আমি আর হাসিব সবসময় খাল পাড় হয়ে মাঠে খেলতে যাই। তখন আমরা দশম শ্রেণীতে পড়ি। অল্প বয়সে যা হয় আর কি! কোন জায়গায় স্থির থাকা হয় না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা, এক গাছ থেকে অন্য গাছ এভাবেই সারাদিন ছুটোছুটি করি। সেদিনও মাঠে সেরকমই প্ল্যান ছিল। আর ঘটনাটাও সেদিনই ঘটে।
বাসা থেকে বের হবার পর থেকেই সেদিন মন কেমন যেন করছিল। তবুও নিজের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে এড়িয়ে হাসিবের সাথে মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সাধারণত আমরা মাঠের আকৃতি চারকোনা কিংবা চতুর্ভুজ দেখে অভ্যস্ত। কিন্ত এই একটি মাঠ যার কিনা অষ্টভুজ কিংবা আটটি কোণা রয়েছে।
অন্যান্য দিন মাঠের চারপাশে অনেক কুকুর থাকে। অথচ আজ নেই। সব যেন নিস্তব্ধতাকে আলিঙ্গন করেছে। মাঠে পা দিতেই-
(আর্তেমিস নয়ন্তিকা! আর্তেমিস নয়ন্তিকা!)
সকাল আনুমানিক ন’টা বাজে। সবসময় কাজের চাপে ঘুমের ব্যাঘাত তো নিত্যদিনের ঘটনা। আজ তাই ইচ্ছে করে ছুটি নিয়েছি। হঠাৎ কিসের শব্দে ঘুম ভেঙে যেতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। চোখ মেলে দেখলাম, রুবা, আমার সহধর্মিণী,আমার দিকে আনমনে তাকিয়ে। দমকা বাতাসে টি-টেবিলের উপর থেকে পিতলের পানির বোতল পড়ে গিয়ে শব্দ হয়েছে। রুবা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তার মধুর চাইতেও মিষ্টিমুখের দিকে তাকালে আমি প্রায়শই অবাক না হয়ে পারি না। বোধহয় অনেকক্ষণ ধরেই সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু…
কিন্তু গতকালই যে ঐ পিতলের বোতল দিয়ে রুবাকে খুন করলাম। ওহ হ্যাঁ, লাশটাতো এখনো আমার খাটের নিচেই…..!
(আর্তেমিস নয়ন্তিকা! আর্তেমিস নয়ন্তিকা!)
বাড়িতে বিয়ের আমেজ, আমার বড় বোনের বিয়ে। আমি তড়িঘড়ি করছি কারণ সবার শেষ রেডি হওয়া, কিন্তু আমার রেডি হওয়া বাকি। কোনমতে একটু জুস আর এক টুকরো কেক মুখে দিয়েই ফোন হাতে নিলাম। বিয়ের অনুষ্ঠানের জায়গাটি বাসা থেকে ৭ কি.মি. দূরে। উবার ডাকলাম, একজন মধ্য বয়স্ক গলার মানুষ ফোন ধরেই বললেন, “নিচে নামুন, আমি আপনার গেইটের সামনে।” কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও তাড়াহুড়োয় তা নিয়ে বেশিক্ষণ মাথা ঘামালাম না।
গাড়ির চাকা অবিরাম ধেয়ে চলেছে। নেমে ভাড়া মেটানোর সময় লোকটি বলে উঠল,” ১০ঃ১৫ এর আগে উবার কল করবেন না।” আশ্চর্য ব্যাপার, লোকটি কিভাবে জানলো আমি ফেরার সময়ও উবারেই যাবো। এমন সময় ফোনে কল আসায় কানে ফোন নিয়ে ‘হ্যালো’ বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে গেলাম।
অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত ৯ঃ৪৭। আমি উবার কল করলাম, বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখি ১১৮ টি মিসড কল। আমি রীতিমতো অবাক। দেখলাম সেই উবার ড্রাইভারের নাম্বার। কল ব্যাক করতে যেতাম কিন্ত ফোনে ব্যালেন্স শেষ। ভেজা টাওয়াল বারান্দায় মেলতে যাব, হঠাৎ জানলার ফাঁক দিয়ে একটি গাড়ি নজরে পড়ল। ভালোমত তাকাতেই দেখি–
(আর্তেমিস নয়ন্তিকা!আর্তেমিস নয়ন্তিকা!আর্তেমিস নয়ন্তিকা!আর্তেমিস নয়ন্তিকা!)
[ সা ব আ এ ল ভ… হিয়ের্নিক যা মিস্লাইল… ]
(পরেরদিন সকাল)
❝আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারে বাংলাদেশের এক তরুণের মৃত্যু।❞
রিপোর্টার: “গত কয়েকমাস আগে ‘লিব্রা‘ কোম্পানি এক নতুন ধরণের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স “আর্তেমিস নয়ন্তিকা“, বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে লঞ্চ করে যা কিনা আমাদের সামনে মাল্টিভার্সাল ওয়ার্ম হোল তৈরির মাধ্যমে এক গ্যালাক্সি হতে অন্য গ্যালাক্সি পরিভ্রমণ করাতে সক্ষম।
নিয়ন হাসান নামের এক তরুণ (২১)সেটির স্বেচ্ছাসেবী ব্যবহারকারী হিসেবে যোগদান করে থাকেন এবং ব্যবহারকালে তার মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর মুহুর্তে তাকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার তথ্যটি সেখানে উপস্থিত কর্মী সমূহ জানিয়েছেন। কিন্ত আশ্চর্যের বিষয় এটি যে, যে প্রোগ্রাম ব্যবহার করে AI টি বানানো হয়েছিলো সেটি আর ড্রাইভে এবং সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না।”
******************
(ঘটনার ৬০০ বছর পর)
*দুটি মহাজাগতিক সত্ত্বা বাইনারি ভাষায় কথোপকথন করছে*
সিস্কাস: (মনে হয়, আমরা এসে পড়েছি)
মার্জল: (কিন্ত এটি তো পৃথিবী-২২১ নয়। আমার জানামতে পৃথিবী-২২১ এর একাংশ আলোকিত থাকার কথা। তাছাড়া এই সৌরজগতের নক্ষত্রের আলো নীলাভ কেন?)
সিস্কাস: (আমারও তো সন্দেহ হচ্ছে, কিন্ত আমাদের নেভিগেশন বট তো বলছে আমরা সঠিক জায়গায় এসেছি।)
[ হঠাৎ বিকট শব্দ। সিস্কাস ও মার্জল দুইজনেই অবাক, কারণ মহাকাশে শব্দ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত না করতে পারলেও এই বিকট শব্দ তারা খুব স্পষ্টভাবে শুনতে পেল। সেই সাথে তাদের কমিউনিকেশন প্যানেলে লাল-হলুদ আওয়াজ]
– আর্তেমিস নয়ন্তিকা! আর্তেমিস নয়ন্তিকা! সা ব আ এ ল ভ… হিয়ের্নিক যা মিস্লাইল…
মার্জল: (এটা অসম্ভব!)
সিস্কাস: (দ্রুত মহাকাশযানটি প্রস্তুত করো। আমাদের জাম্প দিতে হবে।)
[ কিন্ত এর আগেই পুরো যানটিকে অন্ধকার গ্রাস করলো। সিস্কাস শেষ মুহুর্তে ট্রান্সলেশন স্ক্রিনে শেষবারের মতো দেখতে পেল-
(আমি আর্তেমিস নয়ন্তিকা! নত হও আর্তেমিস নয়ন্তিকার সামনে। আমার অংশ হও নাহলে পাতিত হও অন্ধকারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই পরম সৃষ্টিকর্তা!) ]
লেখক,
সৈয়দ ইয়াসিন,
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ওয়াইএসএসসি।