ডেড সি সত্যিই রহস্যঘেরা। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত একে নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। ইতিহাস থেকে জানা যায়। গ্রিক লেখকরাই প্রথম এর নামকরণ করেন ‘ডেড সি’। ইহুদিরা অবশ্য অন্যান্য নামের সঙ্গে একে ‘লবণ সাগর’ বলতেন। আরব লেখকেরা এর নাম দিয়েছিলেন ‘পুঁতিময় গন্ধ সাগর’। আর আমরা যারা বাংলাভাষি তারা বলি ‘মৃত সাগর‘।

উল্লেখ্য, এই একটি হ্রদ যা জর্ডান এবং ইসরাইলের মধ্যে অবস্থিত। প্রায় ৪৮ মাইল দীর্ঘ এবং ৩ থেকে ১১ মাইল প্রস্থের এই সরু সাগর পৃথিবীর নিম্নতম জলভাগ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ মিটার নিচে অবস্থিত। এই সমুদ্রের দক্ষিণাংশে একেবারে অগভীর কিন্তু উত্তরাংশের গভীরতা প্রায় ৪০০ মিটার।

মরু সাগর বা ডেড সি থেকে কোনো নদীই বেরোইনি। তবে উত্তর থেকে জর্ডান নদীর চারপাশের ঢালগুলো থেকে ছোট ছোট জলাধার এসে মিলিত হয়েছে এর সঙ্গে। একমাত্র বাষ্পীভবনের মাধ্যমে এর বাড়তি পানি অপসারিত হয়। 

ডেড সি অঞ্চলের আবহাওয়া শুকনো। সারা বছর প্রচণ্ড রোদ। বাষ্পীভবনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। বিপুল পরিমাণে খনিজ পদার্থ যেমন লবণ, পটাশ, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড এবং, ব্রোমিন দ্রবীভূত অবস্থায় এর পানিতে থেকে যাচ্ছে। 

ডেড সি এর পানির স্তর ২ ভাগে বিভক্ত। নিচের অংশকে বলা হয় ‘ফসিল ওয়াটার বা জীবন্ত পানি’ এই স্তরের বয়স হাজার হাজার বছর। ভূপৃষ্ঠ থেকে লবণ এবং নানা রূপে খনিজ পদার্থ এই সমুদ্রে এসে পড়ে। 

পশ্চিমে স্বস্তির্ণ পর্বতমালা আর পূর্বে শেয়ার পর্বতমালা যেন দুই প্রাচীর। এই দুই বাধা পেরিয়ে বর্ষার জলধারা ও মেঘ এ অঞ্চলে আসতে পারে না। এলেও অতি সামান্য। ফলে এখানে বৃষ্টি নেই বললেই চলে। গড় বৃষ্টিপাত ৫০ থেকে ৭০ মিলিমিটার। সারা বছর দৈনিক তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মে কখনো এ তাপমাত্রা দাঁড়ায় প্রায় ৫৪ ডিগ্রি। 

আরেকটি বিষয় হলো স্বাভাবিকভাবে  সাগরের পানিতে যেখানে লবণের পরিমাণ ৪ থকে ৬ ভাগ। সেখানে ডেডসিতে লবণের পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ ভাগ তাই এর পানি পান করলে শুধু লবণাক্ততার কারণেই ক্ষতি হবে না বরং ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইডের কারণেও হবে।  অসুস্থ হতে পারে মুহূর্তের মধ্যেই। 

ডেড সি তে বেশি পরিমাণ লবণ থাকাতে জীববিজ্ঞানীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এখানে কোনো জীব বেঁচে থাকতে পারে না। উল্লেখ্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু জলাধার হলো এই মরু সাগর। সমুদ্রের পানি থেকে এর লবণাক্ততা ছয় গুণ বেশি।

বিভিন্ন ধরনের প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ এর পানিতে দ্রবীভূত থাকায় ডুবে মরার ভয় নেই। ঘাড়, মাথা সারাক্ষণ ভেসে থাকবে পানির উপরে। অপরদিকে, এসব খনিজদ্রব্য খুবই মূল্যবান। হিসাব করে দেখা গেছে প্রায় বিশ লক্ষ টন পটাশ এই পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় রয়েছে, যা কৃত্রিম সার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

লক্ষ লক্ষ বছর আগে এই সমুদ্রের উচ্চতা এখনকার চেয়ে চারশত বিশ মিটার উঁচু ছিল। বর্তমান ভূমধ্যসাগরের সমান। তখন সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু প্রচুর খরার কারণে এতো পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যায় । কোনো জীবের অস্তিত্ব নেই বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে ডেড সি বা মৃত সাগর। 

কিন্তু অনেক গবেষণায় জানা গেছে, বর্তমানে সেখানে জীবের অস্তিত্ব রয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে ডেড সি এর পানিতে এখন এক ধরনের জীবাণু হয়েছে যাদের ধাতু নিষ্কাশন কাজে লাগানো যাবে। কাজে লাগানো যাবে সৌরশক্তি ব্যবহারেও। 

আসলে ডেড সি এক অবর্ণনীয় চমক মানুষের জন্য। যারা কখনো ডেড সি তে গোসল করেনি তারা এই আশ্চর্য অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করতে পারেনি।

১৯৩৯-৪৫ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন  সময়ে এ এলাকার আশেপাশে বিভিন্ন ধরনের অনুসন্ধানী দল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা তেমন কিছু আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে ১৯৪৬-৪৭ সালে ডেড সি এর পার্শ্ববর্তী পাথরে  হিব্রু ও আরকানা ভাষার শিলালিপি এবং বাইবেলের কিছু পাণ্ডুলিপির খোঁজ পাওয়া গেছে। 

কিছুকাল আগেও জরিপের কাজ চালাতে গিয়ে ডেড সি এর দক্ষিণাংশের অগভীর পানির নিচে বিভিন্ন ধরনের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। যা সারা  বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। 

পরিশেষে, যদিও এই অভিশপ্ত ডেড সি এর এর আশেপাশে এখনো পর্যন্ত কোনো বসতি গড়ে ওঠেনি তবুও এটি  ঐতিহাসিক গুরুত্ব পেয়েছে। তাই ডেড সি শুধু ডেড সি নয়। ভবিষ্যতে ডেড সি যাতে মানুষের মঙ্গল বয়ে আনে বিজ্ঞানীরা তে সেজন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে

আরো ব্লগ পড়তে এখানে #ক্লিক করুন। 

Joy Barua 

Intern, 

Content Writing Department. YSSE