত্যের একটি ক্লাসিক হয়ে উঠেছে। গল্পটি “বাদশাহী আংটি” নামক একটি অমূল্য মুঘল যুগের হীরাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, যা মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মালিকানাধীন বলে জানা যায়। 

বাদশাহী আংটিতে তোপশে ও তার বাবার সাথে ফেলুদা লখনউয়ের বড়া ইমামবাড়ার নিকট বসবাসরত তাদের অ্যাডভোকেট আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যায়।

তোপশের বয়স তখন কম, সবে মাত্র ১৭ কি ১৮ হবে। সেখানে তারা ডা. শ্রীবাস্তবের সাথে দেখা করেন, যার বাড়িতে সম্প্রতি ডাকাতির চেষ্টা করা হয়েছিল। তার বন্ধু পেয়ারেলাল কর্তৃক প্রদত্ত একটি অমূল্য আংটি চুরির উদ্দেশ্যেই চেষ্টাটি করা হয় বলে সকলের ধারণা করে। আংটিটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের।

ফেলুদা তার চাচাতো ভাই তোপশে এবং বন্ধু লালমোহন গাঙ্গুলী (জটায়ু) এর সাথে রহস্যের সমাধান করতে বের হয়। আবারও ডাকাতির ভয়ে তিনি এটাকে তার বন্ধুর বাসাতে রেখে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে থেকেও আংটিটি চুরি যায়।

এরমধ্যেই ফেলুদা ডাক্তারের প্রতিবেশী বনবিহারীবাবুর সাথে দেখা করেন, যিনি নিজের বাড়িতে একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা নির্মাণ করে সেখানে কুমির, আফ্রিকান বাঘ, হায়েনা, র‍্যাটলস্নেক, কাঁকড়াবিছে ও ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা পোষেন। 

ফেলুদা পেয়ারেলালের ছেলে মহাবীরের সাথেও দেখা করেন। মহাবীর একজন চলচ্চিত্র পরিচালক এবং অনেকে মনে করেন তার বাবার মৃত্যুর পিছনে তারও হাত থাকতে পারে। এরমধ্যে তারা লক্ষ্ণণ ঝুলা মন্দির, হরিদ্বার যান।

পরে তোপশে জানতে পারে আংটি দ্বিতীয় দফা চুরি যায়নি, বরং তা আছে ফেলুদার কাছে। আংটিটি আসলে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ফেলুদাই নিজের কাছে রেখেছেন। তিনি এই কাজ করেছেন আসল চোরকে ধরার জন্য। হরিদ্বারে যাওয়ার পর আসল রহস্য সামনে বেরিয়ে আসে। শুধু চুরির রহস্য নয় বরং মহাবীরের বাবাকে খুন এবং তিনিও যে আংটিটি চুরি করেছিলেন তা জানা যায়। 

যাত্রাপথে ফেলুদা ও তোপসে বনবিহারীবাবুর গাড়িতে করে যায়, এবং তখনই জানা যায় যে বনবিহারী বাবুই এর পিছনের মূল হোতা। সে ফেলুদা ও তোপসেকে আটকে ফেলে। কিন্তু ফেলুদা তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মরিচের গুঁড়া অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বনবিহারীবাবু ও তার সহকারী গণেশ গুপ্তকে আটক করে। সত্যান্বেষী ফেলু কঠিন রহস্য সমাধান করেন। 

শুধু উপন্যাসেই নয় বরং চলচ্চিত্রেও এই কাহিনি সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন সন্দীপ রায়। সত্যজীত রায়ের লেখার শৈলী আকর্ষক এবং প্লটটি মোচড় ও বাঁক পূর্ণ, পাঠককে সর্বত্র ব্যস্ত রাখে। 

চরিত্রগুলি ভালভাবে বিকশিত হয়েছে, ফেলুদার ক্ষুর-তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং জটায়ুর হাস্যকর অ্যান্টিক্স গল্পে একটি নিখুঁত ভারসাম্য প্রদান করে। এই উপন্যাসটি মুঘল যুগের ইতিহাস ও সংস্কৃতিরও বর্ণনা দেয়, যেখানে সত্যজিৎ হীরার প্রাণবন্ত বর্ণনা এবং এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য প্রদান করেছেন। 

উপন্যাসটি লেখার সময় কলকাতার আর্থ-সামাজিক অবস্থাও তুলে ধরে। সামগ্রিকভাবে, “বাদশাহী আংটি” একটি রোমাঞ্চকর গোয়েন্দা উপন্যাস যা সময়ের পরীক্ষায় দাঁড়িয়েছে। এটি বাংলা সাহিত্যের অনুরাগী এবং যারা একটি ভাল রহস্য উপভোগ করেন তাদের জন্য এটি অবশ্যই পড়া উচিত।

 

আরো ব্লগ পড়ার জন্য লিংকে ক্লিক করুন-

নামঃ মারিয়া আফসা

ইন্টার্ন , কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE