দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে সর্বপ্রথম বাঙালি, যিনি বিশ্বের দরবারে আলোড়ন তোলেন, অনন্য সাধারণ সেই নোবেল বিজয়ীর নামঅমর্ত্য সেন শুধুমাত্র প্রথম বাঙালি হিসেবে নয়, প্রথম এশিয়ান হিসেবেও অর্থনীতিতে ১৯৯৮ সালে নোবেল বিজয়ী হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখান তিনি তিনি একাধারে একজন অর্থনীতিবিদ, লেখক এবং দার্শনিক 

অমর্ত্য সেন দুর্ভিক্ষ দারিদ্র নিয়ে গবেষণার অনুপ্রেরণা পান তার ব্যক্তিগত জীবনে প্রত্যক্ষভাবে বাংলার দুর্ভিক্ষ তথা ১৯৪৩ সালেপঞ্চাশের মন্বন্তরদেখার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তাই তার গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ফুটে উঠে দুর্দশার শিকার, অভাবী মানুষের পরিস্থিতি, দুর্ভিক্ষের কারণ এর কার্যকরী সমাধান নিয়ে 

১৯৯৩ সালের ৩রা নভেম্বর, বীরভূমের শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেন অমর্ত্য সেন পশ্চিমবঙ্গের এক হিন্দু বৈদ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি তার পিতার নাম আশুতোষ সেন যিনি পেশায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মাতার নাম অমিতা সেন 

অমর্ত্য সেনের স্কুল শিক্ষা শুরু হয় সেন্ট গ্রেগরিতে পড়াশোনার মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে তিনি শিক্ষাজীবন শুরু করেন শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে লেখাপড়ার মাধ্যমে তাছাড়া উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি পাড়ি দেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে (অর্থনীতিতে মেজর ডিগ্রি গণিতে মাইনর ডিগ্রি) এবং কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে (বিশুদ্ধ অর্থনীতিতে ডিগ্রি) অমর্ত্য সেন পরিচয় দেন অসামান্য প্রতিভার দক্ষতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে শিক্ষকতা করেছেন তিনি পশ্চিমবঙ্গে জন্ম হলেও ঢাকায় বেড়ে ওঠার স্মৃতি জড়িত আছে অমর্ত্য সেনের শৈশবে 

১৯৮১ সালে অমর্ত্য সেনের “Poverty and Famines” তথাদারিদ্র দুর্ভিক্ষনামে গবেষণার নিবন্ধ প্রকাশিত হয় এই গবেষণার মাধ্যমে তিনি ফুটিয়ে তোলেন দুর্ভিক্ষের অন্তর্নিহিত কারণ সমূহ এছাড়াও তার অসামান্য প্রতিভার দৃষ্টান্ত প্রস্ফুটিত হয় যখন তিনি যুক্তিযুক্ত ভাবে প্রমাণ করেন খাদ্যের সুষম বণ্টন, বৈষম্য অসমতা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় বলেই সৃষ্টি হয় দুর্ভিক্ষের তিনি তার গবেষণার মাধ্যমে আরও তুলে ধরেন নীতি নির্ধারকদের ক্ষণস্থায়ী উদ্যোগের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব নয়, বরং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় কর্মসংস্থান ব্যবস্থা টেকসই করা গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ তার গবেষণার দ্বারা তিনি কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছেন যে, দুঃখকষ্ট দূর করার উপায় খুঁজে বের করা মূখ্য সমাধান নয়, বরং এমন উপায় খুঁজে বের করা প্রয়োজন যার মাধ্যমে দরিদ্রদের হারানো আয়ের প্রতিস্থাপন করা সম্ভব তিনি তার গবেষণা প্রবন্ধকির সমতাএর মাধ্যমেসামর্থ্যধারণাটি চালু করেছিলেন যা অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে তার গবেষণা পত্রটি তত্ত্বীয় হলেও নোবেল কমিটির অভিমত অনুসারে বাস্তব জীবনের নানাবিধ সমস্যার জন্য এটি পরিপূর্ণভাবে প্রয়োগ উপযোগী উক্ত পত্রের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষের শিকার হতদরিদ্র জনগণের অসহায়ত্ব যেমন প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে, ঠিক তেমনিভাবে আরও প্রকাশিত হয়েছিল নানারকম সামাজিক সমস্যার যুক্তিযুক্ত কারণ সমূহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সম্ভাবনার সমাধান তিনি একমাত্র গর্বিত বাঙালি যিনি অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থা উভয় ক্ষেত্রেই উন্নয়নশীল নতুনত্বের মান নির্ধারণ করেছেন 

একজন গুণী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষের প্রতিভা সম্মাননা দিয়ে পরিমাপ করা না গেলেও, অমর্ত্য সেনের সম্মাননা তাঁর জীবনের অন্যতম বড় অর্জন নোবেল পুরস্কার লাভের পর ভারত সরকার অমর্ত্য সেনকেভারতরত্নসম্মাননায় ভূষিত করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হয়েও তিনি ২০১১ সালে অর্জন করেন “Humanities” পদক বাংলা একাডেমী অমর্ত্য সেনকে বাংলা ভাষার ধারক বাহক হিসেবে প্রদান করেন সম্মানজনক ফেলোশিপ ২০১৯ সালে ব্রিটেনের বিখ্যাতবডলে মেডেলেসম্মাননা লাভ করেন তিনি এছাড়াও তিনি অর্জন করেছেন

গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে লিওনটেফ পুরস্কার (২০০০), নেতৃত্ব সেবার জন্য আইজেনহাওয়ার পদক USA (২০০০), ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স কর্তৃক লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০০৩) প্রদান করেন এবং বাংলাদেশ সরকার থেকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পান ১৯৯৯ সালে

বিবিসি বাংলা ২০০৪ সালের ২৬ শে মার্চ হতে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত একটি জরিপ চালনা করেন যার মেয়াদ ছিলো ত্রিশ দিনব্যাপী উক্ত জরিপের প্রশ্ন ছিলো, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে?” অমর্ত্য সেন উক্ত জরিপের শ্রোতাদের ভোটে শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় ১৪ তম স্থান লাভ করেন অমর্ত্য সেনের অন্যান্য গবেষণা প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে– “Development and Freedom” ; “Commodities and Capabilities on Economic Inequality” ; “Collective Choice and Social Welfare on Ethics and Economics” এসব রচণার মাধ্যমে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন বিভিন্ন বাস্তব কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক সমস্যা সম্ভাব্য সমাধান যা অনুন্নত উন্নয়নশীল দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাছাড়া ১৯৯০ সালে, “মোর দ্যান ১০০ মিলিয়ন উইমেন আর মিসিংশিরোনামে তার সবচেয়ে বিতর্কিত নিবন্ধ লিখেছিলেন যা প্রকাশিত হয়েছিল নিউইয়র্ক রিভিউ অফ বুকস 

বর্তমানে তিনি হেলথ ইমপ্যাক্ট ফান্ডেরঅ্যাডভাইজরি বোর্ড অব ইনসেন্টিভ ফর গ্লোবাল হেলথএর সদস্য অমর্ত্য সেন একমাত্র ভারতীয় শিক্ষাবিদ যিনি অক্সব্রিজ কলেজের প্রধান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন লেখালেখির জগতেও অমর্ত্য সেনের রয়েছে অনবদ্য পদচারণা তাঁর লিখিত বই সমূহ অনূদিত হয়েছে ত্রিশটি ভাষায় 

অমর্ত্য সেন আমাদের প্রিয় গর্বিত বাঙালি যিনি তার কর্মদক্ষতা, শিক্ষা গবেষণার মাধ্যমে সর্বদা এগিয়ে রয়েছেন  আর্থসামাজিক সমস্যা দূরীকরণ উন্নয়নে তার অবদান লেখা রবে স্বর্ণাক্ষরে অমর্ত্য সেনের নোবেল বিজয় যেন বাঙালি জাতির জীবনের অনন্য স্মৃতিবিজড়িত সম্মানজনক মুহূর্ত ভালো থাকুক আমাদের গর্বিত প্রিয় বাঙালি, আমাদের অমর্ত্য সেন

এরকম আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন। 

লেখিকা

হাফসা বেগম 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE