প্রতি বছর “৮ই সেপ্টেম্বর” বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস। এই দিনটিকে ঘিরে রয়েছে বিশাল এক ইতিহাস। এই দিনটি পালন করার মূল উদ্দেশ্য বৈশ্বিক ও দেশীয় ভাবে স্বাক্ষরতার গুরুত্ব অনেক।

 

“১৯৯৬ সালের ২৬ অক্টোবর” এ ইউনেস্কো ঘোষণা করে যে প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস পালন করা হবে যাতে বিশ্ব জুড়ে যত শিক্ষা সমস্যা আছে সেগুলো দূর করা যায়। ১৯৬৭ সালের ১৪ তম অধিবেশনে, ইউনেস্কো সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস পালন করে। ইউনেস্কোর মূল উদ্দেশ্য ছিল- শুধু সমস্যা দূর করা নয়, একই সঙ্গে মানুষকে এটা বোঝানো যে শিক্ষা এবং স্বাক্ষরতা কতটা প্রয়োজন একটা মানুষের জন্য। “১৯৬৫ সালের ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অব মিনিস্টার্স অব এডুকেশনে” আলোচনা করা হয়েছিল নিরক্ষরতা দূরীকরণ নিয়ে। এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তেহরানে।

 

বিশ্বে বিভিন্ন দেশে স্বাক্ষরতার বিভিন্ন সংজ্ঞা থাকলেও ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো একটি সার্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। তখন শুধু কেউ নিজের নাম লিখতে পারলেই স্বাক্ষর বলা হতো। পরর্বতীতে প্রায় প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞার পরিবর্তন এসেছে। ১৯৯৩ সালের একটি সংজ্ঞায় ব্যক্তিকে সাক্ষরতা অর্জন করার জন্য ৩ টি শর্ত পালন করতে হতো।যথা:

 

১।ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে।

 ২।নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে।

 ৩। দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব নিকাশ করতে পারবে।

 

পৃথিবীর প্রায় ৭৭৫ মিলিয়ন অধিবাসীর ন্যূনতম প্রয়োজনীয় অক্ষর জ্ঞান এর অভাব রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন এখনো অশিক্ষিত। এই জনগোষ্ঠীর প্রায় দুই তৃতীয়াংশই নারী। সারা বিশ্বে প্রায় ৬০.৭ মিলিয়ন শিশু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আর বেশির ভাগই শিক্ষায় অনিয়মিত এবং শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে।

স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশে স্বাক্ষরতা দিবস উদর্যাপিত হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এই দিবসটি খুবই গুরুত্বের সাথে পালিত হয়। এই স্বাক্ষরতা দিবস এখন আর সীমাবদ্ধ নেই। তা এখন দেশের প্রতিটি স্কুলে, কলেজে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নিরক্ষরতার হার কমিয়ে আনার জন্য।

 

বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এবং জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে।সাক্ষরতা এবং উন্নয়ন একই সূত্রে গাঁথা। উন্নয়নশীল সমাজ গঠনের জন্য যে জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন তা স্বক্ষরতার মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব।

প্রতি বছর দিবসটি উদযাপনের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দেশের স্বাক্ষরতা ও বয়স্ক শিক্ষার অবস্থান তুলে ধরা হয়।

২০০৬ সালে ইউনেস্কোর রির্পোট অনুযায়ী, অঞ্চল ভিত্তিতে “দক্ষিণ এশিয়ায়” প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার সবচেয়ে কম ৫৮.৬%।এরপরই রয়েছে “সাব-সাহারান আফ্রিকা” অঞ্চলের অবস্থান ৫৯.৭%। এই দেশ গুলো নিরক্ষরতার হারের সাথে চরম দরিদ্র এবং নারীদের সামাজিক অবস্থার সাথে নিরোক্ষরতা নিবিড় ভাবে পরিলক্ষিত হয়।

 

দেশের বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ২০২২ সালে এ হার ছিল ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সে হিসেবে দেশের স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ।

 

স্বাক্ষরতা দিবস নিয়ে এখন বাংলাদেশ নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব মহানগর বা জেলা পর্যায়ে স্বাক্ষরতা দিবসের নানা কর্মসূচী পালন করে থাকে। যা জনগণকে সচেতন করে তুলছে।এছাড়াও বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি নানা টিভি চ্যানেলে এই স্বাক্ষরতা দিবস নিয়ে নানা রকম প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। তাছাড়াও বর্তমানে মোবাইল এ সচেতনতামূলক এসএমএস পাঠানো হচ্ছে।যার মাধ্যমে দেশের বেশির ভাগ জনগণ এখন শিক্ষা নিয়ে খুবই সচেতন। যা পরিবর্তনশীল সমাজের অঙ্গিকার স্বরূপ।

ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সমাজের মধ্যে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে এই দিবসটি পালন করা হয়।

 

এরকম আরো ব্লগ পরতে, ক্লিক করুন।

 

লেখক,

তিথি রাণী সরকার

ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE