{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":false,"containsFTESticker":false}

 

বাংলাদেশের একটি সবুজ গ্রামের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা ছোট্ট একটি নদীর ধারে একটি ছিমছাম পরিবারে বড় হচ্ছিলো আয়েশা নামের এক যুবতী। ছোটবেলা থেকেই  সুন্দর একটি ভবিষ্যত গড়ার এক জ্বলন্ত সংকল্প এবং জ্ঞানের জন্য অতৃপ্ত তৃষ্ণা ছিলো আয়েশার। কিন্তু তার স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে যখন বড় হওয়ার পর ধীরে-ধীরে সে জানতে পারলো তার বাবা-মা তাকে আর পড়ালেখা করতে দিবেনা, কারণ তাদের এলাকায় মেয়েদেরকে শিক্ষার চেয়ে পরিবারিক দায়িত্বগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারেই বেশি জ্বরে দেওয়া হয়।

 

অনেকগুলো বছর কেটে গেলো, ছোট্ট আয়েশা এখন অনেক বড় হয়েছে। সে এখনো স্বপ্ন দেখে, কারণ তার শেখার আকাঙ্ক্ষা কখনো হার মানেনি।

কিন্তু আয়েশা কখনোই  জানতোনা কীভাবে তাঁর জীবন একটি নতুন এক মোড় নিতে চলেছে, এবং কীভাবে একটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি তাঁর জীবনে শিক্ষার একটি দ্বিতীয় সুযোগ নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছে। গ্রামের বড়দের থেকে সে জানতে পারে যে তার বাড়ির খুব কাছাকাছি একটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। আয়েশাদের গ্রাম প্রত্যন্ত এলাকায়, এবং আগে কখনো তার গ্রামের এতো কাছাকাছি এমন কোনো উদ্যোগের ব্যাপারে সে শুনেনি। ইদানীং তার এলাকায় কয়েকজন এনজিও কর্মী বেশ কয়েকদিন যাবতই বাড়ি-বাড়ি যেয়ে সবাইকে তাদের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে বলছেন। কৌতূহলী হয়ে এক বুক আশা নিয়ে আয়েশা সাহস জোগাড় করলো, এবং কেন্দ্রটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

 

সেখানে যাওয়ার পর আয়েশা দেখলো উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্রটি ছিলো খুবই প্রাণবন্ত, শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের হাসি এবং উৎসাহের গুঞ্জনে ছিলো পরিপূর্ণ।  শিক্ষকরা উৎসাহী হয়ে আয়েশাকে খোলা হাতে স্বাগত জানান, কেনানা তারা আয়েশার মতো ব্যক্তিদের নিরক্ষরতার শিকল থেকে মুক্ত করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

সুন্দর এই পরিবেশে আয়েশা তার পুরনো কণ্ঠস্বর নতুনরূপে খুঁজে পায়। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে আয়েশা কেবল প্রয়োজনীয় সাক্ষরতা এবং সংখ্যাসূচক দক্ষতাই অর্জন করেননি, সেইসাথে তার উদ্যোগীসত্ত্বার প্রতিও আবেগ আবিষ্কার করতে পারে।উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার এই প্রোগ্রামে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এবং সাক্ষরতা শেষে আয়েশা অধীর আগ্রহে সেলাই কোর্সেও ভর্তি হয়। সাক্ষরতার পাশাপাশি সে সেলাই এবং ডিজাইনের শিক্ষা লাভ করে। আয়েশার প্রতিভা যেমন বিকশিত হয়, তেমনি তার আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়। আয়েশা ছোট্ট পরিসরে তার ঘরের আঙিনায় পোশাক তৈরি করতে শুরু করে। তাঁর ব্যতিক্রমী কারুশিল্পের কথা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে, যা দূর-দূরান্ত থেকে গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে থাকে। এভাবেই খুব ভালোভাবে দিন যেতে থাকে আয়েশার।

 

এভাবে দুই বছর কাজ করে আয়েশা তার সংসারের খরচ থেকে একটু একটু করে টাকা জমাতে শুরু করে। তারপর মাত্র ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগে ১০টি সেলাইম্যাশিন কিনে আয়েশা ১০জন নারী কর্মী নিয়োগ করে, এবং শুধু নিজেকেই নয় বরং তার সম্প্রদায়ের অন্যান্য মহিলাদেরও ধীরে ধীরে ক্ষমতায়িত করতে শুরু করে। আজ আয়েশা মাসিক ১০লক্ষ টাকা আয় করেন এবং তার কারখানায় যুক্ত হয়েছে প্রায় ৪০জন নারী কর্মী, এবং শুধু দেশেই নয়, আয়েশার ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও। ( সত্য ঘটনা, প্রতীকী চরিত্র অবলম্বনে)।

 

প্রতিটি দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আয়েশার সাফল্য তার চারপাশের লোকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। যে পরিবারগুলি একসময় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করত, তারা এখন সরাসরি এর প্রভাব দেখতে পাচ্ছে। আরো অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদের জন্য শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করে, কেননা তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি

 

আয়েশার গল্পটি বাংলাদেশের অনেক মানুষের গল্পের মধ্যে ছোট্ট একটি গল্প মাত্র, যেখানে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি কিভাবে অগণিত ব্যক্তির জন্য পথ আলোকিত করে চলেছে সেটি প্রকাশ করে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি শিক্ষাগত বিভাজন দূর করে, প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়ন করে এবং তাদের সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করে তারা আয়েশার মতো শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী মনীয় শেখার সুযোগ প্রদান করে এবং তাদের বাধা অতিক্রম করতে এবং তাদের স্বপ্নগুলি অনুসরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান দিয়ে তাদের সজ্জিত করে তুলে।

 

সূর্য যখন অস্ত যায়, আয়েশা তার এই বিশাল যাত্রার কথা চিন্তা করে। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেবল তাঁর জীবনকেই বদলে দেয়নি, তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যেও পরিবর্তনের শিখা প্রজ্বলিত করেছে। তিনি এমন একটি ভবিষ্যতের কল্পনা করেছেন যেখানে প্রতিটি শিশু, তাদের পরিস্থিতি নির্বিশেষে, মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ এবং তাদের প্রকৃত সম্ভাবনা উপলব্ধি করার সুযোগ পাবে।

 

ক্ষমতায়ন এবং সস্বাবলম্বী হবার এই গল্পে আয়েশার গল্পটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার অসীম শক্তির একটি প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। এটি একটি অনুস্মারক যে নিষ্ঠা, দৃঢ় সংকল্প এবং সঠিক সুযোগের মাধ্যমে স্বপ্নগুলি বাস্তব পরিণতি লাভ করতে পারে।

 

To read more blogs,click here