“ক্লিয়ার কনসেপ্ট” জনসাধারণের ওষুধ বিষয়ক নানা জিজ্ঞাসার জবাব এবং ভুলভ্রান্তি নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। এই পেজের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ হিরোক শেখ সাথে একটি সাক্ষাৎকারের এর মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল।  আজ ২য় পর্বে আমরা তার সম্পর্কে এবং “ক্লিয়ার কনসেপ্ট” পরবর্তী যাত্রার গল্প শুনবো তার কাছ থেকেই।

YSSE: আজকে “Clear Concept” যে সফলতায় পৌঁছাতে পেরেছে কিন্তু এর পেছনে আপনার প্রতিবন্ধকতাগুলো কি ছিলো ? এবং কিভাবে সেগুলো অতিক্রম করেছিলেন?

অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিলো। প্রথমত, একটা প্লাটফর্মে অনেক ধরনের মানুষ কাজ করে। অন্যান্য সাইন্স গ্রুপে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী কাজ করতে পারে। তবে, আমরা শুধুমাত্রই ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টের সাথে কাজ করি। যখন টিম ছোট ছিলো তখন তাদের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। অনেকেই এটার প্রয়োজনীয়তাটাই বুঝতে পারেনি।

দ্বিতীয়ত, শুরুর দিকে গ্রুপ করতে গেলে অনেকে বলতো এটা করা ঠিক হবে না। মন্তব্যগুলো ছিলো, তোমারা কেন ওষুধ নিয়ে কথা বলবা, ওষুধ নিয়ে কথা বলবে ডাক্তার, ওষুধ সেনসেটিভ জিনিস, এটা নিয়ে প্রকাশ্যে কনটেন্ট বানালে মানুষ ভুল করবে, ভুল চিকিৎসা দেওয়াতে মামলা দিবে’। এছাড়াও, ডাক্তাররা ফার্মাসিস্টদের একটু অন্য নজরে দেখে।

 

কিন্তু আমাদের কো-ফাউন্ডার হচ্ছে ডাক্তার এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটি ব্যাপার। ডাক্তাররা যদি অনুধাবন করে যে একজন ফার্মাসিস্ট দরকার। কারণ একজন ডাক্তারের স্বাস্থ্যসেবার সব করে ফেলতে পারা সম্ভব না।

কিছুদিন আগে, ডক্টর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের একজন সহকারী প্রফেসর আমাদের সাথে ফেসবুক লাইভে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ডাক্তারদের মধ্যে ভুল ধারণা আছে যে তারা সব করবে। কিন্তু ফার্মাসিস্টরাও অনেক জরুরি। ফার্মাসিস্টরা ঔষধের মেকানিজম, অ্যাডারসিব জিনিসটা বুঝে যা ডাক্তারদের ভালোভাবে জানা নাই। ফার্মাসিস্টরা প্রেসক্রীপশন রোগীকে বলে দিতে পারে। এভাবেই তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছিলেন।

আমি বলবো, প্রতিবন্ধকতা আছে এবং তা দূর করে যখন আমরা মানুষকে জানাতে, বোঝাতে পারবো যে ফার্মাসিস্ট স্বাস্থ্যসেবায় কতটা জরুরি। তখনই প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।

আলহামদুলিল্লাহ, আমরা ভালো টিমওয়ার্ক করছি। ৩৫ টা ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্পাস রিপ্রেজেন্টিভ, ক্যাম্পাস ভলাটিয়ার আছে। আশা করি তাদের নিয়ে আমরা আরো এগিয়ে যাবো।

YSSE: আপনার সফলতার পেছনে কাদের সাপোর্টের কথা আপনি উল্লেখ করতে চান?

প্রথমে বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা নিয়ে আমাদের যে বড় টীমে যাত্রা শুরু হয়েছিল, এতদূর আসার পিছনে তাদের অনেক বড় সাপোর্ট পেয়েছি। এখনো তাদের কথা আমার মনে পড়ে। বর্তমানে আমার স্ত্রী ফাতেমা এর বড় সাপোর্ট আছে। আমার বাবা-মা চাকরির জন্য চাপ দেননি, মেন্টাল সাপোর্ট দিয়েছে।

আমাদের শিক্ষকদের সাপোর্ট পেয়েছি। শিক্ষকরা আমাদের ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ আবেদন করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং মেডিফেস্টে তাদের মূল্যবান সময় দিয়েছে। ‘World Pharmacist Day’ তে ‘ক্লিয়ার কনসেপ্ট’ জাহাঙ্গীরনগর থেকে ভালো আয়োজন করেছে টীম মেম্বারদের সাপোর্টের মাধ্যমে কারণ প্রতেক ব্যাচের সবার পরীক্ষা থাকায় কিছু করা হয়নি। এতে শিক্ষকরা অনেক খুশি হয়েছে।

YSSE: কোন বিষয়টি আপনার প্লাটফর্ম কে অন্যতম করে তোলে?

আমরা সবাই প্রফেশনাল ফার্মাসী ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী, এটা আমাদের মূল বিষয়। যারা ওষুধ নিয়ে পড়াশোনা করছে, জানছে এবং আমাদের সাথে ডাক্তার আছে। তাই আমাদের কোনো ভুল তথ্য ছড়ানো সম্ভব না এবং আমরা এটা করবো না। আমরা স্বাস্থ্যসেবায় মূল বিষয় মেডিসিন নিয়ে অর্গানাইজড ভাবে কাজ করছি। এভাবে টীম করে , কনটেন্ট করে , রেফারেন্স দিয়ে যে তথ্যবহুল তথ্য আমরা দিচ্ছি এটা একমাত্র বাংলাদেশে ‘ক্লিয়ার কনসেপ্ট’ নামটা দিয়েই করতে পারছি। ‘ক্লিয়ার কনসেপ্ট’ নামটা শুনলেই যে কেউ বুঝতে পারবে আমরা ওষুধ নিয়ে কাজ করি এবং শুধুমাত্র ওষুধ নিয়ে কাজ করাতেই আমাদের প্লাটফর্মকে অন্যতম করে তোলে।

YSSE: আপনার কাজের জন্য স্লোগান দিতে বললে সেটি কি হবে?

আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে মেডিসিন। তাই আমাদের স্লোগান – 

          “No Fear of Medicine”

YSSE: এই কাজের মাধ্যমে আপনার একাডেমিক বা ব্যক্তিগত কোন প্রভাব পড়েছে কি?

আমার ক্ষেত্রে পজিটিভ প্রভাব পড়েছে। একাডেমিকভাবে, ২০২১-২০২২ এ যখন শিক্ষকরা যখন কোনো বিষয়ে পড়াতো, দেখা যায় সেই বিষয়ে আমি আগেই ভিডিও কনটেন্ট করেছি। এক্ষেত্রে আমি ফার্মাকোলজি, ফার্মাকোথেরাপি, ফিজিওলজি, প্যাথোলজি বিষয়গুলো পড়ে আমি শান্তি পাই এবং জনগণকে জানাতে পারি। এভাবেই একাডেমিকে শুধু পরীক্ষা নয় নিজে জানতে ও অন্যকে জানানোর আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে, আলহামদুলিল্লাহ, প্রতেকটা ক্যাম্পাস থেকেই কিছু মানুষজন আমাকে চিনে এবং শিক্ষার্থীদের কাছে আমি পরিচিত মুখ।

অন্যদিকে, ফার্মা কোম্পানির অনেকেই আমার কনটেন্ট দেখে, ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র, শিক্ষার্থীরাও দেখে, প্রশংসা করে এবং কথা বলে এই বিষয়ে। এছাড়াও কাজ করার সুযোগ হয়েছে জেনারেল ফার্মা, বেকন ফার্মাতে।

YSSE: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

স্টার্টআপ হিসেবে আমি আমার যাত্রা শুরু করবো। এখানে আমরা, রোগীদের কাউন্সেলিং এ যাবো। ‘এই ওষুধ কেন খাবো’ গ্রুপে আমরা রোগীদের সাথে ইন্টারেকশন করছি। কারণ, ভুল ওষুধের ব্যবহার যা শুরু হয় ফার্মাসী দোকান থেকে। আমাদের ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট থাকবে প্রেসক্রীপশন রিভিউ করার কাজ করে। কিন্তু ডাক্তার বলতে আমরা ট্রীটমেন্ট দিবোনা। অর্থাৎ সেলফ মেডিকেশনে যে ভুল তা কমাতে চাইছি। আমরা আরো বেশি করে তথ্যবহুল কনটেন্ট তৈরি করবো।

ম্যাগাজিন– যার মাধ্যমে প্র্যাকটিক্যাল তথ্য পাবে। কিছু বিষয় ফোকাসে থাকবে যেমন: ওটিসি মেডিসিন, প্রেগন্যানসি ক্যাটাগরি মেডিসিন, মেয়েদের স্বাস্থ্য সমস্যায় মেডিসিন ইত্যাদি। এখানে ক্যাম্পাস রিপ্রেজেনটিটিভরা লেখা দেয়ার সুযোগ পাবে। অর্থাৎ ম্যাগাজিনটি সাধারণ মানুষকে, টেকনিশিয়ান, পল্লি চিকিৎসক, ফার্মাসী শিক্ষার্থীদের জন্য সাহায্যকারী হবে।

YSSE: যে তরুণরা আপনার মতো স্বাস্থ্য ও ওষুধ গবেষণায় আগ্রহী, তাদেরকে কি পরামর্শ দিতে চান?

অবশেষে, আমি আজকের তরুণ শিক্ষার্থীদের বলবো পড়াশোনাকে বিষাদময় না করার জন্য অর্থাৎ পড়াশোনাকে নিজের প্র্যাকটিক্যাল জীবনের সাথে যুক্ত করতে। যখন একজন শিক্ষার্থী ফার্মাসিউটিকস পড়ে, তাকে বুঝতে হবে ওষুধের ফর্মুলেশন নিয়ে পড়ছে। ট্যাবলেট কত ধরনের হতে পারে, এর বিকল্প ইনজেকশন আকারে আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তার আগ্রহ থাকা উচিত। কারণ এখান থেকেই কিন্তু গবেষণার উদ্ভাবন হয়। যদি ফার্মাকোলজি, ফার্মাকোথেরাপি ভালো লাগে, তাহলে কোন প্রেসক্রীপশন থাকলে তা নিয়ে ১-২ ঘন্টা ঘাটাঁঘাটি করো এভাবে জানার আগ্রহ থাকলে সে একসাথে অনেক তথ্য জানতে পারবে।

এছাড়াও ফার্মা কোম্পানিতে বা ফার্মাসিউটিকালসে যে ওষুধগুলো আছে তা অ্যানালাইসিস করা। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এটাই আমার সাজেশন থাকবে।

ধন্যবাদ সবাইকে।

 

ফেসবুক:

https://www.facebook.com/clearconceptmed?mibextid=ZbWKwL

ফেসবুকগ্রুপ: 

https://m.facebook.com/groups/meditalks?wtsid=rdr_09NwGrTaa9jGK2kyQ

 

ইউটিউব: 

https://youtube.com/@clearconceptmed?si=iGPYBPKrPxPMKQT9

লেখক :

তৌহিদা 

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

Youth School for Social Entrepreneurs (YSSE)