করোনার মহামারীর স্মৃতি এখনো সারা বিশ্বের মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম। আস্তে আস্তে এই করোনার স্মৃতি ভুলে বিশ্ব যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তখনই ডব্লিউএইচও এক্স নামের নতুন একটি মহামারি সংক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা করছে, যা করোনা ভাইরাসের মতো প্রসারিত হতে পারে এবং মৃত্যুর আশঙ্কা আছে পাঁচ কোটি মানুষের।

ডব্লিউএইচও এই রোগকে ‘ডিজিজ এক্স’ বলে সংজ্ঞায়িত করেছে। এই নতুন ভাইরাস মহামারির আত্মকথন করতে পারে, এবং এর চিকিৎসার সম্ভাবনা এখনো নেই।

বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন যে, এই রোগটি মারাত্মক হতে পারে এবং ইবোলা, এইচআইভি/এইডস এবং কোভিড ১৯ -এর মতো ছড়িয়ে গিয়ে মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে।

ডিজিজ এক্স কি?

বিজ্ঞানীরা পশু ভাইরাস গুলির একটি তালিকা তৈরি করেছে, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। তবে, এই ভাইরাসের সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া যায়নি, এবং এর কারণে এই ভাইরাসটি “ডিজিজ এক্স” নামে পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “ডিজিজ এক্স” কথাটির অর্থ হল, এমন একটি রোগ, যা অতিমারি ঘটাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সেই রোগটির প্যাথোজেন কী ভাবে মানুষের ক্ষতি করতে পারে, তা এখনও অজানা

ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মার্ক উল হাউস বলেছেন “এটি এমন একটি জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যা যে কোনদিন একটি নতুন আতঙ্কজনক রোগ সৃষ্টি করতে পারে”।

কেমন হতে পারে এই ‘ডিজিজ এক্স’?

বিজ্ঞানীরা এই ‘ডিজিজ এক্স’ কে এক ধরনের জুনোটিক (Zoonotic) জনিত রোগ হওয়ার আশঙ্কা করছেন, যা সাধারণভাবে মানুষ থেকে অন্য প্রাণীদের মধ্যে বা অন্য প্রাণীদের থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। এই ধরনের রোগগুলি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হতে পারে, এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই নতুন মহামারী নিয়ে চিন্তা তেমনই নতুন অধ্যয়নের সুচনা করেছে।

কেন মহামারীর ঝুঁকি বাড়ছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এটি ভবিষ্যতে মহামারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কজনক হবে বেশ কয়েকটি কারণে :

জনসংখ্যা বৃদ্ধি : একটি বৃহত্তর, ঘনবসতিপূর্ণ বাসস্থান এবং অধিক জনসংখ্যা রোগজীবাণু কে আরো সংবেদনশীল করে তুলতে পারে এবং এভাবে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিকে সংক্রমণের হারও অতি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

ভ্রমণ : মানুষ এখন ভ্রমণ করতে খুব বেশি পছন্দ করে। পর্যটন এরিয়াগুলোতে জনসংখ্যা বেশি হওয়ার ফলে রোগের বিস্তার আরও সহজতর হয়ে যেতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন :  জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং তীব্রতাকে আরও খারাপ করছে এবং পারমাফ্রস্ট গলে যাওয়ার সাথে সাথে প্রাচীন ভাইরাসগুলি পুনরুত্থানের দিকেও যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের আরও বড় কারণ হচ্ছে বন উজাড় করা।

“ডিজিজ এক্স ” এর চিকিৎসা ব্যবস্থা :

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কর্তৃক এক্স নামে একটি নতুন রোগের ঘোষণা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এটি সম্ভাব্য ভাবে করোনাভাইরাসের মত মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে, 

আনুমানিক পাঁচ কোটি মানুষ তাদের জীবন হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। WHO এই রোগটিকে ‘ডিজিজ এক্স’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিন টাস্কফোর্স এর প্রাক্তন প্রধান কেট বিংহাম এই নতুন ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রভাব এবং 1919-20 সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির সাথে তুলনা করেছে। 

এই রোগটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের মাধ্যমে ছড়াতে পারে এবং বর্তমানে এর কোনো পরিচিত প্রতিকার নেই। ‘ডিজিজ এক্স’ এটি নতুন রোগে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করার প্রয়াসে, ইউকে হেলথ প্রোটেকশন এজেন্সি (ইউ এইচএস এর) প্রধান অধ্যাপক ডেম জেনি, সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের আগে ভালোভাবে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মহামারী প্রতিরোধে ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার অনুসন্ধান ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে

ডিজিজ এক্স মোকাবেলায় প্রস্তুতি : 

ডিজিজ এক্স এর জন্য প্রস্তুত থাকতে আমরা বেশ কিছু  পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি:

পরবর্তী মহামারী আঘাতের আগে বিশেষজ্ঞরা এখন বিজ্ঞান এবং গবেষণায় আরও জোর দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা ভাইরাসের সিকোয়েন্সি নজরদারি করতে, ডেটা সংগ্রহ এবং ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও ভাল সিস্টেম স্থাপনের পরামর্শ দেয়।

ভাইরাসে নজরদারি করা এবং আরও ভাইরাসের সিকোয়েন্সিং – কিংবা নতুন ভাইরাস শনাক্ত করা, এবং তারপর সেই পরিচিত সিকোয়েন্সের উপর ভিত্তি করে আগে থেকেই ভ্যাকসিন তৈরি করা,” পেলোজা বলেছেন। “

এবং তারপর যখন একটি নতুন মহামারী আসে, আপনি সম্ভাব্য ভাবে সবচেয়ে মিলে যাওয়া ভ্যাকসিন তৈরি করার কথা ভাবতে পারেন।

জনসচেতনতা ও শিক্ষা বৃদ্ধি করা। আমরা দেখেছি করোনা মহামারি যখন প্রথম সারা দেশে ছড়িয়ে পরে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নেয় তার পিছনে মূল কারণ ছিলো জনগণের সচেতনার অভাব। তাই  যদি কোনো মহামারী শুরু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে মহামারি শুরু হওয়ার আগের থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্বের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত।এছাড়াও ন্যায়সঙ্গত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

করোনা মহামারীর  সময় ক্লিক করুন। 

 

লেখক, 

তাবাসসুম আক্তার তাবা 

ইন্টার্ন,‌ কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE