বিশ্বে বহুজাতিক কোম্পানি গুলোর মধ্যে ব্রিটিশ-ডাচ যৌথ মালিকানায় ইউনিলিভার অন্যতম । দৈনন্দিন ব্যবহার্য সকল পন্যের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আসা ইউনিলিভারের শুরুটা একদম সাদামাটা। যার শুরুটা হয়েছিল সাবান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে। কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ প্রতিষ্ঠানে মতো যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে পণ্যের খ্যাতি পৌঁছে গেছে বিশ্বের ১৯০ টি দেশে। মূলত পণ্যের গুনগত মান, চাহিদা, উৎপাদন, বিপণন বাজার ব্যবস্থা ইউনিলিভারকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক তুমুল জনপ্রিয় এই প্রতিষ্ঠানের পেছনের গল্প।
ইউনিলিভারের জন্মকথা :
আজকের ইউনিলিভার কোম্পানি শুরুতেই ইউনিলিভার ছিল না। ১৮৮০ সালের দিকে একজন ব্রিটিশ সেলসম্যান, যার নাম উইলিয়াম হেসকেথ লিভার। যিনি একটা সময় চিন্তা করলেন সাবান উৎপাদন করবেন। কেননা সেই সময় সাবানের উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় চাহিদাও ছিল বেশ। তার হাত ধরেই উৎপাদিত হয় Sunlight pure soap যা তৎকালীন সময় বেশ সারা ফেলে দেয়।
লিভার ব্রাদার্স এর অগ্রযাত্রা
উইলিয়াম লিভারের সাথে তার ভাই জেমস লিভার যোগ দেন এবং একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেন। ১৮৮৫ সালে দুজনে মিলে “লিভার ব্রাদার্স “নামে একটি কোম্পানি খুলেন। ক্রমেই তাদের কোম্পানির প্রসার হতে থাকে।
ফলশ্রুতিতে ১৯১০ সালের দিকে যুক্তরাজ্যের বিক্রিত সাবানের মধ্যে সবার উপরে ছিল লিভার ব্রাদার্সের সাবান।
মার্জারিন ইউনির সাথে যোগদান
১৯১৭ সালের আগ পর্যন্ত লিভার ব্রাদার্স কোম্পানিটি শুধু মাত্র সাবান প্রস্তুত করতো।
পরবর্তীতে তারা খাদ্যদ্রব্যও উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়। অতঃপর ১৯৩০ সালে নেদারল্যান্ডসের কোম্পানি মার্জারিন ইউনির সাথে একতাবদ্ধ হয়ে ইউনিলিভার নাম ধারণ করেন।
সাশ্রয়ী মিনি প্যাকের যাত্রা
একটা সময় রূপচর্চায় প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবহার ছিল নিতান্তই ধনী মানুষের নাগালে। দামী প্রসাধনীর ব্যবহার সাধারণ মানুষের কল্পনার একপ্রকার বাইরেই ছিল। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে ইউনিভার প্রথম সাশ্রয়ী মিনি প্যাকে শ্যাম্পুর প্রচলন করেন ২০০৩ সালে। যা পরবর্তীতে সব শ্রেনির নিকট বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।
রূপচর্চায় লাক্স সাবান
আজকের দিনে পৃথিবীর এমন কোন মানুষ নেই যিনি লাক্স সাবান ব্যবহার করেননি। সৌন্দর্যপীপাসু নারীদের নিকট বিউটি সুপ হিসেবে লাক্স প্রথম পছন্দ। এটির যাত্রা শুরু হয় ১৯০৯ সালে। অতঃপর একে একে ১৯৫৪ সালে সান সিল্ক, ১৯৫৭ সালে ডাভ বাজারজাত করা হয়। খাদ্য, পানীয়, পরিস্কারক ও পণ্য সামগ্রীর পাশাপাশি প্রসাধনীর বাজারেও একচেটিয়া রাজত্ব। বর্তমানে এই কোম্পানি ৪০০ এর অধিক পণ্য নিয়ে একটি গ্লোবাল ব্রান্ডের পরিনত হয়েছে।
বাংলাদেশে ইউনিলিভারের যাত্রা
বর্তমানে বাংলাদেশে ৯৫% মানুষ ইউনিলিভারের পণ্য ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু তা একদিনে সম্ভব হয়নি। ভারতীয় উপমহাদেশে এই কোম্পানি পথচলা শুরু ১৯৩৩ সালে। পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানে কারখানা স্থাপন করেন ১৯৪৮ সালে এবং পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬৪ সালে। তবে অফিসিয়ালি বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু ১৯৭৩ সালে লিভার ব্রাদার্স বাংলাদেশ নামে।
তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ইউনিলিভারের পথচলা স্বরণীয় করে রাখতে সম্প্রতি “যাত্রা ” নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
ইউনিলিভারের প্রচারণা
প্রচারণার অংশ হিসাবে ইউনিলিভার ব্যান্ড এম্বাসাডর নির্বাচন করে থাকে সেই সাথে বিভিন্ন বিউটি কনটেস্টর আয়োজন করে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে।
পরিশেষে, যে কোনো উদ্যোগ সেটা ছোট করে হলেও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণসরূপঃ ইউনিলিভার হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত। কেননা, খুব সাদামাটা একটি উদ্যোগ আজকে জগৎ বিখ্যাত হওয়ার পেছনে রয়েছে অনবরত লেগে থাকা, পরিশ্রম, সঠিক পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দক্ষতা।
আরও ব্লগ পরতে এখানে #ক্লিক করুন।
Writer
Baitul Hikma
Intern,Content writing Department. YSSE.