“একজন সফল উদ্যোক্তা সবসময় পরিবর্তনের জন্য কাজ করে,

 সুযোগের অনুসন্ধান করে এবং প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগায়।”

– পিটার ড্রকার

দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যায়, সাফল্যের প্রচলিত পথটি একটি কলেজ ডিগ্রি এবং একটি স্থিতিশীল চাকরির সাথে সম্পর্কিত। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, একটি নতুন উদ্যোগ দেখা দিয়েছে: শিক্ষিত বেকার ব্যক্তিদের স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তায় পরিণত হওয়া। উক্ত পদক্ষেপটি এই ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করে যে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সফলতার একমাত্র পথ নয় বরং আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক দক্ষতার গুরুত্ব অপরিসীম।

সেই দিনগুলি চলে গেছে যখন একটি ডিগ্রি; নিরাপদ চাকরি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দিতে পারতো। আজ চাকরির বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং সাম্প্রতিক সময়ে অনেক স্নাতকধারী তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে নিজেদের বেকার হিসেবে বা তুলনামূলক কম যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মসংস্থানে খুঁজে পায়। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক দক্ষতা এবং উদ্যোক্তা মনমানসিকতার সাথে স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বদের পরিচয় করাতে ব্যর্থ হয়। কিন্ত আশার ব্যাপার এই, ব্যাক্তিপর্যায়ে অনেকেই এই বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা করা শুরু করেছে এবং স্ব-শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা আরম্ভ করছে।

একজন স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তা হওয়ার প্রধান সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল নিজের পছন্দমত আগ্রহ তথা ‘প্যাশন’ অনুসরণ করার স্বাধীনতা পাওয়া। একটি পূর্বনির্ধারিত পাঠ্যক্রম মেনে চলার পরিবর্তে, স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তারা তাদের নিজস্ব শেখার অভিজ্ঞতা এবং তাদের নির্বাচিত ক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট প্রাসঙ্গিক দক্ষতার উপর মনোনিবেশ করার স্বায়ত্তশাসন পেয়ে থাকে। তাদের শিক্ষাকে প্রয়োজন অনুসারে কাজে লাগানোর এই ক্ষমতা তাদের ব্যবহারিক দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করে যা তাদের সফল উদ্যোক্তা হবার পথ সুগম করে দেয়। 

অধিকন্তু, স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তারা প্রায়ই স্ব-প্রেরণা এবং আত্মবিশ্বাসের একটি সপ্রতিভ প্রতিচ্ছবি প্রদর্শন করে থাকে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার কাঠামো এবং নির্দেশনা ছাড়াও, তাদের শিখতে এবং বাধা অতিক্রম করতে নিজস্ব দৃঢ় সংকল্প এবং সক্ষমতার উপর নির্ভর করতে হয়। এই স্ব-নির্দেশিত শেখার প্রক্রিয়াটি আত্ম উন্নয়নের মনমানসিকতা এবং ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছার জন্ম দেয়, যা উদ্যোক্তা জগতে সাফল্যের জন্য অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। এটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অভিযোজন করার শিক্ষা দিয়ে থাকে এবং ব্যর্থতা থেকে শেখার ক্ষমতাও গড়ে তোলে। কারণ স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের অবশ্যই নিজেদের গতিশীল উন্নতির জন্য প্রয়োগকৃত কৌশলগুলির ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি এবং পরিমার্জন করা আবশ্যক।

 

“প্রত্যেক মানুষই উদ্যোক্তা হয়ে জন্ম নেন। 

কিন্তু সমাজ তাকে এমনভাবে মগজধোলাই করে যে তিনি চাকরি খুঁজতে বাধ্য হন। 

সেজন্য বেকারত্ব দেখা দেয়।”

 – ড. মুহাম্মদ ইউনূস

একজন স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তা হওয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল কাজ করায় নমনীয়তা পাওয়া যায় এবং তৎপরতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। যেহেতু প্রযুক্তি এবং শিল্পের দ্রুত পরিবর্তন ঘটে, তাদের সব সময় নতুন ধারণা এবং উপায় নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন পড়ে। স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তারা প্রায়শই এসব উদীয়মান প্রবণতার সম্মুখে থাকে, পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তি এবং চাহিদার সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তারা পুরানো পাঠ্যক্রম বা প্রথাগত প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তারা নতুনত্বে বিশ্বাসী।

তবে, এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তবুও অনেকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি কাঠামোগত শিক্ষার পরিবেশ, বিশেষ কিছু বিষয়ে জ্ঞানার্জন, নেটওয়ার্কিং এবং পারস্পারিক সহযোগিতার সুযোগ প্রদান করে। উপরন্তু, কিছু শিল্প যেমন ওষুধ বা প্রকৌশল ইত্যাদির জন্য আনুষ্ঠানিক প্রশংসাপত্র এবং লাইসেন্স প্রয়োজন যা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। উপরন্তু, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সমালোচনামূলক চিন্তা দক্ষতার একটি শক্ত ভিত্তি প্রদান করতে পারে যা যেকোনো উদ্যোক্তার জন্যে মূল্যবান।

 

পরিশেষে, ‘শিক্ষিত বেকার এবং স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তা’- দুইটি বিষয় নিজ নিজ জায়গায় স্বতন্ত্র। উভয় পথেরই সুবিধা এবং ত্রুটি রয়েছে। পরিস্থিতি এবং লক্ষ্যগুলির উপর নির্ভর করে উভয় বিষয়ের কার্যকারিতা পরিবর্তিত হতে পারে। অনেকে যেমন উদ্যোক্তা হওয়ার আগে বিশেষ জ্ঞান অর্জনের জন্য উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করাটা বেছে নিতে পারে তেমন অন্যরা স্ব-শিক্ষা বেছে নিতে পারে এবং অবিলম্বে তাদের উদ্যোক্তা হবার যাত্রা শুরু করতে পারে। স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের উত্থান প্রথাগত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে যে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাই সাফল্যের একমাত্র পথ।

যদিও কলেজ ডিগ্রি এখনও কিছু নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে মূল্যবান হতে পারে, চাকরির বাজারের দ্রুত পরিবর্তনশীলতা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। চাকরির বাজারে দক্ষ মানুষের অভাব যতই স্বশিক্ষা বৃদ্ধি হোক না কেন। সঠিক দক্ষতা আর চাকরির জন্যে না ছুটে উদ্যোক্তারা যাতে নতুন চিন্তা, সুষ্ঠ পরিবর্তন আনতে পারে সেদিকে আরও নজর দিতে হবে। শেখার অভিজ্ঞতার ধরন নির্ণয় করার ক্ষমতা, গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার বিকাশ এবং চাকরি বাজারের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার নমনীয়তা প্রভৃতি স্ব-শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের লভ্য সুবিধা।

সে অর্থে এটা বলাই যায় যে, বিশ্বের ক্রমবিকাশের সাথে সাথে দেশের সার্বিক উন্নয়নে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং স্ব-নির্দেশিত শিক্ষা উভয়ের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

আরও ব্লগ পরতে এখানে ক্লিক করুন।

Syed Yaseen 

Intern, 

Content Writing Department, YSSE