চাঁদ নিয়ে গবেষণায় বিজ্ঞানীদের যেন কোনো কমতি নেই। বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিজ্ঞানীদের এই প্রচেষ্টা যেনো আরও বহু গুন বাড়িয়ে তুলছে। চাঁদ নিয়ে গবেষণায় এখন পরাশক্তির দেশগুলোর মধ্যেও প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চন্দ্র অভিযান এর যতো সাফল্য :
প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদেকে ছুয়েছিলো রাশিয়া। ১৯৫৯ সালের লুনা ২ চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করে। দ্বিতীয় সফল দেশ কিন্তু প্রথম মানব চাঁদের প্রেরণে প্রথম দেশ যুক্তরাষ্ট্র। নিল এলডেন আর্মস্ট্রং, তিনি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণকারী প্রথম ব্যক্তি। এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে চন্দ্রযান করাতে সক্ষম হয়েছিলো।
তবে সেই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলো ভারত এর নাম। চীন চাঁদে সফল অভিযান সম্পন্ন করে। ২০১৩ সালে চ্যাং ই-৩ চন্দ্রযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করে। সর্বশেষ এই তিন দেশের সাথে যুক্ত হলো ভারত। ভারত এর পাঠানো চন্দ্রযান-৩ সফল ভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরন করেছে। অভিযানের মাধ্যমে পূর্বসূরী চাঁদে সুরক্ষিত অবতরণে সক্ষম চতুর্থ মহাকাশ সংস্থায় পরিণত হয়।
চন্দ্রাযান -৩ হল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) কর্তৃক পরিচালিত ভারতের চন্দ্রাভিযান কর্মসূচি অন্তর্গত তৃতীয় চন্দ্রান্বেষণ অভিযান ও চন্দ্র পৃষ্ঠে প্রথম অবতরণ। গত বুধবার চাঁদের জমিতে অবতরণ করেছে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম” বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা পড়ছে ভারতের। চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ এর তারিখ ছিল জুলাই ১৪, ২০২৩ এবং এটি সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করে ২৩ আগস্ট, ২০২৩। অভিযান এর ধরন ছিলো ল্যন্ডার ও রোবার। উৎক্ষেপন এর রকেট ছিলো উৎক্ষেপক যান মার্ক।
ল্যান্ডার ও রোবার :
ল্যান্ডার : একটি মহাকাশযান যা নরমভাবে অবতরণ করে এবং তারপর সেখানে বিশ্রামে থাকে এবং অন্যান্য সমস্ত কাজ করে যা ল্যান্ডার কে করতে হয়।
রোবার : এমন একটি যান যা গ্রহ বা জ্যোতির্বিদ্যা গত বস্তুর মধ্যে ঘুরে বেড়ায়।
চন্দ্রযান -৩ এর ল্যান্ডার হচ্ছে বিক্রম এবং রোবার হচ্ছে প্রজ্ঞান। ল্যন্ডার বিক্রম এর অবতারণের স্থান ছিলো ৬৯.৩৬৭৬২১° দক্ষিন ৩২.৩৪৮১২৬° পূর্ব ( মানজিনাস সি ও সিম্পেলিয়াস এন) গহ্বরের মধ্যবর্তী স্থান।
চন্দ্রযান -১ ও চন্দ্রযান -২
চন্দ্রাযান -৩ এর পূর্বে ভারত দু’বার চন্দ্র অভিযান এর চেষ্টা করেছিল। এই ২ বার এই কোনো না কোনো কারণে চন্দ্রাযান চন্দ্রপৃষ্ঠে সফল অবতরণ করতে পারেনি। প্রথম চেষ্টা চালানো হয়েছিলো ২০০৮ সালে ২২ অক্টোবর। প্রথম চন্দ্রাযান -১ মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ করে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। চাঁদকে প্রদক্ষিন করা প্রথম ভারতীয় মহাকাশযান চন্দ্রাযান -১। তবে ২০০৯ সালের ২৯ অগাস্ট চন্দ্রযান-১ এর অরবিটার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় ইসরোর। তবে মিশনের প্রাথমিক শর্ত পূর্ণ করেছিল চন্দ্রযান-১। এই মিশনের মাধ্যমেই প্রথম চন্দ্রজলের উপস্থিতির টের পাওয়া গিয়েছিল। চাঁদের জলের উপস্থিতির প্রমাণ দিয়েছিল চন্দ্রযান-১।
তারপর আবার ২০১৯ সালে চন্দ্রাযান – ২ কে যখন চন্দ্র অভিযানে পাঠানো হয় তখন এটি একটি অরবিটারকে সফল ভাবে চাঁদের কক্ষপথে স্থাপন করেছিল, কিন্তু ল্যান্ডারের সফট ল্যান্ডিংয়ের প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছিল। এই ঘটনার পরে, সফট ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে চাঁদে অবতরণের জন্য ইসরো “চন্দ্রযান-৩” আবারো একটি চন্দ্র অভিযানের কর্মসূচি শুরু করে। অভিযানে প্রোপালশন মডিউল, ল্যান্ডার (বিক্রম) ও রোভার (প্রজ্ঞান) ব্যবহৃত হয়েছে, তবে কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরিত হয়নি।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কেন চন্দ্রযান -৩ কে পাঠানো হলো ?
চন্দ্রযান-৩ যেখানে নেমেছে, চাঁদের ওই দক্ষিন মেরু অঞ্চলটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য বিশেষ আগ্রহ রাখে, কারণ সেখানে চন্দ্রযান-১-এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে বরফের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। তাই হতে পারে এই স্থানটি পানির পাশাপাশি অক্সিজেন ও জ্বালানির উৎস। যা ভবিষ্যতে আরও চন্দ্রাভিযান অথবা স্থায়ীভাবে চাঁদে বসতি গড়তে সহায়ক হতে পারে। চন্দ্রযান -৩ ইতোমধ্যে কিছু উল্ল্যেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। দক্ষিণ মেরুর কাছে চন্দ্র পৃষ্ঠে সালফার, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্রোমিয়াম, টাইটানিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, অক্সিজেন এবং সিলিকনের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। তবে হাইড্রোজেন এর অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে ইসরো।
চন্দ্রাযান -৩ এর জন্য অর্থায়ন :
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, ইসরো প্রকল্পটির প্রাথমিক অর্থায়নের জন্য অনুরোধ করে, যার পরিমাণ ₹৭৫ কোটি। এর মধ্যে মধ্যে ₹৬০ কোটি যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য এবং বাকি ₹১৫ কোটি রাজস্ব ব্যয়ের জন্য চাওয়া হয়। প্রকল্পের অস্তিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরো সভাপতি কে.সিভান। তিনি জানান যে অভিযানে প্রায় ₹৬১৫ কোটির কাছাকাছি ব্যয় হবে।
ভারতের এই চন্দ্র অভিযানের ফলে চন্দ্র নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক রহস্য উন্মোচন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এরকম আরও ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন।
লেখক
তাবাসসুম আক্তার তাবা
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE