আমি কেন আছি এখানে? আমার সাথে কি হয়েছে? আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা। আর কিছু ভাবতে চাইও না।

আমি কেনো লিখছি জানিনা,  আমার মনে হয় লিখে রাখা উচিৎ, যেন আমার মৃত্যু হলে সবাই জানে। কিন্তু এখন কাউকে জানানো যাবেনা।

এই গল্পের শুরুটা হয় এক বছর আগে। আমি, পৃথ্বী, জর্জ, চার্লি, মিলি তখন কার্নাটাকের একটি কলেজে পড়ছি। রিসার্চের কাজে আমাদের যেতে হয় একটি গ্রামে। গ্রামের নাম মাত্তুর। 

এখানের লোকেরা এখনো সংস্কৃত ভাষায় কথা বলে দেখে, আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হয় তাদের সাথে কথা বলতে। তাই সেখানকার একজনকে আমরা সাথে নিই ভাষা বোঝার জন্য।

ওই লোকের বাড়িতেই থাকা হয় আমাদের। আমি জর্জ এবং চার্লি একরুমে থাকি এবং পৃথ্বী অন্যরুমে। ওদের ঘরগুলো পুরনো ভিটের মতো। মাঝখানে উঠোন আর চারিদিকে ঘর। উঠোনের মাঝে একটি তুলসি গাছ। উঠোনের বা দিকে আমরা থাকি আর ডানদিকে সোজা বরাবর থাকে পৃথ্বী। 

সেইদিন পৌঁছাতে রাত ১টা বেজে যায়। আমরা খুব বেশি ক্লান্ত ছিলাম বলে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে যাই। ভোর যখন পাঁচটা পৃথ্বীর ডাকে ঘুম ভাঙলো। আমাদের ডেকে বাইরে নিয়ে গেলো। কি সুন্দর অপরূপ দৃশ্য। রাতের অন্ধকারে বোঝা যায়নি কিছু। 

এ যেনো পৃথিবীর মাঝে ছোট্ট স্বর্গপুরী। বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছু দূর সামনে গেলেই একটা বড় নদী। নদীর ঘাটে নৌকো বাঁধা।

আমরা সকালের নাস্তা সেড়ে চট করে রেডি হয়ে নিলাম লাইব্রেরি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। যেহেতু এইখানের মানুষ এখনো সংস্কৃত ভাষায় কথা বলে, তাই লাইব্রেরিতে অনেক পুরনো কিছু বই পাবো বলে বেড়িয়ে গেলাম সব থেকে পুরনো লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে।

নদী পার হয়ে লাইব্রেরি যেতে প্রায় এক ঘন্টার রাস্তা। পৌঁছে দেখলাম লাইব্রেরির বাহ্যিক কাঠামো বেশ পুরনো। মেরামত করা হয়না অনেকদিন। দোতলা একটি লাইব্রেরি কিন্তু বিশাল বড় জায়গা জুড়ে। 

লাইব্রেরিতে নানান পুরনো বই। দেখে মনে হলো অনেক বছর পুরোনো। লাইব্রেরির শেষ মাথায় একটি তালাবদ্ধ আলমারি চোখে পড়লো জর্জের। লাইব্রেরিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো কি আছে এতে?

তিনি বললেন অনেক পুরনো বই ডায়েরি এসব কিছু আছে। আমি তালা খুলে দিতে বললাম। সব ঘাটাঘাটি করে চোখ পড়লো একটি পুরনো ডায়েরির দিকে। ডায়েরিটা ৪০০ বছরের পুরনো। কিন্তু এটিতে সংস্কৃতের পাশাপাশি, সাইন সিম্বলও ব্যবহার করা। আমি কাউকে না জানিয়ে ডায়েরিটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম।

এরপর থেকেই কাল রাত্রি শুরু। রাত যখন তিনটা হঠাৎ একটা পঁচা গন্ধ নাকে ভেসে আসলো আর সাথে সাথে ঘুম ভাঙলো। মনে হচ্ছে ব্যাগের ভিতর থেকে আসছে। ব্যাগ খুলতেই দেখি ডায়েরিটা আমার হাতে পেচিয়ে বাইরে বের হয়ে আসছে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠার সাথে সাথেই জর্জ উঠে ডায়েরিটা হাত থেকে জোড়ে টান দিয়ে সরালো।

বাড়ির সবাই চলে আসলো, জর্জ বললো খারাপ স্বপ্ন দেখে চিৎকার করেছে তাই সবাই যার যার রুমে চলে গেলো। পৃথ্বীকে সবটা বলার পরও বললো ডায়েরিটা আমরা লাইব্রেরিতে কাল সকালেই রেখে আসবো। 

সকাল হতেই ডায়েরি রেখে আসলাম লাইব্রেরিতে। তারপর জর্জ বললো লাইব্রেরির পেছনের জঙ্গলে যাবে সে। পৃথ্বী যেতে চাইলোনা, তাই ওকে অনেকটা জোর করেই নিয়ে যাওয়া হলো। কিছুটা এগোতেই হঠাৎ করেই মেঘের ঘনঘটা ছেয়ে গেলো চারদিকে। 

হঠাৎ করেই একরাশ বাতাসের কবলে পড়লাম আমরা, দৌড়ে একটি বড় গাছের নিচে অবস্থান নেই। গাছটি বেশ বড় আর চওড়া। গাছের গায়ে নানান ধরনের চিহ্ন আকাঁনো। হঠাৎ ঝড়ো হাওয়া থেমে গেলো। আমি আবার সেই পঁচা গন্ধ পাচ্ছি, বাকিরা বললো তারা নাকি পাচ্ছেনা। 

হঠাৎ করেই গাছের পিছন থেকে কিছু একটা আমায় টেনে ধরলো। জর্জ গিয়ে দেখলো ডায়েরিটা। কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলাম। আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা কি হয়েছে। হঠাৎ মনে হলো মহীশূরকে বলা যায়, যে কিনা আমাদের গাইড হিসেবে আছে। 

ওকে রাতে ডেকে সব খুলে বললাম, ও শোনার পর যেভাবে বিস্মিত হয়েছিলো তা দেখার মতো নয়।

আরও ব্লগ পড়তে লিংকে ক্লিক করুন-

 

মারিয়া আফসা

ইন্টার্ন,

কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE