“মানুষ আসলে একটু ফুরসত চায়। সেই জায়গায় গাছ আছে, ফুল আছে, পানি আছে, শিশুদের মেলা আছে। হাঁটার সুন্দর জায়গা আছে, ব্যায়ামের জিনিসপত্র আছে। ক্লান্ত হলে বসার বা শোয়ার জায়গাও আছে। আর কী চাই?”
বলছিলাম ঢাকার রমনা পার্কের কথা! হৃদপিন্ডের মতন ঢাকার কেন্দ্রে অবস্থিত না হলেও ফুসফুসের মতন ঢাকাকে বাঁচিয়ে রাখছে ঠিকই! অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের বেশ কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার রমনা পার্ক সেজেছে নতুন রূপে। তীব্র প্রখর রোদেও সাজানো গোছানো এই পার্কের ভেতরে হাঁটার রাস্তাগুলো থাকে ছায়ায় ঘেরা। হাঁটতে হাঁটতে আবার কখনো শোনা যায় পাখির ডাক, পাশ দিয়েই ভোঁ দৌড় দিয়ে গাছে উঠে যায় কাঠবিড়ালী।
সন্ধ্যায় রয়েছে ভেতরের হাঁটার রাস্তায় আধুনিক লাইটিংয়ের ব্যবস্থা ! যা রাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আরো কয়েকগুণ। লেকের দুই পাশে কাঠ দিয়ে যে সেতু করা হয়েছে, সেটিও দৃষ্টিনন্দন।
রমনা পার্কের অবস্থান কোথায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় শিশু পার্ক, কাকরাইল মসজিদ ও রুপসী বাংলা হোটেলের পাশেই রমনা পার্ক অবস্থিত। শাহবাগ থেকে ১-২ মিনিটের পথ রমনা পার্ক।
সকাল-সন্ধ্যাই চলে শরীর চর্চা
কেবল সময় কাটানো নয়, শরীর চর্চা আর হাঁটাহাঁটির জন্যও পরিবেশটি দারুণ। ব্যায়াম করার জন্য কিছু স্থায়ী স্থাপনা আছে। ব্যায়াম করার পর আছে বিশ্রামের জায়গা। পার্কটি ভোরে খুলে দেওয়া হয়। বেলা ১২টায় বন্ধ করা হয় দুই ঘণ্টার জন্য। এই সময়টা বাদ দিলে বাকি সময়ের একটি বড় অংশ জুড়েই শরীর চর্চা করতে দেখা যায় দল বেঁধে। পার্কে প্রায় ৫৪টি সংগঠন রয়েছে, যারা মানুষকে শরীর চর্চার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
কি কি দেখবেন রমনা পার্কে?
উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যাঃ রমনা পার্কে বর্তমানে প্রায় ২১১টি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে ৮৭টি শোভাবর্ধক ও ফুলের গাছ, ৩৬টি ফলের গাছ, ৩৩টি ঔষধি গাছ, ৩টি কৃষি বনায়নের গাছ, ২টি বনজ উদ্ভিদ, ২টি জলজ উদ্ভিদ এবং ৩টি মশলা জাতীয় গাছ অন্তর্ভুক্ত।
বিরল প্রজাতির গাছঃ রমনা পার্কে বেশ কিছু বিরল ও দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির গাছের সমারোহ রয়েছে, যা এই উদ্যানকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
শিশু প্রাঙ্গণঃ পার্কটিতে শিশুদের খেলার জন্য তৈরি করা হয়েছে “শিশু প্রাঙ্গন”, তাতে আছে দারুণ সব রাইড। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কের ভেতরের এই ‘পার্কে’ থাকে শিশুদের মেলা।
লেক: রমনা পার্কের লেকও একটি বিশেষ আকর্ষণ, যার দৈর্ঘ্য ৮১২ মিটার এবং প্রস্থ ৯ থেকে ৯৪ মিটার। লেকটির শান্ত পানিতে প্রতিফলিত হয় চারপাশের সবুজ বৃক্ষরাজি, যা পার্কের মনোরম দৃশ্যপটে আরও রঙ ছড়িয়ে দেয়।
ইতিহাসের পাতায় কেমন ছিল এই রমনা পার্ক?
এই রমনা পার্ক/ উদ্যানটি ১৬১০ সালে মোঘল আমলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সময়ে রমনার পরিসীমা ছিল বিশাল এলাকা জুড়ে। মোঘলরাই মূলত রমনার নামকরণ করেন। পুরানো হাইকোর্ট ভবন থেকে বর্তমান সড়ক ভবন পর্যন্ত মোঘলরা বাগান তৈরী করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কোম্পানী আমলে এ এলাকা জঙ্গলে পরিণত হয়। পরবর্তীতে ১৯ শতকে ব্রিটিশ শাসক এবং ঢাকার নবাবদের সহায়তায় এটির উন্নয়ন সাধন করা হয়।
ঢাকা শহরের নিসর্গ পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছিল ১৯০৮ সালে লন্ডনের কিউই গার্ডেনের অন্যতম কর্মী আর. এল প্রাউডলকের তত্ত্বাবধায়নে। শহরের সেই নিসর্গ পরিকল্পনার ফল ছির রমনা পার্কের উন্নয়ন। ২০ বছর লেগেছিল সে কাজ শেষ হতে।
রমনার ঐতিহ্যবাহী বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানঃ
প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের সকালে রমনা পার্কের বটমূলে আয়োজন করা হয় বাংলা নতুন বছরকে বরণ করার বিশেষ অনুষ্ঠান। এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট, যারা ১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে এই উৎসবের আয়োজন করে আসছে। বর্তমানে এটি কেবল একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়, বরং জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে, যেখানে অসংখ্য মানুষ একদম ভোরবেলা এসে বটমূলের ছায়ায় নতুন বছরের সূচনাকে উদযাপন করে, বাংলা নববর্ষকে সাদরে বরণ করে নেয়।
দৃষ্টি নন্দনে কিভাবে বদলে যাচ্ছে রমনা পার্ক?
সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর সব কিছুই বদলে যাচ্ছে এবং সেই সাথে বদলাচ্ছে রমনা পার্ক। পার্কটি নতুন সাজে রূপ বদলাচ্ছে। রমনা পার্কের উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ চলছে। শহরের মাঝে প্রাকৃতিক এই মনোরম পরিবেশ মানুষকে করে তোলে আরো সতেজ। সবকিছু পরিবর্তনের সাথে পার্কের পরিবর্তন করছেন উন্নয়ন কর্মীরা।
এরকম আরো ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন এখানে
লেখক
মাফরুহা সুমাইয়া
ইন্টার্ন , কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE