বর্তমানে মানুষের অ্যাটেনশন স্পান দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর কারণ হলো ডোপামিনের সহজ ও অতিরিক্ত সরবরাহ।
ডোপামিন কি?
ডোপামিন এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার যা মানুষের মনে আনন্দভাব উৎপন্ন করার জন্য দায়ী ৪টি হরমোনের মধ্যে একটি। কোনো আবেগ ও উত্তেজনা অনুভূতিতে মানুষ কিভাবে সাড়া দিবে, তা ডোপামিন ক্ষরণের উপর অনেকটা নির্ভর করে।
সহজে ডোপামিন পাওয়ার ক্ষতি :
আমরা আজ হাতের কাছেই মোবাইল, টিভি ,ল্যাপটপ সব পেতে পারি। মোবাইল খুললেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টিকটক আরো কত কি! আমরা এখানের পেজ গুলো স্ক্রল করতে থাকি অনবরত।
একটার পর একটা পোস্ট, একটার পর একটা শর্টস ভিডিও দেখতে দেখতে কবে যে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পার হয়ে যায় টেরই পাওয়া যায়না।
কারণ মাঝেমাঝে আমরা কোনো ফোকাস ছাড়াই পোস্টগুলো দেখি, একটু আগেই কি পোস্ট দেখেছি মনে করতে পারি না ,এমন হতে পারে। কারণ কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে অনেক কন্টেন্ট দেখার কারণে আমাদের মনযোগ বারবার ভঙ্গ হতে থাকে।
ফেসবুকে কোনো নোটিফিকশন আসে ,মেসেজ আসে,এগুলো আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন এর আগমন ঘটায়। এসব কারণে আমরা সহজেই ডোপামিন পাই। আমরা বিনোদনে মক্ত হওয়াতে এবং কোনো কিছুর ইনস্ট্যান্ট ফিডব্যাক পেতে অভ্যস্ত হয়ে যাই। যার ফলে আমরা বেশিক্ষণ ফোকাস করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি ধীরে ধীরে।
এরপর যখন আমরা কোনো জরুরি কাজ করতে যাই তখন মনে হয় কাজটাতে কোনো মজাই নেই। কোনো ইনস্ট্যান্ট ফিডব্যাক নেই। পড়ালেখা করা বা কোনো স্কিল শিখতে যে চেষ্টা করা লাগে তা আমরা করতে চাই না বা পারি না ,কারণ আমরা খুব সহজে ডোপামিন পেতে অভ্যস্ত। তাই কোনো ধীর গতির বা কষ্টকর কাজ আমাদের ভালো না।
তাই আমরা ক্ষতিকর উৎস গুলোর প্রতি আসক্ত হতে থাকি। সোশ্যাল মিডিয়া, নেশা করা ,সিগারেট খাওয়া এসব সহজ ডোপামিনের উৎস,এবং আসক্তির কারণ।
ডোপামিন ডিটক্স কি?
ডোপামিন ডিটক্স বা ডোপামিন ফাস্টিং এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে এসব ইনস্ট্যান্ট ডোপামিন পাওয়া উৎস গুলো থেকে আমরা ছুটি নিতে পারি। যখন আমরা বিরতি নিয়ে কিছুদিন নিজের জীবনে মনোযোগ দিতে থাকি,তখন দেখা যায় আমরা আস্তে আস্তে আমাদের হারিয়ে যাওয়া ফোকাস ফিরিয়ে আনতে পারছি।
ডোপামিন ডিটক্স কেন জরুরি?
ফোকাস আমাদের অনেক বড় সম্পদ। যেকোনো কাজ আমরা কত সময় নিয়ে করছি তার চেয়ে জরুরি হলো কতটা মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি এবং কেমন ফল আনতে পারছি।
আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া অথবা ডোপামিনের যেকোন ক্ষতিকর উৎস বেশি ব্যাবহারের কারণে আমাদের মস্তিষ্কে এর প্রচন্ড খারাপ প্রভাব পড়ে।
আমরা কোনো কাজে বেশিক্ষণ মনোযোগ দিতে পারি না।
একটু কাজ করলেই আমাদের ফোকাস ভেঙে যায় আর আমরা আবারও ল্যাপটপ মোবাইল এর দিকে ঝুঁকে যাই।
যার ফলে আমাদের দৈনন্দিন কাজ গুলো আমরা শেষ করিনা এবং পুরা দিনটাই শুধু সময় নষ্ট করে কাটিয়ে দেই
এর বিরূপ প্রভাব পরে আমাদের লেখাপড়ায়,আমাদের কাজে, আমাদের মস্তিষ্কে এবং আমাদের স্বাস্থের উপর।
কিভাবে ডোপামিন ডিটক্স করা যায়?
আমরা নির্ধারণ করতে পারি যে আজ থেকে তিনদিন অথবা পাঁচ দিন আমি সোশ্যাল মিডিয়া, সিনেমা দেখা,বা যেকোনো অস্বাস্থ্যকর ডোপামিনের উৎস ত্যাগ করবো অথবা সীমিত ব্যাবহার করবো।
প্রথমে তিন চার দিনের জন্য শুরু করে পরবর্তীতে সাত দিন,এক মাস এভাবে করে সময় বাড়ানো যাবে।
কিছুদিন করতে থাকলে আমরা আমাদের ফোকাস এর পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারি।
ডোপামিন ডিটক্স এর উপকারিতা :
ডোপামিন ডিটক্স এর কারণে আমরা আমাদের ফোকাস বাড়াতে পারি। যখন আমরা সহজে ডোপামিন পাওয়া বন্ধ করে দেই,তখন আমাদের ব্রেইন এর কাছে অন্য কাজ গুলোই ডোপামিনের উৎস হয়।
যার ফলে কঠিন কাজগুলো করতে আমাদের কষ্ট কমতে থাকে এবং আমরা মনযোগ দেয়ার ক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে তুলতে পারি। আমরা আসলেই কাজগুলো উপভোগ করতে পারি।
যত আমরা সহজ ডোপামিন কমাতে থাকি,আমাদের মন তত শান্তি পেতে থাকে। সব ক্ষতিকর জিনিসে মন যখন ভারী হয়ে থাকতো তখন কিছু চিন্তা করা যেত না। তবে এখন মনের প্রশান্তি অর্জন করা যায়।
তাই চেষ্টা করুন যথা সম্ভব সহজ ও ক্ষতিকর ডোপামিনের উৎস গুলোর ব্যাবহার কমিয়ে দিতে।
আর কিছুদিন পর পর ডোপামিন ডিটক্স এর কারণে এক সময় আপনি অভ্যস্ত হয়ে যাবেন এই প্রক্রিয়ার মধ্যে।তখন আপনি খুব সহজেই কঠিন কাজগুলো জয় করে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন বহুদূর।
আরও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
Writer,
Ramisa Shamrin Chowdhury
Intern, Content Writing Department,
YSSE