ঈদ হলো বাঙালির কাছে একটি আবেগঘন উৎসব। প্রতিবছর নানান বাহারী চমক নিয়ে উৎযাপন হয় এই ঈদ। আজকাল ঈদ মানে নতুন পোশাক, গয়না, জুতা ইত্যাদি। ঈদের দিনকে কেন্দ্র করে থাকে নানান নাটক ও সিনেমা। ঈদ উপলক্ষে বেশ কিছু যুগ ধরে চলে আসা সংস্কৃতি এখন পর্যন্ত চলমান থাকলেও, ঈদ কার্ড দেয়া-নেয়ার চলন আজ প্রায় বিলুপ্ত।
ঈদ কার্ড ছিল এক সময় বন্ধুদের মধ্যে ঈদের খুশি বিলিয়ে নেয়ার মাধ্যম।
প্রায় সব বয়সের শিশু, কিশোর-কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয় ছিল এই ঈদ কার্ড আদান প্রদান। বাহারী ঘরণার ঈদ কার্ড ছিল ঈদ বাজারের বিশেষ চমক। প্রতি অলিতে গলিতে বসত ঈদ কার্ডের দোকান। নানান বয়সের শিশু, কিশোর কিশোরীরা মিলে যেতো ঈদ কার্ড কিনতে এবং তাদের প্রিয় বন্ধুটিকে উপহার দিতে।
যে ঈদ কার্ড দিত, সে হয়ে যেত একে অপরের প্রিয় বন্ধু। আর যে দিত না, তার সাথে অনায়াসে তৈরি হয়ে যেত দ্বন্দ্ব। ঈদের খুশি যেন ঈদ কার্ড দিয়েই ভাগাভাগি হয়ে যেতো সবার মধ্যে।
যদিও শিশু ও কিশোর কিশোরীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল এই প্রথা, তবে সব বয়সের জনগোষ্ঠীই এই প্রথায় অংশ নিত। সব বয়সের জনকুলের মাঝে এটি ছিল এক বহুসমাদৃত চর্চা।
ঈদ কার্ডের উৎপত্তি ও বিকাশ
ধারণা করা হয় ইউরোপে কার্ডের প্রচলন শুরু। পরবর্তী কালে উপমহাদেশে দাওয়াতের ক্ষেত্রে কার্ড দেয়া হয়। সে সময় হাতে লেখা কাগজে বা কাপড়ে লেখা শুভেচ্ছা পত্র দেয়া হত। প্রয়োজনীয় তথ্য পত্র, দাওয়াতি পত্র, শুভেচ্ছা পত্রই ঈদ কার্ড হিসাবে প্রকাশ পায়।
দাওয়াত কার্ড পরবর্তীতে শুভেচ্ছা কার্ড হিসেবে আসে।
ঈদ কার্ডের প্রচলন শুরু হয় ১৯ শতকে।
১৯৮০/৯০ দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ভালোবাসা, ভালো লাগা, শুভেচ্ছা প্রকাশে বাহারী ঈদ কার্ডের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। ঈদ পালনের অংশ হয়ে যায় ঈদ কার্ড।
ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে কার্ডের ব্যবসা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। প্রকাশনী গুলো নানা রকম কার্ড ছাপায়। কার্ডের দোকান গুলোতে সাজ সাজ রব উঠে। বই, কসমেটিকস এর দোকানেও ঈদ কার্ড স্থান পায়।
ঐ প্রজন্মের শিশু-কিশোররা অলিগলিতে ছোট ছোট দোকান দেয়। তাদের মাঝেও বেচাকেনাতে আনন্দময় উত্তেজনা প্রকাশ পায়।
ঈদ কার্ডের উপকরণ কী?
ঈদ কার্ডে সাধারণত সুদৃশ্য ছবি ব্যবহার করা হয়। নানা রকম প্রাকৃতিক পরিবেশ, নদী-পাহাড়, গ্রাম, শস্যক্ষেত, পাখপাখালি, নানা রঙের পাখির ছবি ঈদ কার্ডে স্থান পায়।
চাঁদ-তারা, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, মসজিদ, কাবা শরিফ, মদিনা — থাকে এসবের চিত্র।
থাকে হ্যান্ডমেইড আঁকা ছবি। সব কিছুর সাথে স্থান পায় সুদৃশ্য অক্ষরে, বিন্যাসে লেখা শুভেচ্ছা বাণী। কখনো কার্ড সমসদৃশ্য খামের ভিতর স্থান পায়। ভিউ কার্ড ও ঈদ কার্ড হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
২০০০ সালের শুরু থেকে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়। দিন দিন ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে যায় ইন্টারনেট।
ভাটা পড়তে থাকে ঈদ কার্ডের প্রচলন। বস্তুগত ঈদ কার্ড ডিজিটাল রূপ নেয়।
কাগজে ঈদ কার্ডের পরিবর্তে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আদান-প্রদান শুরু হয়। ডিজিটাল ঈদ কার্ডও সমসদৃশ্য আঙ্গিকে পাওয়া যায়। বাছাই করে পাঠানো যায়। বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিজেরাও মনের মাধুরী মিশিয়ে ঈদ কার্ড বানিয়ে প্রিয়জনকে পাঠাতে পারে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ঈদ কার্ড বানানোর নানা কোর্স পাওয়া যায়। সার্চ দিলেই পাওয়া যায় অজস্র শুভেচ্ছা বাণী। ডিজিটাল ডিভাইসে সুসজ্জিত ঈদ কার্ড বানিয়ে ইন্টারনেটে পাঠানো হয় প্রিয়জনকে।
বর্তমানে ক্ষীণ হয়ে আসছে ভালোবাসার প্রকাশ। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে আগের ঈদ কার্ড।
হারিয়ে যায় ঈদের দুই-তিন সপ্তাহ আগের সেই সাজ সাজ রব, জৌলুস ভাব।
আগে যে ঈদ কার্ডের পরশে হৃদয়মন আন্দোলিত হত, সংগ্রহিত কার্ড ছুঁয়ে অনুভূতিগুলো জাগ্রত হত, সেই অনুভূতিগুলো ডিজিটাল অঙ্গনে পাওয়া যায় না।
To read these types of blogs, click here
Writer
Mahi Noor
Intern, Content Writing Department
YSSE