গ্রন্থাগার, কেমন একটা বিচিত্রময় স্থান, তাই না? কত সহস্র লেখকের চিন্তা ভাবনার দলিল পড়ে থাকে সেখানে। পাঠকরা কিন্তু ঠিকই নিজের ভাবনার সাথে মিল রেখে পছন্দের লেখককে খুঁজে বের করেন। এ যেন পাঠকের এক অদ্ভুত ক্ষমতা। কিন্তু লেখক? লেখকের বেলায় কিন্তু সে চিত্র ভিন্ন। একজন লেখককে তার পাঠকের কাছে পৌঁছাতে বেশ সময় লাগে, অনেকক্ষেত্রে বেশ কাঠখড়িও পোঁড়াতে হয়। একজন লেখক হিসেবে খুব কম সময়ে পরিচিতি লাভ করা সহজ কোনো বিষয় নয়। অল্প কিছু ব্যতিক্রমী লেখক আছেন যারা খুব কম সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে পাঠকের কাছে। আজ তেমনই একজন জনপ্রিয় লেখক আবির হাসান সায়েম, YSSE এর সৌজন্য সাক্ষাৎকারে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন। আজ আমরা এই উদীয়মান লেখকের কাছ থেকেই তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
YSSE:প্রথমেই আপনার সম্পর্কে জানতে চাইছি। আপনার পরিচয়, পড়াশোনা, বেড়ে উঠা এবং বর্তমানে কী করছেন ইত্যাদি।
লেখক সায়েমঃ আসসালামুআলাইকুম, আমার নাম আবির হাসান সায়েম। আমি গতবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। আপাতত লেখালেখি, সেল্ফ স্কিল ডেভেলপমেন্টে মনোযোগ দিচ্ছি। সামনের বছর উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাবার পরিকল্পনা আছে। বাকিটা ওপর-ওয়ালার হাতে।
YSSE:আপনার লেখালেখির শুরুটা কবে থেকে এবং কীভাবে শুরু হলো?
লেখক সায়েমঃ লেখালেখি শুরু করার গল্পটা মজার। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিন, মজা করে একটা প্যারোডি কবিতা লিখি। নাম দিয়েছিলাম “ওহে নারী”। মজার ছলে লিখেছিলাম কবিতাটি তবে লেখাটি ভালো লেগেছিলো অনেকের। প্রশংসাও কুড়িয়েছিলাম। এরপর থেকে ধীরে ধীরে শুরু হলো লেখালেখি’র জার্নি। একটা সময় পর শখের বসে করা জিনিসটায় খুঁজে পেলাম পরম সুখ। ভেবে নিলাম ‘লেখালেখি’ করেই কাটিয়ে দিবো একটা জীবন।
YSSE:লেখালেখিতে আসার মূল কারণটা কী ছিলো? শখের বসেই লেখালেখি নাকি লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইচ্ছা নাকি অন্য কিছু?
লেখক সায়েমঃ আমি অনেক বই পড়ি। গল্পের, কবিতার। হঠাৎ একদিন খুব লিখতে ইচ্ছে করলো, হাজারটা গল্পের প্লট এসে জড়ো হলো ব্রেইনে। সেই ইচ্ছেটা যতদিন থাকবে ততদিন লিখে যাবো।
আমি সবসময় বলি, আমি লিখে বাঁচতে চাই। আমি আমার মনকে কখনো চাপ প্রদান করি নি৷ মন যা চেয়েছে তা করতে দিয়েছি। মন যতদিন সায় দিবে লিখে যাবো, হাজার কোটি শব্দ । জানি লেখক হিসেবে একটা জীবন কাটিয়ে দেয়া সহজ হবে না তবে যে জিনিস সহজে পাওয়া যায় সে জিনিসে তৃপ্তি থাকে কম। আর আমি স্বল্প তৃপ্তিতে সন্তুষ্ট হবার মানুষ নই৷
YSSE:লেখক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জার্নিটা সম্পর্কে জানতে চাইছি।
লেখক সায়েমঃ আমি লেখক হিসেবে খুব বেশি পরিচিত না খুব সম্ভবত। আসলে লেখক আর পাঠকের সম্পর্কটা খুব ইন্টেরেস্টিং। লেখক কখনো জানে না তার পাঠক সংখ্যা কত!
তবে মাঝে মাঝে অবাক হই যখন পরিচিত বা অপরিচিত মানুষেরা রাস্তায় হঠাৎ দেখায়, আড্ডায় হঠাৎ করে বলে উঠে, “তোমার অমুক গল্পটা পড়েছি, তমুক বইটা বেশ ভালো লেগেছে। এই ক্যারেক্টারটার বিল্ডাপ সুন্দর, সেই প্লটটার কল্পনাচিত্র স্বচ্ছ। “ তখন বেশ ভালো লাগে, অবাকও লাগে। এই ছোট ছোট ঘটনা মনে গাঢ় দাগ কাটে। শক্তি যোগায় সামনে এগিয়ে যাবার।
YSSE:কে আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
লেখক সায়েমঃ আমার বাবাও লেখালেখি করেন। তার এই পর্যন্ত মোট তিনটি বই বের হয়েছে। লেখালেখি ‘র ব্যাপারটা হয়তো সেখান থেকেই পাওয়া, জেনিটিক্যালি। ছোটবেলা থেকে বাবার লেখা বই দেখতাম। পড়ার তেমন ইচ্ছে সেসময় জাগে নি তবে তৃতীয় নয়নে পরোক্ষ প্রভাব পরেছিলো হয়তো। সে অর্থে অনুপ্রেরণা’র গোড়ায় আছেন বাবা।
তাছাড়া হুমায়ুন আহমেদের লেখা “লীলাবতী“ উপন্যাসটি পড়বার পর প্রথম গল্পের প্লট মাথায় আসে, স্পষ্ট মনে আছে আমার।
YSSE:আপনার কিছু লেখালেখি নিয়ে জানতে চাইছি অর্থাৎ আপনার প্রকাশিত কিছু বই এবং পত্রিকায় যেসব লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
লেখক সায়েমঃ আমার এই পর্যন্ত দু’টো বই বেরিয়েছে। একটির নাম “ইচ্ছে ছিলো” আর অপরটির নাম “একমুঠো জোনাকি”। দু’টোই উপন্যাস। সামনের মাসে সময়ের সুর প্রকাশনী থেকে বের হচ্ছে নতুন বই “সন্ধ্যে তুমি বলতে পারো আমায় “ বইটি। নতুন বইটি সাসপেন্স-থ্রিলার ধর্মী। একটা বেশ বড়সড় প্রমোশোনাল ক্যাম্পেইনের মধ্যে দিয়ে বইটি প্রকাশ পাচ্ছে। আশা রাখছি সবার হাতে হাতে বইটি ছড়িয়ে পরবে।
আমার লেখা এই পর্যন্ত, দৈনিক আলাপ অনলাইন পত্রিকা, তারুণ্য সাহিত্য পত্রিকা, সময়ের সুর ম্যাগাজিন, তুলোট ব্লগ ও প্রতিলিপিতে ছাপা হয়েছে।
“প্রতিলিপি” বিষয়ক একটা মজার গল্প আছে। তখন মাত্র লকডাউন শুরু হয়েছে। আমি টুকটাক লেখালেখি করছি তখন৷ ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রাম এ্যাডে এপটি দেখে ডাউনলোড করি। প্রথম লেখা আপলোড দেই, দু’দিন পর দেখা গেলো পাঠক সংখ্যা ৫৬ জন। ব্যাপারটা বেশ এক্সাইটিং লেগেছিলো তখন। এক বন্ধুকে বলেছিলাম, “দুই হাজার পাঠক হলে তোকে খাওয়াবো।” এখন প্রায় ৫৬ হাজার পাঠক। কিন্তু বন্ধুকে খাওয়ানো হয়নি আর।
YSSE:আপনার কোন লেখা বা বইটি সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছিলো পাঠকের মাঝে?
লেখক সায়েমঃ প্রতিলিপি ওয়েবে একটা ধারাবাহিক লিখেছিলাম। নাম ছিলো “চৈতী হাওয়া “। ধারাবাহিকটি আজ পর্যন্ত ৪৫,২০০ পাঠক পড়েছেন।
এছাড়া “একমুঠো জোনাকি”, বইটি খুব অল্প সময়ে স্টকআউট হয়ে গিয়েছিলো। বইটি এতো দ্রুত স্টকআউট হবে ভাবতেও পারিনি৷ পাঠকদের কাছে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।
YSSE:লেখক হিসেবে এই পর্যন্ত আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন কী ছিলো বলে মনে করেন?
লেখক সায়েমঃ একটা মানুষ তার নিজের মধ্যে অসংখ্য চরিত্র ধারণ করে। পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে একেক সময় একেক চরিত্রকে উন্মুক্ত করে মানুষ।
সত্যি কথা বলতে, নিজেকে চিনতে পারা সবচেয়ে বড় অর্জন। আমি লিখতে গিয়ে নিজেকে যতটা চিনতে পেরেছি, অন্য কোনো কাজে তা সম্ভব হয়নি। আমি যখন লিখি তখন আমার ভিতরের চরিত্রগুলোর সাথে কথা হতে থাকে। আমি টের পাই তাদের অস্তিত্ব, আমি অনুভব করি নিজেকে।
YSSE:আপনার কোনো প্রিয় লেখক আছে কী?
লেখক সায়েমঃ প্রিয় লেখকের লিস্ট তো অনেক বড়। হুমায়ুন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নিমাই ভট্টাচার্য, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, জীবনানন্দ দাশ এবং প্রমুখ।
YSSE:আপনার লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিলো কী? সেই বাধাগুলোকে কীভাবে কাটিয়ে উঠেছেন?
লেখক সায়েমঃ টাইম ম্যানেজমেন্ট। নিয়মিত সময় বের করে লেখা-লেখি করাটা খুব কঠিন একটা কাজ।
কোনো কাজে আপনি যতই বড় গুণবান বা গুণবতী হন না কেনো আপনাকে নিয়মিত প্রাকটিস করতেই হবে। লেখালেখি’র ব্যাপারটাও একই। নিয়মিত আপনাকে লিখতে হবে। যে যত পড়ে তার ভাবনার জগত তত প্রসারিত হয় আর যে যত লিখে তার শব্দের ধার তত তীক্ষ্ম হয়।
YSSE:লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনি কোন বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?
লেখক সায়েমঃ আমি যে কল্পনার জগতে থেকে লিখছি, সেই জগতে কতটা সহজে পাঠকদেরকে প্রবেশ করানো যায়।
YSSE:আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
লেখক সায়েমঃ নতুন বই ” সন্ধ্যে তুমি বলতে পারো আমায় ” এর প্রি অর্ডার চলছে। আগামী মাসে বইটি বেরুবে। বের হবার পরপর, বইটিকে কেন্দ্র করে নানাম আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে। এরপর ২০২৩/২৪ সালে যে বইটি বের হবে সেটি নিয়ে কাজ শুরু করবো।
YSSE:আপনার মতো যারা লেখক বা লেখিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইছে তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলবেন?
লেখক সায়েমঃ প্রচুর বই পড়তে হবে আর জীবন পড়া শিখতে হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা, পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া সব অনুভব করার চেষ্টা করতে হবে। এবং সবচেয়ে বেশি জরুরি – জীবনবোধ তৈরী করা।
YSSE:প্রায় সময়ই একজন লেখকের নিজস্ব কিছু বাক্য/স্লোগান থাকে, আপনার ক্ষেত্রে সেই বাক্যটি কি?
লেখক সায়েমঃ তেমন কোনো বাক্য বোধ হয় নেই। খুব সম্ভবত, ” একজীবন ভালো থাকা হোক” বা ” একজীবন পাশে থাকা হোক “ এগুলোই বলা হয় ফ্রিকুয়েন্টলি।
YSSE:সবশেষে আপনার পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
লেখক সায়েমঃ ধন্যবাদ, খুব ধন্যবাদ। আপনারা ছিলেন, আছেন, থাকবেন, আপনাদের জন্যই সাহস পাই এগিয়ে যাওয়ার। জানি পথ দুর্গম তবে আপনারা পাশে থাকলে, সব পাড় করে যাবো, “কুছ পড়ওয়া নেহি।”
আমি হয়তো জানি না আপনি কে তবে বিশ্বাস করুন ব্যাপারটা স্পিরিচুয়াল হলেও সত্য আমি প্রতিদিন আপনার কথা একবার করে হলেও স্মরণ করি।
“এক জীবনে পাশে থাকা হোক”
-আবির হাসান সায়েম
Writer,
Diderul Islam
Intern, Content Writing Department
YSSE
আরো ব্লগ পড়তে এখানে #ক্লিক করুন।