আমরা আমাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেক পূর্ব পরিকল্পনা করে থাকি। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি,  অস্ট্রেলিয়া, জাপান সহ অনেক দেশই শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে। আজ আমরা জাপানে উচ্চ শিক্ষার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে কি না এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। জাপান সূর্যদোয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত। তার সাথে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার জন্য পছন্দের গন্তব্যস্থল।

জাপানে শিক্ষাব্যবস্থা :

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) র‌্যাঙ্কিংয়ের ২০২৩ সংস্করণে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করে। তার মধ্যে জাপানের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সেই তালিকায় স্থান পেয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব টোকিও, কিয়োটো ইউনিভার্সিটি, ওসাকা ইউনিভার্সিটি, কিয়ুশু ইউনিভার্সিটি, নাগোয়া ইউনিভার্সিটির মতো আরও অনেক বিশ্ব সেরা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে জার্মানিতে। 

বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং এ স্থান প্রাপ্ত জাপানের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়: 

জাপানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে (২০২৩ কিউএস বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী স্থান পেয়েছে) : 

  1. প্রতিষ্ঠানের নাম QS বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং (২০২৩)
  2. টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় ২৩
  3. কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় ৩৬
  4. টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ৫৫
  5. ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৬৮
  6. তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয় ৭৯
  7. নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১১২
  8. কিউশু বিশ্ববিদ্যালয় ১৩৫
  9. হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয় ১৪১
  10. কেইও বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭
  11. ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় ২০৫

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনের পরেই জাপানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। জাপান বর্তমানে পৃথিবীর  অর্থনৈতিক ভাবে সবচেয়েই বেশি  শক্তিশালী দেশ। তাই তারা বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি করছে।

বৃত্তির সুবিধা : 

জাপানে অনার্স ও  মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃত্তির ও টিউশন ফি ছাড়া পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার সুবিধা। কোনো শিক্ষার্থী যখন এই বৃত্তির জন্য নির্বাতি হবে তখন সম্পূর্ণ বিনা খরচে জাপানে লেখা পড়ার সুবিধা পাবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তির সুবিধা রয়েছে। সরকারি বৃত্তির সাথে অনেক বেসরকারি বৃত্তির সুযোগও রয়েছে।

কিছু শীর্ষ বৃত্তি বিকল্প নিম্নলিখিত অন্তর্ভুক্ত : 

মেক্সট স্কলারশিপ।

জাপান এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড সার্ভিসেস (জেইইএস) স্কলারশিপ।

ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি জাপানিজ সরকারী বৃত্তি।

ইউএনইউ এর জাপান ফাউন্ডেশন।

KUAS আন্ডারগ্রাড স্কলারশিপ।

ইয়োকোহামা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ।

এডিবি জাপান সরকারী বৃত্তি, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়‌।

হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তি।

রিটসুমেইকান ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ।

এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ ।

স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমের সাথে নিযুক্ততা একজন আবেদনকারীকে আরও কয়েকশ আবেদনকারী থেকে আলাদা করে তোলে। এজন্য আগ্রহের যেকোনো ছোট-বড় কাজই একটি পটেনশিয়াল ইসিএ হতে পারে। অনলাইনে স্টাডি ইন জাপান নিয়ে প্রচুর রিসোর্স রয়েছে, যেগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব। 

কাজের সুযোগ:

পড়ালেখা চলাকালীন সপ্তাহে ২৮ ঘণ্টা খণ্ডকালীন কাজ করার সুযোগ রয়েছে জাপানে। ছুটির সময় বেশি কাজ করতেও কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কাজের সুযোগ যেমন, তেমনি আয়ের পরিমাণও বেশি। জাপানে প্রতি ঘণ্টায় পার্টটাইম কাজের বেতন সর্বনিম্ন ১০০০ থেকে ১২০০ জাপানি ইয়েন।  কাজে দক্ষ হলে, বেতনও বৃদ্ধি পায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন: 

“এডিবি-জাপান স্কলারশিপ প্রোগ্রাম” জাপান ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের দ্বারা প্রদান করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৃত্তি, যা এশিয়া মহাদেশ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। জাপানের শিক্ষা প্রণালী অন্য দেশের তুলনায় আলাদা, এখানে মেধার সঙ্গে পরিশ্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

