বই সাজিয়ে রাখার জিনিস নয়, বই হলো জ্ঞান আহরণের অন্যতম মাধ্যম।তবে প্রচ্ছদের মায়ায় পড়ে হুট করে কিনে ফেলা বইটি যদি মোটেই আর পড়তে ইচ্ছা না করে অথবা আপনি যে জনরার বই পছন্দ করেন বইটি সম্পূর্ণ তার বিপরীত জনরার হয়ে থাকে ভাবছেন, সাজিয়ে রাখা ছাড়া তখন কি উপায়? কেমন হয় যদি বইটি দিয়ে আপনি চাইলেই নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটি বই নিতে পারেন!! কিংবা এমন ও হতে পারে, পড়া শেষ হয়ে যাওয়া বইটি বিনিময় করে নিতে পারেন পড়া হয় নি এমন কোনো বইয়ের সাথে। নিঃসন্দেহ এই প্রস্তাবটি বইপ্রেমীদের কাছে সোনায় সোহাগা।

 

“বই বিনিময় উৎসব” শিরোনামে “বইবন্ধু” এমনই এক ব্যাতিক্রমধর্মী উৎসবের আয়োজন করে আসছে বছরের পর বছর, দেশের বিভিন্ন স্থানে। যা ইতিমধ্যে বইপ্রেমীদের হৃদয় জয় করে সর্বসাধারনের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ৯ ও ১০ই মার্চ বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ৩য় বারের মত আয়োজিত হতে যাচ্ছে ২দিন ব্যাপী বই বিনিময় উৎসব। ইভেন্ট ভ্যেনু নির্ধারিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শিরিষতলা, সি আর বি তে।

 বই বিনিময় উৎসব, একটি অদ্ভুত সাহিত্যিক আনন্দের উৎস। এই উৎসবে পাঠকসমাজ একত্র হয়, বইয়ের মাধ্যমে চিরকালের বন্ধু হয়ে উঠে। প্রতিটি পাঠকের হাতে থাকে বই এবং বইয়ের আলোচনায় মুখরিত  থাকায় এই উৎসব অন্যান্য বাকি উৎসবের থেকে আলাদা। এই বিনিময়ে বইগুলির মূল্য নির্ধারণে কোনো মৌল্যাঙ্ক  নেই, শুধুমাত্র একটি বই দিয়ে অন্যটি প্রাপ্ত করা হয়। প্রতিটি পাঠক একাধিক বই নিয়ে এসে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে  পারে, এবং এটি একটি সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় তৈরি করতে সাহায্য করে।

 

কীভাবে হবে বই বিনিময় উৎসবঃ সময়টা সকাল ১০ টা। ইভেন্ট মেন্যুতে সাজিয়ে রাখা আছে হাজার হাজার বই। শত শত পাঠক উৎসুক নজরে কি যেন একটা খুজঁছে। এভাবেই খুঁজতে খুঁজতে এক পাঠকের নজর পড়লো উইশলিস্টে থাকা শার্লক হোমস সমগ্রের দিকে। ঠোটের কোণে থাকা হাসিটি মুহূর্তের মধ্যেই চওড়া হলো।নিজের সংগ্রহে থাকা মিসির আলি সমগ্র দিয়ে সে চাইলেই বিনিময় করে নিতে পারে তার পছন্দের শার্লক হোমস সমগ্রটি। আর এভাবেই পাঠক সমাজ নিজের পঠিত বই কিংবা পড়ে থাকা বইটি বিনিময় করে নিজের সংগ্রহকে করছে পছন্দ অনুযায়ী বই দ্বারা সমৃদ্ধ।  এতে কি শুধু বই ই বিনিময় হচ্ছে?  অবশ্যই তা না। শব্দের আড়ালে বিনিময় হচ্ছে পছন্দ, অনুভূতি, অভিব্যক্তি আরো কত কি!!এখানে কথা হয়ে যাচ্ছে বইগুলির আড়ালে। প্রতিটি বই একটি গল্প, একটি অভিজ্ঞতা, একটি অনুভূতি। পাঠকেরা একে অপরকে তাদের পছন্দের বই নিয়ে আড়াল করছেন আপনমনে।

উৎসবে প্রধান কার্যক্রম সমূহঃ                                       

সারাদিন ব্যাপী বই বিনিময়

যে কোন বই এর রিভিউ প্রকাশ করা।

কবিতার আসর।

আলোচনা পর্ব।

পুরস্কার বিতরনী (সর্বোচ্চ ৫ জন রিভিউ প্রকাশকারী ও কবিতা আবৃত্তি শিল্পীকে)।

কবি সাহিত্যিক ও গুণিজনদের সাথে পাঠকের মত বিনিময়।

 

অংশগ্রহণের নিয়মাবলিঃ বিনা মূল্যে রেজিষ্ট্রেশন করে সমপরিমান বই জমা দিয়ে সমপরিমাণ বই (একজন সর্বোচ্চ ১০টি ) বিনিময়ের মাধ্যমে অংশগ্রহন করতে পারবেন।

এবার বলা যাক বই বিনিময় উৎসবের আয়োজক বইবন্ধু কে নিয়ে।

বইবন্ধুর শুরুটা হয় ২০১৮ সালে। হুটহাট সমন্বয়ক মহিউদ্দিন তোহাসহ বেশ কিছু তরুণের পাগলামিতে শুরু হয় বইবন্ধুর পথচলা। “আলোর পথে বন্ধুত্বের টানে” স্লোগানে চলা বইবন্ধু শুরু থেকেই বইকে সহজলভ্যভাবে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং পাঠক বিপ্লব সৃষ্টি করা নিয়ে কাজ করে চলেছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রায় ৩০০ এর অধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সুন্দর ও গোছানো ব্যাবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বইবন্ধু তাদের ইভেন্টসমূহ পরিচালনা করে থাকে। আর সেই জন্যই হয়ত এই ব্যাতিক্রমধর্মী উৎসব জনসাধারনের কাছে হয়ে উঠেছে অধিক জনপ্রিয়।

বর্তমান সময়ে আমরা প্রায়ই সকলেই ডিভাইসকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি। একসময় বই পড়া, বই সংগ্রহ করার প্রতি আকাশচুম্বী আগ্রহ থাকা সত্বেও আমাদের মধ্যে এখন দেখা যায় প্রচুর অনাগ্রহ। বইয়ের পাতায় মুখ ডুবিয়ে রাখা মেয়েটি বা ছেলেটি এখন বই পড়া থেকে আগ্রহ হারিয়ে  মোবাইল ফোনে গেমস খেলে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাইলের পর মাইল স্ক্রল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অথচ, বই আমাদের প্রকৃত বন্ধু। এলিজাবেথ ব্যারেট এর মতে ভালো বইয়ের সাহচর্য আছে এমন কোনো মানুষকে বন্ধুহীন বলা যায় না”। তরুন সমাজের বই বিমুখতা কারণ হিসেবে অনেক কারণই উপস্থাপন করা যেতে পারে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, আমাদের কাছে কোনো না কোনো বই রয়েছে। যা পড়া শেষ বা পড়া হয়ে উঠছে না, নতুন বইটি ধার নিয়ে পড়া অথবা কিনে পড়ার সময় সুযোগ কোনোটাই হয়ে উঠছে না। পুরোনোদের সাথে সাথে নতুনদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং ডিভাইসকেন্দ্রিক সময় কাটানো থেকে বেরিয়ে আসতে, পড়া শেষ হয়ে যাওয়া বইটি দিয়ে সেখান থেকে অন্য একটি বই ঘরে নিয়ে যাওয়াসহ সর্বোপরি বই নিয়ে একটি উৎসব করাই হলো আয়োজনের মূল কারণ। যার লক্ষ্য প্রতিটি ইভেন্টে ১৫০০০ বই বিনিময়।

 

বই বিনিময় উৎসব, বইয়ের আদান প্রদানে এক অন্যরকম উৎসব।এই উৎসব বই পড়ার আনন্দে মেতে উঠুক, একটি বই পড়ার সুখ অন্য বই নিয়ে বিনিময়ে পরিণত হোক। এই আনন্দময় অভিযানে আপনার  শব্দের সফর শুরু করতে আপনাকে  এই উৎসবে যোগ দিতে আমন্ত্রন জানানো হলো ।

এরকম আরো ব্লগ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

 লেখিকা, 

উম্মে হাবিবা চৌধুরী

ইন্টার্ন,কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE