উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ হলো আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে একটি দ্বীপ, এটি বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জ। যেখানে দক্ষিণ সেন্টিনেল দ্বীপও আছে।
সেন্টিনেল দ্বীপটির অবস্থান হল বঙ্গোপসাগরের শেষপ্রান্তে। উত্তর সেন্টিনেলরা এমন একটি উপজাতি যারা বাহিরের বিশ্বের সাথে কোন যোগাযোগ মেনে নেয় না। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তাদের হিংস্রতা প্রকাশ পায়। তারা আধুনিক সভ্যতার এমন এক উপজাতি, যাদের বর্তমান বর্হিবিশ্বের সাথে যোগাযোগ নেই । আধুনিক সভ্যতার আচার আচরণ যারা এখনো গ্রহণ করতে পারে নি। সেন্টিনেল দ্বীপে বসবাস করে বলে এখানকার অধিবাসীদের সেন্টিনেল বলা হয়।
উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের মালিকানা ভারতের। এই দ্বীপে ভ্রমণ এবং পাঁচ নটিক্যাল মাইলের (৯.২৬কিমি) এর কাছাকাছি যে কোন যোগসূত্র নিষিদ্ধ। কারণ এই দ্বীপের মানুষ যেহেতু আধুনিক সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন তাই তাদের সেরকম কোন রোগ না হয় যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মধ্যে নেই। তারা পোশাক হিসেবে এখনো গাছের ছাল-বাকল ও পশুর চামড়া ব্যবহার করে। খাদ্যের মধ্যে তারা বন হতে সংগৃহীত ফলমূল ও শিকারকৃত মাংস গ্রহণ করে। শত্রুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে তারা অস্ত্র হিসেবে তীর ধনুক ব্যবহার করে।
সেন্টিনেল দ্বীপটি প্রবাল প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। এই দ্বীপটির কোন প্রাকৃতিক বন্দর নেই। উপকূল ছাড়া পুরো দ্বীপটি বনভূমি। তারা যোগাযোগ এর মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে। সেন্টিনেল দ্বীপের উপজাতিদের নিজস্ব কোন ভাষা নেই। যার ফলে তাদের ভাষা অন্য কারো বোধগম্য হয় না। ধারণা করা হয়, এদের জনসংখ্যা ৩৯ থেকে ২৫০ এর মধ্যে বা সর্বোচ্চ ৫০০ জন।
নৃতাত্ত্বিকদের মতে,দ্বীপটির বয়স প্রায় ৬০ হাজার বছর। আয়তন ৭২ বর্গকিলোমিটার। সর্বপ্রথম তাদের সম্পর্কে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি সন্ধান পায় ১৮৮০ সালে। সেন্টিনেলরা সভ্য সমাজে আসতে আগ্রহী না, কারণ তারা মনে করে বাহিরের দুনিয়ায় মানুষ তাদের শত্রু। এরপর ভারতীয়রাও কয়েকবার তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছে, কিন্তু পারে নি। সেন্টিনেল দ্বীপে আসা জাহাজ গুলোকে বারবার আক্রমণ করেছে সেন্টিনেলরা। এছাড়াও ২০০৬ সালে ২জন ভারতীয় জেলে এবং একজন আমেরিকার ধর্মপ্রচারক ২০১৮ সালে মারা যান। এই উপজাতিদের বিরুদ্ধে মামলা করার ও অধিকার রাখে না ভারত সরকার। কারণ এই উপজাতিরা কাউকে পরোয়া করে না। পরবর্তীতে ভারত সরকার সেন্টিনেল দ্বীপের বাহিরে ৩কিলোমিটারে প্রবেশকে নিষিদ্ধ করে দেয়। এই দ্বীপের উপজাতিদের ভারত সরকার একান্তে থাকার ইচ্ছাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারত সরকার তাদের দেশের কিছু দ্বীপকে পর্যটন কেন্দ্র করতে চেয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে ঐ দ্বীপের অধীবাসীদের জন্য সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, যার ফলে ভারত সরকার ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবধি, সীমাবদ্ধ অঞ্চল হুকুমনামা (আরএপি) শাসন থেকে ২৯ টি দ্বীপকে বাদ দিয়ছে। যার মধ্যে উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ আছে।
২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের যেই ভূমিকম্প এবং সংশ্লিষ্ট সুনামি হয় তার ফলে দ্বীপটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুনামির পরে ভারত সরকার হেলিকপ্টার দিয়ে ত্রাণ দিতে গিয়েছিল, কিন্তু তারা ত্রাণ গ্রহণ করার বদলে উল্টো পাল্টা আক্রমণ চালায়। কিন্তু অনুমান করা যায় যে তার কিছু দিন পরই তারা সেই সুনামির ধাক্কাটি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল। কারণ সুনামির পরপরই হেলিকপ্টার দিয়ে দ্বীপের বাসিন্দাদের তাদের স্বাভাবিক কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
বছরের পর বছর নৌকা বা হেলিকপ্টার থেকে নজর রেখে তাদের সম্পর্কে অল্প ধারণা পেয়েছে নৃতত্ত্ববিদেরা। বিশ্বের অন্য যতরকম উপজাতি আছে, তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই উপজাতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিই মনে হয় শেষ উপজাতির আবাসস্থল যাদের কাছে আধুনিক সভ্যতা এখানো পৌঁছাতে পারে নি।
এখনো এই উপজাতিদের কৃষি কাজ করার কোনো প্রমাণ দেখা যায় নি। তারা এখনো তেমন কিছু বানাতে শেখে নি। সাধারণ কিছু ধাতব বস্তু দিয়ে কিছু অল্প সামগ্রিক জিনিস বানাতে শেখলেও ধাতু দিয়ে কিছু বানাতে পারে না বলে মনে করা হয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো তারা আজও হয়তো আগুন জ্বালাতে শেখে নি।
সেন্টিনেল উপজাতিদের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, আদিবাসী কেউ মারা যাবার পর তাদের মৃত দেহ মাটিতে পুঁতে দেওয়ার কিছু দিন পর তারা আবার সেই জায়গায় ফিরে এসে করব খুঁড়ে সেই দেহ বের করে। তারপর মৃত দেহকে বাঁশের সাথে বেঁধে সমুদ্রের ধারে দ্বার করিয়ে রাখে। এইরকম ভাবে তারা বহিরাগতদের ইঙ্গিত দেয়, অনুপ্রবেশকারীরা সাবধান!
আমাদের নির্জনতার প্রতি সম্মান না দেখিয়ে এখানে এলে তোমারদেরও এই হাল হবে।
এরকম আরও ব্লগ পরতে ক্লিক করুন।
লেখক,
তিথি রাণী সরকার
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE