আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ তরুণদের জন্য অসাধারণ এক সুযোগ, যা শুধু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রেই নয়, ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন এবং পেশাগত নেটওয়ার্ক তৈরিতেও অত্যন্ত কার্যকর। বিভিন্ন বৃত্তি বা ফেলোশিপের মাধ্যমে এখন অনেকেই বিভিন্ন দেশে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তবে সফলভাবে এই সম্মেলনে যোগ দিতে হলে কিছু প্রস্তুতি এবং কৌশল জানা জরুরি।

সঠিক সম্মেলন বেছে নেওয়া

আপনার পড়াশোনা, পেশা বা আগ্রহের সঙ্গে মিলিয়ে উপযুক্ত সম্মেলন খুঁজুন। ইউনাইটেড নেশন ইয়ুথ অ্যাসেম্বলি, ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড সামিট বা জলবায়ু সম্মেলনের মতো বড় আয়োজন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোট সম্মেলনও হতে পারে আপনার জন্য উপযুক্ত। কনফারেন্সের ওয়েবসাইটে ‘এলিজিবিলিটি’ অংশটি ভালোভাবে দেখে নিন। আপনার আগ্রহের বিষয় যেমন পরিবেশ, প্রযুক্তি, বা ব্যবসা—তার ওপর ভিত্তি করে সম্মেলন বেছে নিন।

প্রস্তুতি ও আবেদন প্রক্রিয়া

সম্মেলনে অংশ নিতে হলে আবেদন প্রক্রিয়ায় মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আবেদনপত্রে আপনার দক্ষতা, স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম, এবং কেন এই সম্মেলনে অংশ নিতে চান তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। এখন অনেক সম্মেলনে ভিডিও সাবমিশনের প্রয়োজন হয়, যেখানে আপনাকে নিজের কথা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আপনার সিভি আপডেট রাখুন এবং নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন।

এছাড়া, সম্মেলনে যাওয়ার আগে যেসব সেশনে যোগ দেবেন এবং কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তা পরিকল্পনা করে নিন। কনফারেন্সের মাধ্যমে কীভাবে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবেন, তা নিয়েও ভাবুন।

যথাযথ প্ল্যাটফর্মে খোঁজ রাখা

ইন্টারনেটের সাহায্যে বিভিন্ন সম্মেলনের আপডেট রাখা যায়। বড় বড় সম্মেলনের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে, যেখানে সারা বছরই তথ্য পাওয়া যায়। ফেসবুক, লিংকডইন বা টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকেও খবর পেতে পারেন। পরিচিত এমন কেউ যদি আগে অংশগ্রহণ করে থাকেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করুন।

নেটওয়ার্কিং এবং অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ ব্যবহার

সম্মেলনে অংশ নেওয়া মানে শুধু বক্তাদের কথা শোনা নয় এটা এক নতুন জায়গা নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ। অচেনা মুখগুলোর ভিড়ে নিজের জায়গা করে নিতে হবে এবং নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। হয়তো প্রথমে একটু সংকোচ হবে কিন্তু সহজ কিছু প্রশ্ন দিয়ে আলাপ শুরু করলেই দেখবেন কথোপকথন আপনাআপনিই এগিয়ে যাচ্ছে।

কোনো স্পিকারের বক্তব্য যদি আপনার অনেক ভালো লাগে, তাহলে সেশন শেষে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। কয়েকটি আন্তরিক শব্দ, একটি ছোট্ট প্রশ্ন কিংবা নিজের মতামত জানানো এসবই হতে পারে ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগের ভিত্তি। আপনার মতামত ও চিন্তাগুলো জায়গা করে নিক আলোচনার টেবিলে। সম্মেলনের অভিজ্ঞতা তখনই পূর্ণতা পাবে যখন শুধু শ্রোতা নয় বরং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হয়ে উঠবেন আপনি।

অপরিহার্য প্রস্তুতি এবং ডকুমেন্টস তৈরি

সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র হাতে আসার আনন্দটাই অন্যরকম। কিন্তু সেই আনন্দ যেন শেষ মুহূর্তে কোনো জটিলতায় ম্লান না হয়ে যায়! পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভিসা কিংবা অন্য ভ্রমণসংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে তো? এসব ঝামেলা যদি আগেভাগে গুছিয়ে রাখা যায় তাহলে নিশ্চিন্ত মনে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। ভাবুন তো যাত্রার ঠিক আগে বুঝলেন যে একটা জরুরি ডকুমেন্টের মেয়াদ শেষ এমন পরিস্থিতি কারোরই কাম্য নয়! তাই আগেভাগেই সবকিছু গোছানো থাকলে পথচলাটাও হবে মসৃণ ও দুশ্চিন্তামুক্ত।

অভিজ্ঞতার প্রয়োগ

সম্মেলন শেষ হলেও এর অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সুযোগ কিন্তু শেষ হয় না। যাদের সঙ্গে পরিচয় হলো, যাদের কথা আপনাকে ভাবিয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখুন। কখনো একসঙ্গে কাজের সুযোগ আসতে পারে, কখনো হয়তো শুধু একটি কথোপকথনই হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের পথচলার অনুপ্রেরণা।

নতুন শেখা বিষয়গুলো শুধু মনে গেঁথে রাখলেই হবে না ভাবতে হবে এগুলো কীভাবে পড়াশোনা বা পেশাগত জীবনে কাজে লাগানো যায়। জ্ঞান তখনই পূর্ণতা পায় যখন তা বাস্তবে প্রয়োগ করা যায়।

আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অভিজ্ঞতা শুধু একটা ইভেন্ট নয় এটা হতে পারে আপনার দক্ষতা বিকাশের সিঁড়ি যা ভবিষ্যতের দিগন্ত খুলে দেওয়ার চাবিকাঠি। পরিকল্পনা আর আগ্রহ থাকলে এই অভিজ্ঞতাই হয়ে উঠবে আপনার সম্ভাবনার প্রধান উৎস।

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন

লেখিকা,
আনিকা শারমিলা
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE