চীনের শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানে সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। এ দেশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র বৃত্তির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার জন্য চমৎকার সুযোগ দিচ্ছে। প্রতিবছর, চীন বাইরের বিশ্বের সাথে পারস্পরিক বোঝাপড়ার সম্পর্ক গড়তে এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ের জন্য বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে।
চীন বর্তমানে একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশ, তবে ভবিষ্যতের বিশ্ব চীনাদের আধিপত্যে থাকবে। আজকাল, চীন এশিয়ান শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইউরোপীয় দেশগুলি তে ভিসা পাওয়া যতটা কঠিন, ততটাই সহজ চীনের ভিসা পাওয়া। ভিসার জন্য এক্স-১ ভিসা করতে হয়। এক্স-১ ভিসা দীর্ঘমেয়াদী অধ্যয়নের জন্য করা হয়েছে।
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমানে চীনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় চীন সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করে। শিক্ষার মান এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচের কারণে অনেক শিক্ষার্থী চীনে উচ্চশিক্ষার দিকে ঝুকছে। আপনি যদি চীনা ভাষায় পারদর্শী হন, তবে স্নাতক শেষ করার পর আপনার পছন্দের চাকরি পাবার সুযোগ থাকবে।
চীনে যেসব বৃত্তি প্রদান করা হয়:
উচ্চশিক্ষায় চীনে প্রদানকৃত বৃত্তি গুলো হলো :
- চীনা সরকারি বৃত্তি।
- স্থানীয় সরকার বৃত্তি।
- কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বৃত্তি।
- বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি বৃত্তি।
- এন্টারপ্রাইজ বৃত্তিসহ আরও অনেক বৃত্তি।
যেসব বিষয়ে পড়াশোনা করা যাবে:
বিবিএ, এমবিবিএস, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের সেরা পছন্দ চীন। এছাড়াও আপনি বিজ্ঞান, কৃষি, ইতিহাস, আইন, অর্থনীতি, সাহিত্যসহ আপনার পছন্দের যেকোনো বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়ন করতে পারবেন।
আপনার পছন্দের ডিগ্রির জন্য যেসব যোগ্যতা থাকা লাগবে :
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বয়সের উপর নির্ভর করে আপনাকে ডিগ্রি নিতে হবে। উচ্চমাধ্যমিকে পাশকৃত শিক্ষার্থীরা স্নাতক প্রোগ্রামে নথিভুক্ত করার সুযোগ পাবে। এই ক্ষেত্রে বয়স অবশ্যই ২৫ বছরের নিচে হতে হবে। ইতিমধ্যে যারা স্নাতক প্রোগ্রাম শেষ করেছে তারা চাইলে চীন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণ করতে পারবে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে আবেদনের জন্য বয়স হতে হবে ৩৫ বছর।
পিএইচডি ডিগ্রি প্রার্থীদের অবশ্যই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে এবং বয়স ৪০ এর নিচে হতে হবে। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য অন্য স্কলারশিপে আবেদনের সুযোগ আছে—জেনারেল স্কলার প্রোগ্রাম। এইক্ষেত্রে যারা ৩বছর অধ্যয়ন সম্পন্ন করেছে এবং বয়স ৪৫ এর কম তারা আবেদন করতে পারবে।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা পিএইচডি এবং সিনিয়র স্কলার উভয় প্রোগ্রামে আবেদনের সুযোগ আছে। সর্বোচ্চ ৫০ বছর বয়সের শিক্ষার্থী এই প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
স্কলারশিপ প্রত্যাশীদের আবেদনের সময় বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। তা হলো
- আবেদন ফরম।
- সর্বাধিক ডিগ্রির নোটারীযুক্ত সনদপত্র।
- ট্রান্সক্রিপ্ট।
- অধ্যয়নের পরিকল্পনা বা গবেষণার প্রস্তাব।
- সুপারিশ পত্র।
- IELTS স্কোর যদি থাকে
যদি আবেদনকারী ইতিমধ্যেই মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার পেয়ে থাকে, তাহলে তাকে অফার লেটারের একটি অনুলিপি আবেদন ফরমের সাথে সংযুক্ত করে দিবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো অবশ্যই ইংরেজি বা চীনা ভাষায় লিখে দিতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া :
স্কলারশিপের জন্য আবেদনের দু’টি প্রক্রিয়া আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করারও সুযোগ রয়েছে, এই ক্ষেত্রে আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশী। দূতাবাসের বৃত্তি থাকে নির্দিষ্ট এবং প্রতিযোগিতামূলক।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্কলারশিপ রয়েছে, যেমন: কাস টাওয়াস স্কলারশিপ, চাইনিস স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিএসসি), রোড এন্ড বেল্ট স্কলারশিপ, কনফুসিয়াস স্কলারশিপ, ইয়েস চায়না স্কলারশিপ, বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ সহ আরও অনেক স্কলারশিপ। তবে সিএসসি সর্বাধিক বৃত্তি প্রদান করে।
চীনে কোন ভাষায় পড়াশোনা করবেন:
চাইনিজ বা ইংরেজি উভয় ভাষায়ই পড়াশোনা করতে পারবেন। ডিপ্লোমা সাধারণত চীনা ভাষায় করানো হয়। অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি উভয় ভাষায়ই সম্পন্ন করতে পারবেন।
সিএসসি স্কলারশিপে আবেদন করতে অবশ্যই IELTS থাকতে হবে। যদি আপনার প্রোফাইল আউটস্ট্যান্ডিং হয় তবে সেক্ষেত্রে কিছুটা কনসিডার করে। কখনো কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফিয়েন্সি টেস্টের জন্য ছোট্ট একটা পরীক্ষা নেয়া হয়।
কেনো উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের সেরা পছন্দ চীন:
এমবিবিএস/ ইঞ্জিনিয়ারিং/ বিবিএ/হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার জন্য চীন সেরা। যে কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশের কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়তে চান, তবে চীন হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায়গুলিই চীনে অবস্থিত। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে –
- চিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়
- চায়না রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়
- বেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়
- পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়
- বেইজিং নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এবং বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে ভর্তি হয়ে নিজের জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরনে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারেন। জেনে নেয়া যাক কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য:-
- কম খরচে একটি প্রগতিশীল পরিবেশে আন্তর্জাতিক মানের ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ।
- চীনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত বিধায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ শীর্ষভাগে রয়েছে।
- আপনি কোনো ভর্তি পরীক্ষা বা IELTS ছাড়াই ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি ফান্ড স্কলারশিপের অধীনে আপনি ১০০% টিউশন ফি অব্ধি বৃত্তির সুযোগ রয়েছে।
- বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আবাসন ব্যবস্থার সুযোগ।
- মাসিক স্টাইপেন্ড এর ব্যবস্থা।
- যেহেতু অনেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী চীনে এসে পড়াশোনা করে বিধায় আপন বাঙালীয়ানার একটি গন্ডি তৈরি হয়।
আরও ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন।
Writer,
Anamika Ghosh Shreya
Intern,Content Writing Department
YSSE