রাজরাজরাদের দিন শেষ। কিন্তু পাগলামিতে মত্ত রাজাদের গল্পের আবেদন কখনোই শেষ হওয়ার নয়। তাদের কাহিনিও অসীম।
চলুন জেনে আসি ইতিহাসের কিছু উন্মাদ রাজাদের কাহিনি –
- রাজা সল :
বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত আছে এক উন্মাদ রাজা সলের কথা। তিনি মাঝে মাঝে তীব্র পাগলামি করতেন এবং পরে ডেভিডের বীণাবাজনা শুনে তিনি শান্ত হতেন।
কিন্তু সেই ডেভিডকেই তিনি একদিন ক্রোধের ও হিংসার বশে হত্যা করে ফেলেন। তিনি রাজকার্য পরিচালনা করার সময় হঠাৎ বিনা কারনে ক্ষেপে উঠতেন। একবার তিনি উন্মত্ততার বশে নিজ প্রিয় পুত্র জোনাখনের গলা টিপে ধরেছিলেন।
- পারস্য সম্রাট ক্যাম্বায়েসিস :
আরেক উন্মাদ রাজা ছিলেন পারস্য সম্রাট ক্যাম্বায়েসিস। তিনি খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন।
তিনি মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করতেন। প্রায় সর্বক্ষণই তিনি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে থাকতেন, নেশার ঘোরে মাঝে মাঝে তিনি অকারণেই রেগে যেতেন এবং বাধিয়ে দিতেন তুলকালাম কান্ড।
হাতের কাছে যা পেতেন সব কিছু ভেঙ্গে তছনছ করতেন। এমন ভয়ংকর অবস্থা হয়ে উঠতো যে, যাকে সামনে পেতেন তাকেই আঘাত করতেন।
এই অবস্থায় তার পাগলামি যখন চরমে, তখন রাজবৈদ্যের পরামর্শে তাঁকে বেধে আটকে রাখা হতো।
একদিন তীর ধনুকের নিশানা ঠিক করার টার্গেট হিসেবে হত্যা করেছিলেন তার এক বন্ধুপুত্রকে। এছাড়া মদখেয়ে মাতাল অবস্থায় পেটে লাথি মেরে হত্যা করেছিলেন তার এক সন্তান সম্ভবা বোনকে। ঝোঁকের মাথায় বিয়ে করেছিলেন তার এক সহোদরা বোনকে।
- রাজা নেবুচাদজেনার :
বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানের স্রষ্টা রাজা নেবুচাদজেনারকে সব উন্মাদ রাজার পিতামহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তিনি প্রাচীন জেরুজালেম নগরীর পবিত্র মন্দির ধ্বংস করেন এবং ব্যাপক লুটপাট চালান। তিনি নিজেকে ঈশ্বর হিসেবে দাবী করেন।
তিনি ঘোষণা দেন নিজেকে মেঘমণ্ডলীর ওপরে অধিষ্ঠিত করবেন। আবার তিনি নিজেকে নেকড়ে বাঘ বলে মনে করতেন।
মদের নেশায় মাতাল হয়ে যখন উন্মত্ত অবস্থায় থাকতেন তখন কাঁচা মাংস পর্যন্ত খেতেন এবং মুখ দিয়ে নেকড়ে বাঘের অনুকরণে অদ্ভুত আওয়াজ করতেন। চিকিৎসকগণ বলেন লাইক্যাথোপি নামক এক মানসিক রোগের জটিল শিকার ছিলেন তিনি।
- রোমান সম্রাট কালিগুলা :
ক্ষমতা মানুষকে কীভাবে উন্মাদ করে তোলে তার স্পষ্ট উদাহরণ হলো রোমান সম্রাট ‘কালিগুলা’। কালিগুলার পুরো নাম জুলিয়াস সিজার অগাস্টাস গেরমানিকাস; ডাক নাম গাইয়াস। ৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ক্ষমতায় গ্রহণ করেন।
কালিগুলাকে ক্ষমতায় পেয়ে প্রথমে রোমের মানুষ প্রথমে খুশি হলেও সে খুশি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
ভয়াবহ যৌন বিকৃতি, উন্মাদনা, নিষ্ঠুরতা, ক্ষমতার সীমাহীন অপব্যবহার, বিলাসিতা, কথায় কথায় মুণ্ডুচ্ছেদ, সিংহাসনের প্রতি সামান্য হুমকি বলে যাকেই মনে করা হয়েছে তারই মাথা ধর থেকে কেটে আলাদা করে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন কালিগুলা।
তার জন্মদিন মনে রাখতে না পারাকেও অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতেন কালিগুলা। অন্যদিকে রাজ-তহবিলের ঘাটতি পূরণে ১৪ থেকে ৬০-এর অধিক বৃদ্ধা পর্যন্ত সব নারীকে বাধ্যতামূলক পতিতাবৃত্তিতে ঠেলে দেন কালিগুলা।
- ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই :
ইতিহাসের আরেক খেয়ালী পাগল রাজা হলেন ফ্রান্সের চতুর্দশ লুই। তিনি সিংহাসন হিসেবে ব্যবহার করতেন অস্থায়ী কমোড।
তিনি সারাজীবনে মাত্র তিনবার স্নান করেছেন। তার শরীরের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে কর্মীরা রাজপ্রসাদ ত্যাগ করতে থাকে এবং তাদের ফেরাতে লুই গোটা প্রাসাদ সুগন্ধি ফুলে ফুলে আচ্ছন্ন দেন।
- চীনা সম্রাট কিন শি হুয়াং :
চীনের প্রাচীর নাম নিতে গেলে যার নাম আবশ্যক, তিনি হলেন সম্রাট কিন শি হুয়াং।তিনি ছিলেন চীনের মহাপ্রাচীরের প্রথম পরিকল্পনাকারী।
২২১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ তিনি চীনের প্রথম সম্রাট হন এবং কিং রাজবংশের প্রথম সম্রাট হিসেবে রাজ্য শাসন করেন।
তার সম্পর্কে বলা হয় যে সম্রাটের সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারী পণ্ডিতদের তিনি হত্যা করেতেন। তার সমালোচনামূলক সব বই পোড়ানোর আদেশ দিয়েছিলেন তিনি।
ইতিহাস হলো এক ব্যর্থ শিক্ষক। কারণ ইতিহাসের কাছ থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ইতিহাস কত বৈচিত্র্য ও অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী তা বলে শেষ করা যাবেনা। উন্মাদ রাজাদের অদ্ভুত ঘটনাগুলো তাদের নিজ নিজ ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক জীবনে কী পরিণতি করেছিল তা তাদের ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয়।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
লেখিকা
নুপুর আক্তার
ইন্টার্ন
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE