আমাদের পৃথিবী প্রতিনিয়ত উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রযুক্তিগত কল্যান পৃথিবীকে নিয়ে গিয়েছে উন্নতির চরম শিখরে। এই প্রযুক্তিগত কল্যানগুলোর মধ্যে একটি হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স করে তুলেছে মানুষের কাজকে সহজ এবং সময় উপযোগী।

তবে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী মানুষের সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করে দিছে না?

আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, বিভিন্ন ধরনে ‘এআই’ টুল যেমন: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, কপিলট ইত্যাদি আসার পর থেকে মানুষ তাদের বেশির ভাগ সৃজনশীল কাজ শুরু করেছেন এসব টুলের মাধ্যমে। ই-মেইল থেকে শুরু করে একটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখতেও মানুষ আজকাল ‘এআই’ এর উপর নির্ভর করছে। যা ধ্বংস করছে মানুষের মৌলিক চিন্তাধারাকে। হ্যাঁ, অবশ্যই ‘এআই’ টুলগুলোর ব্যবহার বিশেষক্ষেত্রে জরুরি। যেমন: আপনি কোনো তথ্য নিয়ে জানেন না তা সম্পর্কে জানতে চাইলে এআই টুলগুলো হতে পারে আপনার জন্য উত্তম মাধ্যম। এছাড়া আপনার মনের গভীরে থাকা ছবিগুলোও আপনি বাস্তবে রূপান্তর করতে পারেন এআই এর মাধ্যমে। তবে এআই এর মাত্রা অতিরিক্ত ব্যবহার কোনোদিন সুফল বয়ে আনতে পারে না। আর আমাদের স্বভাব এমন হয়ে গেছে যে, আমরা বই পুস্তক থেকে আজকাল বেশি এআই এর উপর নির্ভরশীল।

শিক্ষার্থীদের এখন কোনো এসাইনমেন্ট দেওয়া হলে তারা তা শেখার থেকে বেশি এআই থেকে নকল করতেই ভালোবাসে। যা নষ্ট করছে তাদের যৌক্তিক চিন্তার ক্ষমতা। এখন মানুষ গান, কবিতা, গল্প লিখতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করে। তাই মানুষের সত্য মনের ভাষা আজকাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আড়ালেই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।

তবে মানুষ যে এআইকে ব্যবহার করে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে খুশি হচ্ছে এতে মোটেও খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ মানবজাতীর ভবিষ্যত এবং সৃজনশীলতার পথে এআই হুমকিস্বরূপ। চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক, ভবিষ্যতে এআই আমাদের জন্য কী কী হুমকি বয়ে আনতে পারে:

চাকরি হারানোর আশঙ্কা: বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এতটাই প্রসার হয়েছে যে মানুষ মানুষের থেকে বেশি এআই এর উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। তাছাড়াও এআই টুলগুলো এখন মানুষ যা করতে সক্ষম তার থেকে বেশি করতে সক্ষম হচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনার তথ্য ও বিশ্লেষণ এআই এখন কয়েক সেকেন্ডেই করে দিছে। যার ফলে মানুষের সৃজনশীলতার উপর নির্ভরশীলতা কমে আসছে। আর এর ফলস্বরূপ চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। যেখানে এআই দিয়ে কোম্পানিগুলো নানান সমস্যা প্রায় বিনামূল্যেই সমাধান করতে পারছে সেখানে তো আর বেতন দিয়ে মানুষ রাখার অর্থ হয় না। তাই এআই প্রযুক্তিকে চাকরিক্ষেত্রে হুমকিয় বলা যায়।

মানুষ চিন্তাভাবনার ক্ষমতা হ্রাস: মানুষকে যখন একটা সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয় তখন সে তার মস্তিষ্কের গভীর থেকে ভেবে এই সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে। যার ফলে বৃদ্ধি পায় তার সৃজনশীল চিন্তাধারার ক্ষমতা। কিন্ত এআই প্রযুক্তি আসার ফলে মানুষ এআই এর মাধ্যমেই সকল সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে লেগেছে। আজকে মানুষকে একটা কিছু নিয়ে লিখতে বললে সে নিজে সেটি গবেষণা করে, না ভেবে, কেবল এআই টুল যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, কপিলট এসবের সাহায্যে লেখা হবহু কপি করছে। যার ফলে নষ্ট হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কের স্বকীয়তা।

এআই এখন লেখা থেকে শুরু করে জটিল জটিল কোডিং করতেও সক্ষম। তাই যেসকল মানুষ কোডিং এ দক্ষ তাদের এই সৃজনশীল গুণ ক্রমশ বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে। এমন হয়তো দিন আসতে পারে যেদিন মানুষের চিন্তাভাবনা ক্ষমতা একেবারেই হ্রাস পাবে কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বুদ্ধি হবে মানুষ থেকে বেশি। তখন হয়তো মানুষকেই কন্ট্রোল করবে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

সৃজনশীলতায় এআই এর দখল: আপনি এখন কোনো সৃজনশীল জিনিস লিখলে দেখবেন আপনার অধিকাংশ লেখাই এআই নিজের হিসেবে দাবী করতে পারে। কিভাবে? আপনি যদি নিজে কিছু লিখেন আর একটু সৃজনশীলভাবে লিখেন আর তা যদি কোনো এআই ডিটেটক্টরে চেক করা হয় তাহলে সেখানে এআই ধরা পড়বে। যদিও সব ক্ষেত্রে এটি হয় না। তবে অনেক ক্ষেত্রেই আপনার নিজের লেখাকে এআই বলে দাবী করা হয়। এটি এআই ডিটেটক্টর টুলগুলোর ভুলও হতে পারে। তবে এআই যে গতিতে এগোচ্ছে এটি যে হুবহু মানুষের মতোই লেখা শুরু করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর আপনার লেখাকে এআই তখন নিজের বলে দাবী করবে এবং আপনি এর বিরুদ্ধে কোনো কপিরাইট আইনেও ব্যবস্থা নিতে পারবেন না।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানবজাতির জন্য একটি আশীর্বাদ এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এটি আশীর্বাদের সাথে সাথে অভিশাপও বটে। এআইকে প্রয়োজনীয় অমঙ্গল বললেও ভুল হবে না। কারণ আপনার জীবন এআই যত সহজ করে দেবে তার সাথে ধ্বংস করে দেবে আপনার স্বকীয়তা। তাছাড়া এআই এর চরম অগ্রগতি মানুষের চাকরিক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এমন একদিন হয়তো আসতে পারে যেদিন এই পৃথিবী থাকবে এআই এর দখলে আর মানুষ হবে চূড়ান্ত অলস প্রকৃতির। হারিয়ে যাবে তাদের চিন্তা চেতনার ক্ষমতা।

যাহোক, যেহেতু একটি প্রযুক্তি এসে পড়েছে সেহেতু আমাদের উচিত এর সঠিক উপযোগী ব্যবহার করা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কৃত্রিম হিসেবেই ব্যবহার করে নিজের বুদ্ধিমত্তার সাথে তুলনা করা। কারণ এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও কিন্তু মানুষের প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা এবং সৃজনশীলতারই ফসল।

এই রকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন এখানে

লেখক,

প্রত্যয় কান্তি দাশ,

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট,

YSSE