শিক্ষার্থীরা পরিশ্রমের সাথে দিনরাত গবেষণা ও পড়াশোনা করে তাদের গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য পূর্ণ করে। এখানে বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে, ভবিষ্যতের উন্নত পৃথিবী গড়তে গবেষণার ভিন্ন ধরণের অবদান প্রয়োজন, এবং জাপান শিক্ষা প্রণালী এই প্রযুক্তিকে সমর্থন করে। 

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মেরু হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক, যা জাপানে পড়াশোনার একটি অনন্য দিক। জাপান থেকে প্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা স্তর বৃদ্ধিতে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও গভীর পড়াশোনা ও গবেষণা সুযোগ প্রদান করে, এবং এই প্রণালী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে দেশগুলির উন্নত প্রকৌশল এবং গবেষণা ক্ষেত্রে আগ্রহ ও স্কিল বাড়াতে সাহায্য করে।

নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা : –

জাপান একটি শান্তিপূর্ণ দেশ, যেখানে অপরাধের হার অত্যন্ত কম, এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা সংরক্ষণে উচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়। জাপানের প্রধান শহরগুলি, যেমন টোকিও এবং ওসাকা, বিশ্বব্যাপী নিরাপদ শহর গুলোর মধ্যে কয়েকটি শহর। এছাড়া, জাপান ভূমিকম্প-প্রতিরোধী প্রযুক্তিতে নতুনত্ব নিয়ে এসেছে, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে সাহায্য করে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং দীর্ঘতম আয়ুর হারে বাড়াতে উপযুক্ত নিয়ম রয়েছে। চিকিৎসা সেবা জাপানের শীর্ষস্থানীয় এবং শিক্ষার্থীদের ন্যাশনাল স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা সুস্থতার জন্য বিশেষ সুযোগও পাবে। 

পড়াশোনার খরচ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সাধারণত প্রথম বছরের জন্য ৫৩৭,৮০০ ইয়েন চার্জ করে, যখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও এটি একই। প্রাইভেট লিবারেল আর্টস এবং সায়েন্স ইউনিভার্সিটিগুলি যথাক্রমে প্রায়  ৭,৪৬,২০০ইয়েন এবং ১০,৪৯,০০০ ইয়েন চার্জ করে। UG প্রোগ্রামগুলির জন্য গড় টিউশন খরচ প্রায়  ১২, ৪০,০০০-২৮,৩০,০০০ইয়েন, যেখানে মাস্টার্স প্রোগ্রামগুলির জন্য এটি প্রায় ১২,৫০,০০০-৪৪,০০,০০০ ইয়েন। প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করে ডক্টরাল ডিগ্রির জন্য সাধারণত প্রায়  ১৯,০০০-১,২০,০০০ ইয়েন খরচ হয়। 

শীর্ষস্থানীয় কিছু ছাত্র-বান্ধব শহরগুলির মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : 

সাপ্পোরো, হিরোশিমা, ইয়োকোহামা, কোবে, কিয়োটো, নাগোয়া, ওসাকা, টোকিও। এই শহর গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে।

অধ্যয়নের জন্য প্রয়োজনীয়তা 

অধ্যয়নের জন্য কিছু অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ; বিজ্ঞানে মূল্যায়ন, বিদেশী ভাষা হিসেবে জাপানি, জাপান ও বিশ্ব এবং গণিতের মূল্যায়ন সহ আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য জাপানিজ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। জাপানি (JLPT) এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জনে উক্ত (IELTS/TOEFL/PTE) পরীক্ষাগুলির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু নথি নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : 

  • হাই স্কুল ডিপ্লোমা/ব্যাচেলর ডিপ্লোমা।
  • আবেদন ফি প্রদানের প্রমাণ।
  • একাডেমিক রেকর্ডের প্রতিলিপি।
  • প্রেরণা চিঠি।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • ব্যক্তিগত অভিমত।
  • সুপারিশ করার চিঠি‌।
  • ব্যক্তিগত আইডি/বৈধ পাসপোর্টের কপি।

স্পষ্টত, বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নজর বেশি যাচ্ছে, জাপানের দিকে। তারা বেশি করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জাপানের অর্থনৈতিক অবস্থা, তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যাবস্থা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যাবস্থা অবশ্যই যেকোনো শিক্ষার্থীদের জন্য পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।

এরকম আরও ব্লগ পড়তে, ক্লিক করুন। 

 

লেখিকা, 

তাবাসসুম আক্তার তাবা 

ইন্টার্ন,‌ কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট

YSSE